ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

স্ত্রীর অধিকার নিয়ে মরতে চাই !

258মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :::

বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়েছে মনোয়ারা বেগম (৫৪)। ইতিমধ্যে ক্ষিন হয়ে এসেছে দৃষ্টি এবং শ্রবন শক্তি। অধিকাংশ মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে। স্মরণ শক্তি খুব কম। লাঠি ভর করে হাঁটেন। অন্যের সহায়তা ছাড়া এক মুহুর্ত চলতে পারেনা। এদিকে জটিল রোগে আক্রান্ত অনেকদিন যাবৎ। ২ বছর হল চোখে ছানি পড়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ২ ছেলে আহমদ হোসেন (৩৫) ও মোঃ আলীর (২৫) সংসারে থাকেন। সন্তানরা অন্যের সংসারে মজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করে।

৩৭ বছরের সংসার জীবনে ৯ সন্তানের জননী হন মনোয়ারা বেগম। ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করা ৫ সন্তানকে নিজ হাতে কবর দিয়েছেন। ২ ছেলে আর ২ মেয়ে নিয়ে বেচেঁ আছেন। মাথা গুজার ঠাঁই নেই। অপর দিকে মনোয়ারা বেগমের স্বামী হাজী নুরুল কবির (৬০) বিশাল সম্পত্তির মালিক। বাড়ি বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব শিলের তুয়া গ্রামে। মনোয়ারা হাজী নুরুল কবিরের ২য় স্ত্রী।

কান্না জড়িত কন্ঠে মনোয়ারা বেগম বলেন, ৩৭ বছরের সংসার জীবন কখনও ছিলনা সুখের ছোঁয়া। দাসীর মত ছিলাম তার সংসারে। গ্রামের একপাশে ছোট একটা বাড়িতে ৪ ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকি। যে জায়গাও আমার না। তার স্বামী প্রথম স্ত্রীর সাথে থাকেন। সে সংসারে ১০ জন ছেলে মেয়ে। তারা সকলে শিক্ষিত। ভাল চাকুরী ও ব্যবসা করেন। কিন্তু আমার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে দেয়নি। ছোট থেকে নিজের সংসারের হাল চাষ কাজকর্ম করে বড় হয়েছে তারা। সমাজের কাছে আমাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়না আমার স্বামী হাজী নুরুল কবির।

তিনি আরো বলেন, তার স্বামীর শিলেরতুয়া বিলে ৫০ কানি ও রাঙ্গাঝিরিতে ৩০ কানি চাষের জমি, রাঙ্গাঝিরিতে ৬০ একর পাহাড়ি জমিতে বাগান ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় তিন তলা আবাসিক ভবন সহ প্রায় ১৫ কোটি টাকা অধিক সম্পত্তির মালিক। কোন কিছুর ভাগ দেয়া হয়না তাকে। সব কিছু বুঝেও চুপ করে ছিলাম। কিন্তু গত ১৬ মার্চ ২০১৭ইং আমার স্বামী তালাক নামা পাঠায়। এই বয়সে আমি কোথায় যাব। মূলত প্রথম স্ত্রীর সাথে যুক্তি করে আমাকে ও আমার সন্তানদের তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এই প্রচেষ্টা করছে। আমি স্ত্রীর অধিকার চাই। আমার সন্তানরা কি পরিচয়ে সমাজে বাস করবে ?

অসহায় মনোয়ারা বেগমের ছেলে আহমদ হোসেন ও মোঃ আলী বলেন, আমরা কখনও বাবার আদর পায়নি। আলাদা সংসারে থাকতাম। অন্যের সংসারে কাজ করে বড় হয়েছি। কাউকে কিছু বলিনি। বৃদ্ধ বয়সে এসে আমার মা স্বামী পরিত্যাক্ত হবেন সন্তান হিসেবে তা মেনে নিতে পারছিনা। ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিয়েও পায়নি। বাবার সম্পত্তি আছে। সবাই তার পক্ষে কথা বলে। আমার মা বিনা চিকিৎসায় মরছে আর বাবা তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে হজ্বে যাচ্ছে। মায়ের অধিকার ফিরিয়ে পেতে সকলের সহায়তা কামনা করি।

প্রতিবেশী হাসেম মিয়া (৫২), আব্দুল মান্নান (৫০), মনির হোসেন (৩৮), শাহজান কারবারী (৫৫) সহ অনেকে বলেন, হাজী নুরুল কবির মানুষ না। ছেলে মেয়ের ঘরে নাতি নাতনী হয়েছে। এই বয়সে এইসব (তালাক) ভাল দেখায় না। মনোয়ারা বেগম কে কখনও সুখ দেয়নি হাজী নুরুল কবির। একটু বসতবাড়ির জায়গা দিয়েছে তাও নিয়ে ফেলতে চায়। ২০/২৫ বার এবিষয়ে এলাকায় বিচার হয়েছে। সব দোষ হাজীর। সে প্রথম ঘরের স্ত্রী সন্তানদের পরামর্শে এইসব করছে। মনোয়ারা ও ছেলে মেয়েরা অসহায়। অশিক্ষিত বলে প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছেনা।

রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, স্ত্রীর তালাকের বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছে। আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দিব বলেছি। হাজী নুরুল কবির ও তার প্রথম ঘরের স্ত্রী সন্তানরা মানেনা।

পাঠকের মতামত: