ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী নদী ভাঙ্গনের কবলে দেড়শত বছরের পুরনো মসজিদ

মিজবাউল হক, চকরিয়া :manikpurkim
কয়েক দফা ভয়াবহ বন্যায় মাতামুহুরী নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে প্রায় দেড়শত বছরের পুরনো ফজলুর রহমান সিকদার কিউকের ঐতিহাসিক জামে মসজিদটি।  রবিবার অতি ভারিভর্ষণ ও উজান থেকে নেমে পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মসজিদটি। দ্রুত সময়ে উদ্যোগ না নিলে যে কোন মূহুর্তে মসজিদটি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক কিউকের মসজিদটি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তি মানিকপুর এলাকায় অবস্থিত। মানিকপুর এলাকার জমিদার ফজলুল রহমান সিকদার কিউক ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে কালের আবর্তে কিউকের মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। মুঘল স্থাপত্য ধারার চুন চুরকি ও ইট তৈরি এ মসজিদে রয়েছে অত্যন্ত চমৎকার স্থাপত্য শৈলীর ছাপ। নানা কারণে ঐতিহাসিক ও বাঙালি মুসলমান সমাজের পুরাকীর্তি সংযুক্ত সৃষ্টিকর্মের ধারক-বাহক এই মসজিদটি যত না বিখ্যাত, বর্তমানে এর অবস্থা ঠিক ততটাই জরাজীর্ণ। মসজিদটি আজো অক্ষত অবস্থায় থাকলেও সঠিক পরিচর্যা ও সম্প্রতি একেরপর এক বন্যার কারণে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চোখে পড়ার মতো কোন ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড বা মেরামত করা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে মসজিদের রংয়ের কাজ বা সংস্কার করলেও স্থায়ীভাবে কোন কিছু করেনি। সম্প্রতি নদী ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে কিউকের মসজিদটি। দু’কুল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মসজিদের পাশে চলে এসেছে। তাছাড়া মসজিদের সামনের রাস্তায় দিয়ে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল করার কারণে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চরম ঝুকির মধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসী মসজিদে নামাজ আদায় করছেন।
এব্যাপারে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, কিউকের মসজিদটি অনেকটা নিরাপদে আছে। নদীর ভাঙ্গনরোধে নদীর পারে ব্লক দেয়া হয়েছে। বন্যার পানির তোড়ে মসজিদের সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নের মানিকপুর বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। কিউকের মসজিদেও পানি প্রবেশ করেছে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রামের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, দুর-দুরান্ত থেকে অনেকেই দেখতে আসেন এই মসজিদ। বিভিন্ন এলাকা থেকে নামাজ পড়তেও আসেন। আবার কেউ কেউ ঐতিহাসিক ও পুরনো স্থাপত্য কলায় নির্মিত হওয়ায় দর্শনার্থীদের চাহিদাও রয়েছে। নানাভাবে দেড়শ বছরের পুরনো মসজিদটি দেখতে ছুটে আসছেন মানিকপুর এলাকায়। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে ঐতিহাসিক মসজিদটি এখন হুমকির মুখে। বন্যার পানির তোড়ে হুুমকির মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মসজিদের সামনে রাস্তা নির্মাণের কারণে মসজিদটি আরও বেশি ঝুকিপূর্ন করে তুলেছে। মানুষের যাতায়তের জন্য বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করলেও এতো বেশি ঝুকি হতো না। তিনি আরও বলেন, দ্রুত সময়ে মসজিদের মেরামত এবং নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে যে কোন মুহুর্তে মাতামুহুরী নদীতে তলিয়ে যেতে পারে কালের স্বাক্ষী ঐতিহাসিক কিউকের মসজিদটি।

পাঠকের মতামত: