ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মোবারকের বউয়ের “ঈদ মোবারক” বিপত্তি !

Eid mআতিকুর রহমান মানিক ::

প্রতিবছর ঈদের সময় মহা সমস্যায় পড়ে মোবারকের বউ রোমানা বেগম। বিয়ের পর থেকে বেচারীর শুধুমাত্র একটা সাধ পুরন হয়নি, এটা কখনো হবে বলেও মনে হয়না। এ নিয়ে আক্ষেপের অন্ত নেই তার। প্রতিবছর সবাই নানান রঙ্গে-ঢঙে ও ভঙ্গিতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে, কিন্তু কেন জানি বেচারীর ভাগ্যে এসব নেই। এ নিয়ে মহা হাহাকার, আহাজারী। কিন্তু সংস্কার ভাঙ্গতে তার অনীহা প্রবল। বেচারীর আক্ষেপের যেন শেষ নেই।
কিন্তু কেন এই বিপত্তি?
আমাদের সমাজ ব্যবস্হায় স্ত্রীরা কখনো স্বামীর নাম উচ্চারন করেনা। স্বামীর নাম উচ্চারন করতে নেই, এটা যেন অলংঘনীয় নিয়ম। রক্ষনশীল পরিবারের পুত্রবধুরা এটা পালন করে আসছেন সেই সু-প্রাচীন কাল থেকে। মেয়েরা দেখে, মা কখনো তাদের বাবার নাম ধরে ডাকেননা, গৃহবধুরা দেখে বর্ষীয়সী শাশুড়ী ভূলেও কখনো শাশুরের নাম উচ্চারণ করেননা। তোমার শশুর, অমুকের বাপ, এই বলেই স্বামীর কথা উল্লেখ করেন তারা। আবহমান বাংলার হাজারো বছরের  পারিবারিক রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কার এটাই। এখানে স্ত্রীরা কখনো স্বামীর নাম মুখে আনেনা।
আর এতেই রোমানা বেগমের যত সমস্যা। ঈদ শুভেছা জানাতে “ঈদ মোবারক” শব্দটা বলা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই, ঈদ মোবারক বলতেই হবে। অথচ ঈদ মোবারক বললেই স্বামীর নাম মুখে আনতে হয়, কারন তার স্বামীর নাম “মোঃ মোবারক”। কিন্তু স্বামীর নাম কি মুখে আনা যায়? চুলায় যাক ঈদ শুভেচ্ছা, তওবা, তওবা !!
বেচারী ইচ্ছা করলেও তাই কাউকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে পারেনা। অথচ এটা কি সবাই বুঝে ? আড়ালে অনেকে তাকে অহংকারী বলে ডাকে, কিন্তু মূল ব্যপারটা কয়জনে বুঝে ?
তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বান্ধবী কিন্তু ব্যাপারটা জানে। তাদের গবেষনালদ্ধ আন্তরিক পরামর্শে এর আগে “ঈদ মোবারক”র বিকল্প পদ্ধতিও ব্যবহার করেছে সে। কিন্তু এতে বিপত্তি আরো বেড়েছে।
এইতো কয়েকবছর আগের ঈদের ঘটনা, মোবারকের এক খালা বেড়াতে এলেন। রোমানা বেগম তাকে “হ্যাপি ঈদ ডে” বলে উইশ করায় তিনি রেগে টঙ। সহজ-সরল খালার বদ্ধমূল ধারনা, মোবারকের শিক্ষিত বউ তাকে ইংরেজীতে গালি দিয়েছে ! তাই ঈদের দিন তিনি একগ্লাস পানিও না খেয়ে চলে গিয়েছিলেন।
গত বছর আরো বিব্রতকর পরিস্হিতি। ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে রীতিমত থিসিস করার পর আরেকটা পদ্ধতি মাথায় আসে তার। ঈদের দিন মোবারক বন্ধুদের নিয়ে   বাসায় এল। তাদের দশ বছরের ছেলে, নাম পল্টু। তার দ্বারা ড্রইংরুমে নাস্তা-পানি পাঠাবার পর রোমানা পানের বাটা নিয়ে তাদের সামনে গেল। মোবারকের বন্ধুরা সবাই সমস্বরে “ঈদ মোবারক, ভাবী” বলে উইশ করল। তখন প্রতিউত্তরে রোমানাও থিসিসলদ্ধ পদ্ধতিটা এ্যপ্লাই করে “ঈদ আমাদের পল্টুর বাপ” বলে উইশ করল। (এখানে ঈদ মানে ঈদ, আর পল্টুর বাপ মানে মোবারক, সুতরাং দুইয়ে মিলে ঈদ মোবারক। স্বামীর নামও ধরতে হলোনা, আবার ঈদের উইশও করা হল ! কিন্তু  মোবারকের বন্ধুরা এর শানে নুযুল শুনে হেসেই খুন। তখন থেকে সময়-অসময়ে ফোন করে রোমানাকে ক্ষ্যাপায় তারা।
এরকম করুন ঘটনা আরো ঘটেছে। তাই উভয় সংকটে পড়ে রোমানা আর কখনো কাউকে ঈদ শুভেচ্ছা না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বামীর নাম মুখে না আনার সংস্কারে বিশ্বাসী বাংলার বধুরা চিরকাল এরকমই, এটাই আবহমান বাংলার চিরায়ত সোনালী ঐতিহ্য।
ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক সুখ শান্তুি ও সমৃদ্ধি।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কয়েকটি লাইন,
“জীবনে যাদের হররোজ রোজা
ক্ষুধায় মেটেনি নিদ,
আধমরা সেই কৃষকের ঘরে
এসেছে কি আজ ঈদ”?
আসুন ঈদে গরীব-দুঃখীর পাশে দাঁড়াই, তবেই হবে প্রকৃত ঈদ উদযাপন।
ঈদ আনন্দ হোক সবার জন্য,
ঈদ মোবারক সবাইকে।
==========================
আতিকুর রহমান মানিক
ফিশারীজ কনসালটেন্ট ও সংবাদকর্মী।
মুঠোফোন -০১৮১৮-০০০২২০

পাঠকের মতামত: