ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নারী আইএস যোদ্ধাদের শেষ পরিণতি যৌনদাসী

IS-P-300x166আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ব্রিটেন থেকে অর্ধশতাধিক নারী কথিত ইসলামি স্টেট গ্রুপে যোগ দিতে সিরিয়া চলে গেছে বলে ধারণা করা হয়। বেশিরভাগ রিক্রুট করা হয় অনলাইনের মাধ্যমে। এদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও নেহায়েতই কম নয়। বলা হয় জিহাদীদের যৌনদাসী হওয়াই এসব নারীদের শেষ পরিণতি। তার পরেও নারীরা কেন আইএস’এ যোগ দিতে সিরিয়া যাচ্ছে? এই নিয়ে বাংলাদেশি পরিবারগুলোই বা কতটা সচেতন?
পূর্ব-লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার একটি স্কুল ভেতনাল গ্রীণ একাডেমি। ২০১৫ সালের ১৭ই অন্যান্য দিনের মত ক্লাস হলেও সেদিন তিনটি মেয়ে ক্লাসে আসেনি। পরে জানা যারা ঐ তিন মেয়ে সিরিয়ার গেছে আইএস’এ যোগ দিতে। ঐ তিনজন হলেন শামিমা বেগম, আমিরা আবাছি এবং খাদিজা সুলতানা। তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের পরিবার সিরিয়া যাবার একদিন আগেও কিছুই জানতে পারেনি।
আমিরার বাবা বলেন, ‘আমরা ভাবতে পারিনি আমার মেয়ে পালিয়ে সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। সবকিছুই খুব স্বাভাবিক ছিল। একদিন আগেও কিছুই বুঝতে পারিনি। শুধু যাওয়ার আগে বলে গেছে আমার একটু তাড়া আছে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব তোমরা চিন্তা করনা। কিন্তু আমার মেয়ে আর ফিরে আসেনি’।
ইসলামি উগ্রপন্থা প্রতিরোধে ব্রিটেনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইলিয়াম ফাউন্ডেশন। কুইলিয়াম ফাউন্ডেশনের একজন গবেষক নিকিতা মালেক বলেন, অনেক সময় নিয়ে প্রচুর গবেষণার পরেই তারা ইসলামি স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া যাচ্ছে। পূর্ব-লন্ডনের ভেতনাল গ্রীণ একাডেমি থেকে যে মেয়েগুলো সিরিয়া গিয়েছে তাদের একজন ১শ’টির বেশি জিহাদি সাইট পরখ করে দেখেছে। গবেষণায় দেখা গেছে এ ধরনের কিছু নারীর সাথে আইএস’এর যোগাযোগও আছে। তাদের সাথে আলোচনা হয় সমাজে নারীর অবস্থান নিয়ে। মেয়েরা মনে করছে আইএস তাদের মর্যাদা দিচ্ছে,ক্ষমতায়ন করছে যা আগে কখন ছিল না। তাদেরকে বোঝানো হয় আগামী প্রজন্মের মুজাহিদিনকে শিক্ষিত করে তোলা এবং জিহাদীদের ভাল স্ত্রী হয়ে উঠাও তাদের একটি ধর্মীয় দায়িত্ব।
নিকিতা মালেক আরও বলেন, মেয়েরা মনে করে তারা কোনো একটা কাজে অংশ নিতে পারছে। পুরুষ যোদ্ধাদেরমত তারাও মনে করে পশ্চিমাদেশগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং আইএস’এর হয়ে যুদ্ধ করতে পারলে ভাল মুসলিম হতে পারবে। আর এই কাজে নারীরা পুরুষের সমান মর্যাদা পাচ্ছে।
গবেষকদের মতে, আইএস’এর কিছু নারী যোদ্ধা আছে যাদের কাজ হচ্ছে নতুন নতুন মেয়ে সংগ্রহ করা। টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিযান চালায় তারা। অনেকের মতে সিরিয়া যাওয়া কারোও কাছে রোমাঞ্চকর আবার কারোও কাছে রোমান্টিক এক অভিজ্ঞতা। তাদেরকে বলে দেয়া হয় কিভাবে পুরো পথ পাড়ি দিতে হবে, পিতা-মাতাকে লুকিয়ে কিভাবে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এমনকি তাদের বিয়ের কথাও আগাম বলে দেওয়া হয়।
অল্প বয়সী মেয়েদের পাশাপাশি মায়েরাও যাচ্ছেন। এক বছরের শিশু সন্তান থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে চলে গেছে অনেকে। বলা হয় এসব নারীদের পরিণতি জিহাদী যোদ্ধাদের যৌনদাসী। তারপরেও কেন যাচ্ছে তারা?
ভেতনাল গ্রীণের ৩ জন কিশোরীর ২ জনই বাংলাদেশি। লোটন শহর থেকে ১০ সদস্যের একটি পরিবার বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে ফেরার পথে ব্রিটেনে না এসে সিরিয়ায় চলে যায়।
উগ্রপন্থার ব্যাপারে বাংলাদেশিদেরকে সচেতন করতে লন্ডনে একটি বাংলা টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করেন হেনা আহমেদ। হেনা আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় এক জেনারশনের মা-বাবা আইএস’এর বিষয়ে মোটেই সচেতন না। এমনও অনেক পরিবার আছে আইএস কি সেটাই জানেন না। আবার অনেক মা-বাবা আছে তাদের বাচ্চাদের তৈরি করছে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য’।
ব্রিটেনের ছেলে-মেয়েরা যাতে চরম পন্থার কবলে না পরে সেজন্য স্কুলগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরুন মুসলিম মায়েদেরকে ইংরেজি শিখতে বলেছেন। পুলিশও আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। সরকারের এসব কৌশল কতটা কাজে আসছে তা বলা কঠিন। সিরিয়া যাওয়া থেকে কাকে আটকানো গেছে সেটা জানা যায় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে কেউ যখন সিরিয়াতে পৌঁছায় তখনই সেটা খবর হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত: