ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
হাইওয়ে পুলিশে চলছে হাই প্রোফাইল চাঁদাবাজি। এতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিক ও চালকরা। প্রতিবাদ করলেই নেমে আসছে নির্যাতনের খড়গ। হাইওয়ে পুলিশের কাছে তারা এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এই রকম বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের আইসি আবুল হাশেম মজুমদার ও সহকারি উপ-পরিদর্শক হেলালউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে গতি নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা আনয়ন, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা, হাইওয়েতে নিষিদ্ধ এমন সব যানবাহনের চলাচল প্রতিরোধ করা। কিন্তু যেসব কাজ তাদের জন্য নির্ধারিত, তা না করে তারা অন্য কাজ করতেই পছন্দ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে যাত্রী, পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের অভিযোগের অন্ত নেই। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেকের নামে চাঁদা নেয়। কাগজপত্র সঠিক না পেলে তারা খুশি হয়। কোনো না কোনো অজুহাতে পুলিশ টাকা আদায় করেই ছাড়ে। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর দেওয়া হয় মামলা। হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ করার চেয়েও নির্দিষ্ট স্পটে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। তারা টোকেন পদ্ধতি চালু থাকলেও হাইওয়ে সড়কে দায়িত্বরত দিনের পেট্রোল পার্টি প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি স্থানে আর রাতের পেট্রোল পার্টি অন্য একটি স্থানে অবস্থান নিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। হাইওয়ে সড়ক দিয়ে মাদক, কাঠসহ অবৈধ মালামাল পাচার হলেও এসব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে এ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বরইতলী মগনামা সড়কসহ আভ্যন্তরিণ সড়ক গুলোতে চলাচলকারী সিএনজি চালকরা জানিয়েছেন, আইসি আবুল হাশেম মজুমদার ও সহকারি উপ-পরিদর্শক হেলালউদ্দিন পুলিশ ভ্যান নিয়ে মহাসড়ক ও আভ্যন্তরিণ সড়ক থেকে সিএনজি ও টমটম গাড়ি আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে চালকদেরকে সন্ধ্যার দিকে দেখা করতে বলে। চালকরা ফাঁড়িতে গেলে প্রতিটি গাড়ি ৪-১০হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। যারা যোগাযোগ করে না তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। এভাবে আটক বাণিজ্যের নামে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশের আইসি আবুল হাশেম মজুমদার।
চকরিয়া পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর বলেন, গত রমজান মাসের আগে একটি সিএনজি অটোরিক্সা আটক করে আইসি হাশেম মজুমদার। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দরিদ্র চালকের কাকতি মিনতির কারনে আমি ফাঁড়িতে গিয়ে গাড়িটি ছেঁেড় দিতে অনুরোধ করি আইসিকে। কিন্তু তিনি আমার কথা রাখতে রাজী নন। পরে আমি বাধ্য হয়ে চলে আসি। তিনি বলেন, পরে দেখি সিএনজি সমিতির নেতাদের মাধ্যমে চাহিদা মতো চাঁদা দিয়েই গাড়িটি ছেঁড়ে আনেন ওই চালক।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান আইসি চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকে কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছেন। নতুন নিয়মের মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং বরইতলী মগনামা সড়ক, চিরিঙ্গা-আজিজনগর সড়কে চলাচলরত লাইসেন্স এবং নাম্বার বিহীন সিএনজি, টমটম, জীপ ও ম্যাজিক গাড়ি থেকে টোকেনের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে মাসোহারা আদায় করেন। প্রতিমাসে একটি গাড়িকে ৩ থেকে ৫শত টাকা হারে টোকেন মানি দিতে হচ্ছে বলে জানান মালিক ও চালকরা।
এব্যাপারে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এএসআই হেলাল উদ্দিন বলেন, ফাঁড়িতে সব ধরণের কার্যক্রম চলে আইসি আবুল হাশেম মজুমদারের নির্দেশে। এখানে তাঁর কোন ধরণের কৃতিত্ব নেই। তবে আটক সিএনজি ও টমটম গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয় না এটা ঠিক নয়। কাগজপত্র বৈধ আছে, এসব গাড়ি ছেঁেড় দেয়া হয়। কাগজপত্র ঠিক নেই এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, একদিকে জনবল সংকট। শুধুমাত্র ৮জন নিয়ে সদস্য চলছে পুলিশ ফাঁড়ি। এরপরও চলছে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।
দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কে সবধরণের তিন চাকার গাড়ি চলাচলে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে মহাসড়ক থেকে গাড়ি আটকের বিষয়টি আইনের আওতায় আছে। তবে গাড়ি আটকের পর উৎকোচ নিয়ে ছেঁেড় দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পেলে তদন্তের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: