ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার চেষ্ঠা করছেন মাতামুহুরী নদীতে

Chakaria Picture 09-07-2017মিজবাউল হক :

স্থানীয় জনতার সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চকরিয়া পৌরসভা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধটি রক্ষার চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। গতকাল রবিবার সকাল থেকে শতশত মানুষ বাধটি রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার পর থেকে দুই তীরে শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। গত কয়েকদিনে বিলিন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের শহররক্ষা বাঁধ এলাকার গণি সিকদারপাড়া গ্রামের অন্তত ১২টি বসতঘর ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। নদীতে হেলে পড়েছে ৬টি বিদ্যুতের খুটি।

স্থানীয় এলাকাবাসিরা জানান, অব্যাহত ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে হুমকির মুখে পড়েছে চকরিয়া পৌরশহরের ৯নং ওয়ার্ডের এক নাম্বার গাইড বাঁধটি। তিন কিলোমিটার লম্বা শহর রক্ষা বাঁধটি প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা মাতামুহুরী নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের জনবসতি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ মাদরাসা, স্কুল ও মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীতে হেলে পড়েছে ৬টি বিদ্যুতের খুটি। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকার ১৬টি গ্রামে বিদ্যুত নেই। চরম দূর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার বাসিন্দরা। বাধের অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে যে কোন মুহুর্তে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাঁধের নিকটে চলে আসছে নদী। ফাঁসিয়াখালী ও চকরিয়া পৌরসভার অন্তত লক্ষাধিক জনগণের মাঝে বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে তাৎক্ষনিক ভাবে বাঁধের গণি সিকদারপাড়া পয়েন্টে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী প্রকল্পের আওতায় ৮লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই বরাদ্দ দিয়ে প্রাথমিক ভাবে গাছের বড় বড় খুটির ১০টি স্পার দেওয়া হয়েছে। এরপর বাধটি অধিক ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় গতকাল রবিবার শতশত এলাকাবাসী মাটি দিয়ে রক্ষার চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। টেকসই উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে দ্রত সময়ে ভাঙ্গন এলাকাটি রক্ষা করা না গেলে চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এলাকার শতশত মানুষ মাটির কাজ শুরু করেন।

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চকরিয়া পৌরসভা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধটি অধিক ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। তাৎক্ষনিকভাবে ৮লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পর্যাপ্ত নয়। এরপরও প্রাথমিক ঝুকি এড়াতে ১০টি গাছের বড়বড় খুটির স্পার দেওয়া হয়েছে। বিশাল এলাকা ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় এলাকার শতশত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে রক্ষার চেষ্ঠা করছেন বলে তিনি জানান।

চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, মাতামুহুরী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরপর ইতোমধ্যে নদীর তীর এলাকায় তাঁর ওয়ার্ডের গণি সিকদারপাড়া গ্রামের ১২টি বসতঘর, আবাদি জমি ও কয়েকটি সমিল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে বাড়ি-ভিটা হারানো স্থানীয় জসিম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবু তালেব, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আবছার, আমির হোসেন, নুরুল হোসেন, গুরা মিয়া, সামসুল আলম, ছৈয়দ নুর ও ছৈয়দ আলমসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো সব হারিয়ে পরিবার সদস্যদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

নদী ভাঙ্গন এলাকা পরির্দশন করেছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চকরিয়া শহর রক্ষা বাঁধ এলাকার অন্তত ১২টি বসতঘর ও ৬টি বিদ্যুত লাইনের খুটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থার উত্তোরণের লক্ষ্যে আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে নদীতে স্পার বসানো শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে হলে ভাঙ্গন এলাকায় আরো স্পার বসানো হবে।

পাঠকের মতামত: