ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত হুমকির মুখে ঘুনিয়া বেড়িবাঁধ

beribadএম. আর মাহমুদ ::

‘নদীর একূল ভাঙ্গে অকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা, সকাল বেলার আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা’ নদী ভাঙ্গনে ভয়ঙ্কর দৃশ্যটি না দেখলে কেউ অনুধাবন করতে পারবে না নদী ভাঙ্গন কত ভয়াবহ। বেশ কিছুকাল ধরে শুনে আসছি চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ১নং গাইডবাঁধ হয়ে ক্ষেত্রপাল মন্দির পর্যন্ত অংশ ভাঙছে। যার বাস্তব চিত্র গতকাল শনিবার দেখতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ওই এলাকার ভাঙ্গন কতই ভয়ানক। সিরাজ-উদ-দৌলা নাটকের আলোচিত গানের দু’টি কলি বার বার মনে পড়ছিল। বাস্তবেও তাই। ওই গানের সাথে বাস্তবতার অনেকটা মিল রয়েছে। সকালে যাদের বাড়ি ঘর ছিল, সন্ধ্যায় তাদের বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হতভাগা গৃহহীন মানুষগুলো কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা জানি না। তবে নদীতে ভিটার স্মৃতি বিজড়িত নারিকেল গাছসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বেশ ক’টি খুঁটি দৃশ্যমান আছে।

সূত্র মতে, ১৯৭৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এখনকার ভাঙ্গারমুখ হয়ে ঘুনিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মৌলভীর কুমের খালটি গতি পরিবর্তন করেছিল। এছাড়া ওই বাঁধ ও মহাসড়ক রক্ষার জন্য ৩টি গাইড বাঁধ যা ইংরেজী অক্ষরের ‘ঞ’ এর মত ছিল বলে ‘টি’ বাঁধ হিসেবে অনেকে বলত। নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় ৪৩ বছরের পুরানো গাইডবাঁধগুলো বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগে। ফলে মাতামুহুরী নদীর পানির ধাক্কায় ভাঙতে ভাঙতে এখন নদীর গতি ঘুনিয়া বাঁধের পাশে চলে গেছে। ক’দিন আগের বন্যার পর ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্পার দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কি জানি সফল হয় কিনা? না হলে ১৯৬০ সালের সৃষ্ট মৌলভীর কুমের বাঁধা খালটি পুনরায় প্রবাহমান নদীতে পরিণত হবার আশংকা করছে এলাকার প্রবীণরা। তখন হুমকির মুখে পড়বেস কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এক সময় পুরানো মৌলভীরকুম নদীটি প্রবাহমান থাকাকালে আজকের ভেন্ডি বাজারের সামান্য উত্তরে লাঠি মৌলভীর ব্রীজ নামক একটি সেতু ছিল। বর্তমানে ওই অংশে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসাড়ক হয়েছে। পুনরায় নদীটি চালু হলে ওখানে আবার নতুনভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে। না হয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়বে। এছাড়া মরে যাবে বর্তমান মাতামুহুরী নদীর দু’টি গতিপথ এতে অকার্যকর হয়ে পড়বে সওদাগরঘোনা ও বাঘগুজারা রাবার ড্যাম। অসংখ্য মৎস্যঘের নদীর পলিতে ভরাট হয়ে যাবে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাবিবুর রহমান পরিষ্কারভাবে বলেছেন, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে মাতামুহুরী নদী ড্রেজিং ছাড়া কোন পথ নেই। নদী ড্রেজিং করার জন্য ১০৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে। মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যেমন- প্রপার কাকারা, পৌরসভার ১নং গাইডবাঁধ উল্লেখযোগ্য। বন্যার পানির তোড়ে বি.এম.চর ইউনিয়নের কুড়াইল্যার কুমে মাত্র ৫ চেইন বাঁধ ভেঙ্গে উপকূলীয় এলাকার বি.এম.চর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা ও বদরখালী ইউনিয়নের সিংহভাগ ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। সাথে তছনছ হয়ে গেছে গ্রামীণ সড়কগুলো। এছাড়া ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। ওই এলাকার একটি অংশের বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কে। হতদরিদ্র লোকজন গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগি সহ পলিথিনের তাবুতে সহঅবস্থান করছে। তাদের কষ্ট দেখে ধণাঢ্য ব্যক্তি রাজনৈতিক দল ও সরকারিভাবে ওইসব পরিবারের মধ্যে কিছু কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে। তা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বাঁনবাসী মানুষগুলো বেঁচে আছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের যেসব ছবি ভেসে উঠছে তা দেখলে মনে হয় দূর্গত এলাকার লোকজন শুধু ত্রাণই পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বেরসিক এক প্রবীণ ব্যক্তি মন্তব্য করতে শোনা গেছে ‘লইট্যার চাইতে ধন্যা বেশি’ তারপরও দূর্গত এলাকায় যারা দূর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাতে কৃপণতা করার ধৃষ্টতা দেখানো যথার্থই হবে না। বাঁনবাসী মানুষের অভিমত, ত্রাণ নিয়ে ক’দিনই তারা বেঁচে থাকবে। আঞ্চলিক ভাষায় একটি আছে ‘তোলা দুধে পোলা বাঁচে না’। সবচাইতে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে অতীতে দূর্যোগ বা মারাত্মক বন্যা হলে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গুলো মানুষের কল্যাণে মাঠে চাষে বেড়াতো ত্রাণ নিয়ে। এখন তারা মানব কল্যাণ মূলক কাজে নেই, আছে শুধু ঋণ দান ও ঋণ আদায়ে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, তারা যেন বর্গি। আবার কিছু কিছু জনপ্রতিনিধিরা প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশায় তীর্থের কাকের মত বসে থাকে। বিপর্যয় আসলে যেন তাদের লাভ। নদী ভাঙ্গন প্রসঙ্গে একটি চুটকি না বললে যথার্থ হয় না ‘এক ধণাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে রাতের আঁধারে চোর ঢুকে সমস্ত মালামাল এক জায়গায় ¯তূপ করে বাড়ি মালিকের স্ত্রীর শাড়ী ধরে টানতে শুরু করে। এ সময় গৃহবধু ঘুম থেকে জেগে উঠে স্বামীকে বলতে থাকলো, কে যেন আমার বস্ত্র হরণ করছে। এ সময় স্বামী জবাব দিল, দেখি না শেষ পর্যন্ত কি করে। এরই মধ্যে চোর বাড়ির মালামালসহ গৃহবধুর শাড়ীটিও টেনে নিয়ে চলে যায়। পরে স্বামী আফসোস করে বলল, আমার স্ত্রী বলার পরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় চোর বাড়ির মালামাল সহ স্ত্রীর পরনের শাড়ীটাও নিয়ে গেল। অনুরূপ অবস্থা যেন নদী ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে না হয় সে প্রত্যাশায় চকরিয়াবাসীর।

পাঠকের মতামত: