ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

গুম, গোপন আটক নিয়ে সরকারের বক্তব্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জবাব

মানবজমিন :::

গুম ও গোপন আটকের ঘটনার তদন্তের পরিবর্তে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশে গুম, গোপন আটক ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৫ই জুলাই রিপোর্ট প্রকাশ করে। এরপর বাংলাদেশ সরকার যে জবাব দিয়েছে তার পাল্টা জবাবে এসব কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ‘নো, বাংলাদেশ, দ্য ট্রুথ ইজ নট এ ‘স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব কথা বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে গোপন আটক ও গুম নিয়ে ৮২ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ রিপোর্টকে ‘স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ বা মিথ্যা প্রচারণা বলে দাবি করেছেন। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান বা সে বিষয়ে উত্তর পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন তা কঠিনভাবে উপেক্ষা করে তিনি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, কাকে আপনি গুম বলবেন? অনেক ব্যবসায়ী তাদের ঋণ ফাঁকি দিতে আত্মগোপন করেছেন। অনেক মানুষ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের পরে নিখোঁজ রয়েছেন।
মিনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সেই মানুষকে নিখোঁজ ব্যক্তি (ডিজঅ্যপেয়ার্ড পারসন) বলা হয় যাকে রাষ্ট্রের কোনো এজেন্ট আটকে রাখে অথবা সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে, স্বাধীনতা বঞ্চিত করে তাকে রাখা হয়, অথবা তিনি কোথায় আছেন তা জানা যায় না। এমন অবস্থায় তাকে এমন স্থানে আটকে রাখা হয় যেখানে তাকে আইন দিয়ে সুরক্ষা দেয়া হয় না। মিনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, ২০১৩ সাল থেকে কয়েক শত মানুষকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী। তাদের অনেককে আটকে রাখা হয়েছে গোপন স্থানে। এক্ষেত্রে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বেশ কিছু ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছে, যেখানে ব্যক্তিবিশেষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা প্রত্যক্ষ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা দেখেছেন এসব লোককে তুলে নিয়ে গেছে নিরাপত্তা বিষয়ক বাহিনীর সদস্যরা। তারা তাদেরকে পরিচয় দিয়েছেন র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) অথবা প্রশাসনের সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। কিন্তু তা যখন করা হয় নি তখন তাদের পরিবারের সদস্যরা বার বার হয়তো পুলিশে না হয় অন্য সব কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু তারা এসব স্বজনকে আটক রাখার কথা অস্বীকার করেছেন। কয়েক সপ্তাহ অথবা মাস তাদের কাউকে কাউকে অবৈধভাবে আটক রাখার পর যদিওবা আদালতে হাজির করা হয়েছে, তবে অন্য অনেকেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে মুখ বন্ধ রাখতে। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে অনেককে। তা ছাড়াও অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ।
মিনাক্ষী গাঙ্গুলি আরো লিখেছেন, এসব ঘটনার তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরিবর্তে (আসাদুজ্জামান) খান ঘোষণা দিয়েছেন, তার সরকার এ রিপোর্টে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করবে। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধানের পদে বসে তিনি দাবি করেছেন, গুম নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলে নি জাতিসংঘ। প্রকৃতপক্ষে এসব নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে মন্তব্য চেয়ে চিঠি পাটিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কিন্তু জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্জড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সে থেকে বার বার যে ‘কোয়ারি’ পাঠানো হয়েছে তা অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ সরকার। হিউম্যান রাইটস কমিটিও কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
মিনাক্ষী গাঙ্গুলি আরো লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তিনি বার বারই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি হাইলাইট করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতায় গেলে এগুলো বন্ধ করবেন। এখন তার সরকারের পর্যায়ক্রমিক দ্বিতীয় মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার পূর্বসুরিদের মতো শুধু প্রতিধ্বনিই তুলছে না, একই সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গোপনে আটক করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ও সমালোচকদের গুম করে দিচ্ছে। এ ছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলীয় নেতা হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পক্ষপাতী। তবে এর আগে বিরোধী দলের সহিংসতা ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মকান্ডের নিন্দা জানানোর বিষয়টি তিনি অবজ্ঞা করেছেন। আসলে বাংলাদেশ এর চেয়ে ভাল কিছু করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত।

পাঠকের মতামত: