ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় ফের দখল নেশায় চিংড়ি জোনের প্রদর্শনী খামার

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::ger

কক্সবাজারের চকরিয়ার চিংড়ি জোন রামপুর মৌজায় মৎস্য বিভাগের মালিকানাধীন ‘রামপুর চিংড়ি প্রদর্শনী খামার’-এর ৪৮ একর জায়গা আবারও দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এরই মধ্যে ওই চক্রটি কয়েক দফা খামারটি দখলের চেষ্টা চালায়। সর্বশেষ গত রবিবার ছাড়াও গত শুক্রবার সদলবলে খামার এলাকায় গেলে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। গত শুক্রবারের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে শনিবার রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন প্রদর্শনী খামারের প্রকল্প পরিচালক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর ধরে প্রদর্শনী খামারের এই জমি দখলে নিয়ে অবৈধভাবে লবণ ও চিংড়ি চাষ করা হচ্ছিল। এরপর দখলদারি স্থায়ী করতে চক্রটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করে। পরে গত বছরের নভেম্বরে আদালত ওই মৌজার ৪৮ একর জমি রামপুর চিংড়ি প্রদর্শনী খামারের বলে রায় দেন। একই সঙ্গে দখলদারদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রদর্শনী খামারের জমি মেপে চারপাশে লাল পতাকা উঁচিয়ে দখল বুঝিয়ে দেন। অবশ্য আগেও খামারটি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

রামপুর চিংড়ি প্রদর্শনী খামারের প্রকল্প পরিচালক (এডিবি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সশস্ত্র দখলবাজ চক্রের একের পর এক তৎপরতার মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। গত তিন দিনে দুইবার ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। দুর্গম এ চিংড়ি জোনে বারবার দখলবাজ-সন্ত্রাসীদের পাহারা দেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় শনিবার রাতে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, গত শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি’ নাম দিয়ে কয়েক শ দখলবাজ-সন্ত্রাসী সাতটি ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে এসে খামারটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশ কড়া প্রতিরোধ গড়ে তুললে দখলবাজরা পিছু হটে। এ সময় সন্ত্রাসীরা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের হত্যারও হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় কথিত ওই সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম লিটনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে মৎস্য মন্ত্রণালয় চকরিয়ার রামপুর মৌজায় ১০ ও ১১ একরের ৫৮৬টি চিংড়িঘের বিভিন্ন ব্যক্তির নামে লিজ দিলে চাষিরা চিংড়ি উৎপাদন শুরু করে। পাশাপাশি এসব চিংড়িঘেরে ভাইরাসমুক্ত, আধুনিক ও উন্নতমানের চিংড়ি চাষ নিশ্চিত করতে মৎস্য চাষ প্রকল্প (এডিবি) ৪৮ একরের একটি চিংড়ি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে। ১৯৮৬ সালে স্থাপিত খামারটি যথাযথভাবে পরিচালিত হলেও জনৈক শামশুল ইসলাম চৌধুরীর (বর্তমানে মৃত) নেতৃত্বে প্রভাবশালী চক্র খামারের বিপুল পরিমাণ জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর প্রায় ছয় বছর ধরে দখলে রেখে সেখানে অবৈধভাবে লবণ ও চিংড়ি চাষ করছিল তারা। পরবর্তী সময়ে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি উচ্ছেদ মামলা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে খামারের দখলে নেওয়া জমি চিহ্নিত করে একটি ‘ট্রেস ম্যাপ’ চেয়ে ২০১৪ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) এসংক্রান্ত চিঠি দেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এসএ শাখার কানুনগো আনোয়ারুল ইসলাম। এরপর জরিপ শেষে দখলদার উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ওই ট্রেস ম্যাপ আর আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য এ তৎপরতার মধ্যেই রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির ব্যানারে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। পরে আদালত ওই জমি মৎস্য বিভাগের চিংড়ি প্রদর্শনী খামারের বলে রায় দেন। সে অনুযায়ী গত বছরের নভেম্বরে ওই জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করে মৎস্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।

রামপুর ১০ একর চিংড়ি প্রকল্প মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মেহেরুজ্জামান, সম্পাদক মিজানুর রহমান ও ১১ একরের সভাপতি শফিকুল কাদের শফি ও সম্পাদক ছৈয়দ নুরুল আকবর জানান, সরকার কয়েক হাজার চিংড়ি চাষির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ভাইরাসমুক্ত চিংড়ি উৎপাদনের প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে মৎস্য বিভাগের অনুকূলে ৪৮ একর জমি হস্তান্তর করে। পরবর্তী সময়ে সেখানে রামপুর চিংড়ি প্রদর্শনী খামার গড়ে তোলা হয়। চকরিয়ার বৃহৎ চিংড়ি চাষি ও উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান সেলিম উল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রামপুর চিংড়ি প্রদর্শনী খামারের বিপুল পরিমাণ জমি দখলে রেখে প্রভাবশালী চক্রটি চিংড়ি চাষের পরিবর্তে লবণ উৎপাদন করেছে। এ সময় জমিতে ক্ষতিকারক পোকা দমনের জন্য মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে। পরে ওই জমিতে আবার চিংড়ি চাষ করলে চিংড়ির শরীরে নাইট্রোফোরান ও ফ্লোরাম ফেনিকল নামের ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাঠানো চিংড়ি চালান ফেরত আসে।

তবে ওই জমি পৈতৃক দাবি করে রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলেও প্রশাসন তা না মেনে ওই জমি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করেছে। ’

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারি প্রকল্পের এই জমি যাতে কোনো দুর্বৃত্তচক্র দখলে নিতে না পারে সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে দখলচেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: