ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় দুই লক্ষ মানুষ পানিবন্দি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত : এলাকায় খাদ্য সংকট

Chakaria Pc 04-07-2017 (5)মিজবাউল হক, চকরিয়া :
mataটানা তিনদিনের ভারি বষর্ণে ও ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দিনভর বৃষ্টি হওয়ায় সকাল থেকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০হাজার একর চিংড়িঘেরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে যাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। গ্রামীণসড়ক পানিতে ডুবে থাকায় উপজেলার সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বড়ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ঢুকে পড়েছে। চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড় সহ উপজেলার কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, কোনাখালী, বিএমচর, ফাঁশিয়াখালী, পূর্ব বড়ভেওলা, পশ্চিম বড়ভেওলা, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, সুরাজপুর-মানিকপুর, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, বদরখালী ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা ও ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বাড়ি-ঘর ডুবে থাকায় শতশত মানুষ আশ্রয়ন কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ছোলার মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রান্না বান্নার কাজ করতে পারছে না। অনেকে শুখনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। অনেকেই খাদ্যের অভাবে উপোস থেকেছেন। গ্রামীণসড়ক গুলো ডুবে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলা শহরের সাথে। কাকারা ইউনিয়নের বার-আউলিয়া নগর এলাকার মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়রা জানান, পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলেও এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন ধরণের ত্রাণ সামগ্রী দূর্গত এলাকায় পৌছায়নি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু এলাকায় শুখনো খাবার বিতরণ করলেও এসব পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বানবাসিরা। চরম দূর্ভোগে পড়েছে ওইসব ইউনিয়নের মানুষ। সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি ১০৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিনদিনে এসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পুরো উপজেলায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সাহারবিল ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যে কোন মুুহুর্তে নাপিতপাড়া এলাকা ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সদ্য নির্মিত শাহপুরা বেড়ি বাধটির ৪চেইন ভেঙ্গে গেছে। সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে তিনি জানান। দ্রুত সময়ে তার ইউনিয়নে সরকারী সাহায্যের দাবী জানান তিনি।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। কৃষকের বীজতলা ও বিভিন্ন ধরণের ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নে উপজেলা পরিষদ ও ব্যক্তিগত ভাবে ৩০হাজার টাকার শুখনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। মানিকপুর এলাকার সবচেয়ে দুই শত বছরের পুরনো কিউকের মসজিদ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম জানান, ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গতবারের তুলনায় এবারে একটু পানি বেশি। বন্যার পানি ১০৭ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা থেকে মানুষ সরানো হচ্ছে। তাদেরকে আশ্রয়ন কেন্দ্র গুলোতে উঠানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলোতে এক লাখ টাকার শুখনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: