ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতিতে বেহাল দশা, দপ্তরীর কাছে জিম্মি শিক্ষকরা : থানায় জিডি

oniyom durnitiমমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::

আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা দপ্তরীর নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দপ্তরীর অপকর্মের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের হাত-পা কেটের ফেলার হুমকি দিয়েছেন চতুর এই দপ্তরী। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ইউএনও’র পরামর্শে শিক্ষকরা থানায় সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ‘গুণধর’ এই দপ্তরীর অপকর্মের অন্যতম সহযোগি। এ অবস্থায় নিরূপায় হয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারিরা সুনির্দ্ধিষ্ট ১২টি বিষয়ে তদন্ত দাবী করে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগে বিদ্যালয়ের বৃক্ষনিধন, কোচিং বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাত ও পুকুরের লীজ জালিয়তিসহ নানান আর্থিক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজশে ‘বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন’ নামে চলতি শিক্ষাবর্ষে একটি খাত সৃষ্টি করেন। এ খাতের আওতায় বিদ্যালয়ের ৩৬০ জন শিক্ষার্থী থেকে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা হারে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থ আদায় করে আত্মসাত করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা হারে ছাড়পত্র ফি আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা করা হচ্ছেনা। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৪ সালের ৬ জুলাই জারী করা পরিপত্রবিরোধী। অভিযোগ প্রকাশ, বিদ্যালয়ে বিভিন্নখাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ ব্যয়ে শিক্ষকদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি থাকার কথা। কিন্তু কমিটি ছাড়াই বিদ্যালয়ের আয়ের টাকা হরিলুট করছেন প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃদুল কান্তি তালুকদার বলেন, শিক্ষকরা আমাকে তোয়াক্কা করছেন না। আমার বিরুদ্ধে তারা অহেতুক মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।

সহকারি শিক্ষক ছৈয়দ মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলমের হুমকীতে আমরা তটস্থ। দুই দশকের বেশি সময় তিনি একই কর্মস্থলে থাকায় সে কাউকে পরোয়া করছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে স্বপরিবারে থাকতে দিয়েছেন। তার (জাহাঙ্গীরের) পালিত গরু, ছাগল, হাস, মুরগী বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে। ক্লাস চলাকালীন জাহাঙ্গীরের পালিত ছাগল ক্লাসে ঢুকে পড়ে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীকে বলায় উল্টো হুমকি পেতে হয়েছে শিক্ষকদের। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে দপ্তরী জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময় গালিগালাজ করে ‘চাকুরী কেমনে কর’ বলে হুমকী দিয়ে থাকেন। ফলে একজন শিক্ষক থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন।

শিক্ষকরা লিখিত অভিযোগে বলেন, বিদ্যালয়ের গেইটের কাছে অন্বেষা নামে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন দপ্তরী জাহাঙ্গীর। তাকে দিয়েই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনয়ন ও সটিং এর কাজ করান। প্রশ্নপত্রও গচ্ছিত রাখা হয় দপ্তরীর কাছেই। পরীক্ষা চলার সময় দপ্তরীর নিকট হতেই প্রশ্ন নিয়ে শিক্ষকদের পরীক্ষার হলে যেতে হয়। বিদ্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে এ ধরণের ‘ক্ষমতা’ প্রদানকে নৈতিকতা বিবর্জিত, বেআইনী ও শিক্ষক সমাজকে হেয় ও অপমান করার শামিল দাবী করেছেন।

শিক্ষকরা বলেন, বিদ্যালয়ে নামে থাকা বিশাল একটি পুকুর বছরের পর বছর ধরে দপ্তরী জাহাঙ্গীর ভোগ করছেন। মাছ চাষ করে অর্থগৃধু হচ্ছেন। শিক্ষক ও কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়া এবং প্রকাশ্য নিলাম না দিয়ে দপ্তরীকে মাছ চাষের অনুমতি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, পুকুরটিতে আতাউল নামে এক ব্যক্তির সাথে যৌথাভাবে মাছ চাষ করেন জাহাঙ্গীর। বৈধ উপায়ে পুকুর নিলাম না দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। স্থানীয় বাজারের কাপড়ের দোকানদার আতাউল বলেন, ‘আমি পুকুরটিতে কিছু মাছ ফেলেছি, তবে এখনো পর্যন্ত কাগজেপত্রে নিলাম নেইনি’।

সহকারি শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম মনছুরী বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী মিলে বিদ্যালয়ের বড় ও মাঝারী সাইজের ৮টি বৃক্ষ নিধন করেছেন। যার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবে। এ বৃক্ষ নিধণের ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সরকারি অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় দপ্তরী আমাকে ও অন্য শিক্ষকদের মৃত্যুর হুমকী দিয়েছেন। আমি বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করেছি।

শিক্ষকরা বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের মর্জিমাফিক বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। নিয়মের ধার ধারেন না। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংস্কারের নামে বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করছেন। শিক্ষক কিংবা কমিটির সাথে আলোচনা না করেই বিদ্যালয়ের বেসরকারি তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন করে কথিত ‘কেন্টিন’ নির্মাণ করেছেন।

অভিযুক্ত দপ্তরী বক্তব্য জানতে কয়েকবার তার মুঠোফোনে কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র পেয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: