ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সরকারী নিয়ম না মেনে রামুতে বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক

DSC_0006-0011-720x540-720x540রামু সংবাদদাতা:
কক্সবাজারের রামুতে বিল্ডিং কোড না মেনে এবং অনুমতি না নিয়ে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণ করায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ। মানা হচ্ছে না সরকারের দেওয়া বিল্ডিং কোড। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অহরহ অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণ করছে। ফলে এলাকায় হিজিবিজি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অবস্থা এমন হয়েছে যে, তিল ধরনের ঠাই নেই। রামু বিভিন্ন ষ্টেশনমুখি বাণিজ্যিক ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এছাড়া জায়গার অনেক দাম হওয়ায় বাড়ি নির্মাণ করার সময় পরিকল্পনা না করে তৈরী করা হচ্ছে এসব বাড়ি।

এলাকার জমির দাম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার লোক ছুটে আসে চৌমুহনী ষ্টেশনমুখি এলাকায় বাড়ি নির্মাণ এবং ব্যবসা করতে। যার কারণে দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন-এক এর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে জনসাধারণের জান-মাল রক্ষার্থে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করতে হবে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জমির দাম বাড়ার কারণে বাড়ি নির্মানের সময় পারাপারের জন্য কোন রাস্তা রাখা হয়নি। ফলে এলাকার বাড়ীর লোকজনসহ কোন লোক রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না চলাচলের। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পরামর্শ এর প্রয়োজন হয়। কিন্ত তা না করে তারা ইচ্ছা মত বাড়ি নির্মাণ করছে।

গণপূর্ত অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, যে এলাকা উল্লেখিত সংস্থা বা পরিষদের অধীনে থাকবে, তাদের ছাড়পত্র নিয়ে ভূমির উন্নয়নকাজ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে রামু চৌমুহনীর উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংক সংলগ্ন পুরাতন আরকান সড়কের পাশে সরকারি জায়গা ঘিরে স্থানীয় জনসাধারণ যেন না দেখে আড়াল করে বিল্ডিং কোড না মেনে এবং অনুমতি না নিয়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে জোয়ারিয়ানালা ইলিশিয়ার পাড়ার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল হক ও মনছুর আলম। এখনো ভবনটি নির্মাণাধীন রয়েছে।

এদিকে সরকারি জায়গা দখল করে টিনের ঘেরা দিয়ে, সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ভবন নির্মাণের কারণে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ঐ ভবন মালিকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সৌদি আরব অবস্থান করার কারনে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভবন নির্মাণ স্থলে শামসুল হকের বড় ছেলের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ জানান, সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সুদৃঢ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। রামুও আমাদের কার্যকমের আওতাধীন। যে কোন উন্নয়ন মুলক প্রকল্প বা কর্মকান্ডে ভুমি ব্যবহার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র ও ইমারত নির্মাণ অনুযায়ী নকশার অনুমোদন নিতে হবে। রামু উপজেলায় যে কোন ভবন নির্মাণ করতে অবশ্যই অনুমতি লাগবে। আমরা ইতিমধ্যে রামুসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন চিঠি প্রদান করা হয়েছে। যাতে আমাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে। নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমতি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, রামুকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভুমি ব্যবহার ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানতে হবে এবং অনুমতিও নিতে হবে।

ফতেখাঁরকুল চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, আমার কাছেও এ পর্যন্ত কোন ভবনের মালিক অনুমতি বা অবহিত করেননি। শামসুল আলম ও মনছুর আলম নামে কোন ব্যক্তি ভবন নির্মানের বিষয় তার পরিষদ থেকে অনুমতি নেয়নি।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহজাহান আলি জানান, নতুন ভবনের জন্য বিল্ডিং কোড অনুসরন করতে হবে এবং অনুমতি প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে কেউ আইন অমান্য করলে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য- সম্প্রতি দেশের যেকোনো প্রান্তে ভূমির ওপর ঘরবাড়ি বা স্থায়ী কোনো স্থাপনা করলেই সরকার মনোনীত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। যেখানে কর্তৃপক্ষ নেই সেখানে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা হবে। এ আইন অমান্য করলে পাঁচ বছরের জেল এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ধরনের বিধান রেখে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, অত্যন্ত কঠোর এ আইনটি করা হচ্ছে দেশের কৃষিজমিসহ ভূমির সঠিক ব্যবহারের জন্য। বর্তমানে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বা জেলা পর্যায় থেকে অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

পাঠকের মতামত: