ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী ও নিম্নমানের ঔষধে সয়লাব সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া!

10904_medমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কুতুবদিয়া থেকে ফিরে :

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে সদর ইউনিয়নসহ পুরো দ্বীপজুড়ে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ আর অপ-চিকিৎসার শিকার হচ্ছে দ্বীপের সহজ সরল মানুষ। ফার্মেসী গুলোতে একদিকে যেমন নেই কোন প্রশিক্ষিত ফার্মাসিষ্ট অন্যদিকে অভিজ্ঞ সেলসম্যানও। দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়া নি¤œমানের বিভিন্ন কোম্পানির উপহার সামগ্রীর প্রলোভন ও অধিক মোনাফার লোভে পড়ে উপজেলার প্রত্যন্তঞ্চলে শুধু ফার্মেসী নয় মুদির দোকানেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ও চোরাইপথে আমদানীকৃত ইনডিয়ান ঔষধ। উপজেলার একাধিক মুদির দোকানে দেখা গেছে প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে এ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত দেদারছে বিক্রি করছে দোকানদার। যা সেবনে উপকার তো হচ্ছেই না বরং বাড়ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি।

 খবর নিয়ে জানা গেছে, দ্বীপে প্রায় ১২০টি ফার্মেসী রয়েছে যার অধিকাংশেরই নেই কোন ড্রাগ (পয়জন) লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট। তার ওপর একধিক ফার্মেসীতে একই সাথে গরু-ছাগল ও হাস-মুরগির ঔষধও বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারী না থাকায় দিন দিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে দ্বীপের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেছেন সচেতন মহল।

 সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্যন্ত্যঞ্চলসহ উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ১২০টি ফার্মেসী রয়েছে। যার অধিকাংশতেই নানা রকম ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের রং বেরংয়ের সাইনবোর্ড টাঙ্গানো রয়েছে এবং তাতে রোগীর চেয়ে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (এমআর) ভিড় চোখে পড়ার মত। বিশাল সাইন বোর্ড লাগিয়ে ওই সমস্ত খোয়াক ডাক্তাররা এল.এম.এ.এফ, আর.এম.পি, ডি.এম.এস, যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, মা ও শিশুরোগে অভিজ্ঞতার নানা ফাঁদ পেতে প্রতারণা করে চলছে দ্বীপের সহজ সরল নাগরিকদের সাথে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুতুবদিয়া হাসপাতালের কতিপয় ডাক্তার কিছু ফার্মেসী মালিকদের সাথে আঁতাত করে সাইনবোর্ডে এমবিবিএস সহ বিসিএস, ডিজিও, এফসিপিএস (লন্ডন) এবং বিভিন্ন মনভোলানো ডিগ্রী ব্যবহার করে দ্বীপের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই কুতুবদিয়া হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট। তার ওপর অফিস সময়ে ফার্মেসীতে চেম্বার করা নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগও।

 অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফার্মেসী পরিচালনার জন্য যে ন্যুনতম যোগ্যতা প্রয়োজন তাও এসব ফার্মেসীর মালিকদের অধিকাংশের নেই। অভিযোগ রয়েছে এসব ফার্মেসীর অধিকাংশই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে ঔষধ সরবারাহ দিয়ে থাকেন এবং রোগীদের বলে থাকেন একই গ্রুপের ঔষুধ ডাক্তার যেটা লিখেছেন তার চেয়েও ভালো। ফলে রোগীরা সরল বিশ্বাসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তাছাড়া যাদের কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে তাদের অনেকেই সরকারী চাকরীজীবী। যা সরকারী চাকুরী বিধির চরম পরিপন্থি।

 অরপদিকে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ওইসব ঔষধী মুদি দোকান ও অনভিজ্ঞ ফার্মাষ্টিটদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে প্রশাসনের পরিচালনা করা অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে দ্বীপবাসী। তারা আশা করেছেন ঔষধ প্রশাসনের এই অভিযান শুধু উপজেলা সদরে নয় মফস্বলেও অব্যাহত রাখলে অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীদের দ্বারা মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধসহ ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রি বন্ধ হবে।

 এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবু সুজন চৌধুরী বলেন, ফার্মেসীতে অবৈধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধসহ ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রি আইনত অপরাধ। সময়মত অভিযান চালানো হবে।

 তবে সচেতন মহল মনে করেন প্রশাসনের অভিযানের পরিধি উপজেলা সদরস্থ বড়ঘোপ বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যন্ত এলাকায় বিস্তৃত করলে উপকার পেত সাধারন দ্বীপবাসী। দ্বীপের প্রতিটি বাজারসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেেছ শত শত লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী যেখানে চিকিৎসার নামে চলছে অপ চিকিৎসা। হাতুড়ে ডাক্তারদের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারন নিরীহ মানুষ। এসব দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হলেও তারা বছরের পর বছর লোকবলের সংকট দেখিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দ্বীপবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পাঠকের মতামত: