ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় বন্যা ও পাহাড় ধসে নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার

hcfcfh_2উখিয়া প্রতিনিধি ::::

কয়েকদিনের প্রবল বর্ষনে উখিয়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারনে ভয়াবহ দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই পযর্ন্ত বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া ও পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগসহ অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ঢুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল ১২ঘন্টা। এলাকার মৎস্যঘের, পানের বরজ, ক্ষেত-খামারসহ গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও সরকারি পক্ষথেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরন হয়নি।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, উখিয়ার বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিনি জানান ,আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করে এলাকার জনগনকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র গোলোতে নিয়ে গেছি। সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল গুলোতে বন্যার আক্রান্ত জনগনকে সরিয়ে নেওয়াসহ প্রতিটি এলাকার ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এলাকার জনগনের প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে যা যা করনীয় সবকিছু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে উখিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রসাশক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও বুধবার ভোররাত থেকে উখিয়ায় বিরামহীন একনাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকে। এতে পুরো উপজেলার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় ধ্বসে পড়ে এলাকার শত শত মাটির ঘরবাড়ি। বন্যার পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের ¯্রােতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাই ছড়ি এলাকার জাফর আলমের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছামিরা আক্তার (১৪) ও রত্নাপালং ইউনিয়নের মধ্যরত্না এলাকার অমূল্য বড়ুয়ার ছেলে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র ইতন বড়ুয়া (১৪)। নিহতদের উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, নিহত মাদ্রসা ছাত্রী ছামিরার লাশ রেজুখাল থেকে দুপুরের দিকে উদ্ধার করা হয়।
রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া ইতন বড়ুয়া। এদিকে বুধবার সন্দ্যার সময় রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা নামক এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বন্যার পানি দেখে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোঃ ইসলাম সাওদাগর (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে শাহারিয়ার বাপ্পি নামের এক শিশু মারা গেছে। লাশ উদ্ধার করে বৃহস্পিবার সকালে শিশুটিকে দাফন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিংড়ি ঘের সহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পানিবন্দী হয়ে পড়ে রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীর পাড়া, মৌলভীপাড়া, মালিভটা, ঘিলাতলী, ডিগিলিয়া, বড়ুয়া পাড়া, পাতাবাড়ি, হিন্দুপাড়া, হরিনমারা, দুছড়ি, উত্তর পুকুরিয়া, সিকদারবিল, পালংখালী ইউনিয়েনের রহতের বিল, ধামনখালী, আঞ্জুমানপাড়া, পশ্চিম পালংখালী, হলদিয়া পালং ইউনিয়েন চৌধুরী পাড়া, রুমখা সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম, জালিয়াপালং ইউনিয়নের নিম্ননাঞ্চল, রতœাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া, হিমছড়ি, গয়ালমারা, চাকবৈঠা সহ প্রায় ৪০টিরও অধিক গ্রামের মানুষ এখনও বন্ধী অবস্থায় রয়েছে।

তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সহশ্রাধিক বাড়িঘর, স্কুল-মাদ্রাসা ও অফিস-আদালত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্ষনের ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় ১২ঘন্টা মত। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যান চলা চল মোটামোটি স্বাভাবিক হলেও গ্রামীণ সড়ক গোলোর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। কাদা মাটির কারনে জনচলা চল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যহত থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সতর্ককতাজারী করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল জানান, ঘুমধুুম ইউনিয়নের আজুখাইয়া ফকিরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ছেমন খাতুন (৫৫) নামে বয়োবৃদ্ধ এক মহিলার করুন মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার আব্দুল মাজেদের স্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও তুমব্রু, কোনারপাড়া, নতুনপাড়া, বেতবুনিয়া সহ কয়েকটি এলাকায় বর্ষনের ফলে প্লাবিত হয়েছে। নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খোলা রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

বৃহস্পিবার দুপুরের সময় বান্দরবান পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য ও পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশাছিং এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নাইক্ষ্যং ছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরির্দশন করেছেন।

পাঠকের মতামত: