ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পথশিশুদের বন্ধু সাদিয়া

sadiaঅনলাইন ডেস্ক :::

সময়টা ২০১৬ সালের শেষের দিকে। পুরো বিশ্বে তখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তোলপাড়।
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা জানের ভয়ে পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা প্রচণ্ড শীতে পলিথিন মোড়ানো ঘর বানিয়ে রাত কাটাচ্ছে। সবদিকে যখন রোহিঙ্গা নিয়ে কথা হচ্ছে মেয়েটি তখন ছুটছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা সংগ্রহে। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে টাকা জোগাড়ের জন্য ছুটে বেড়ান মাঠে-ঘাটে। সশরীরে দুর্গম এলাকায় গিয়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন রোহিঙ্গাদের ক্ষত-বিক্ষত শরীরে।

মেয়েটির নাম সাদিয়া। পুরো নাম সাদিয়া বিনতে শাহজাহান। কৈশোর পেরোনোর তারুণ্য যাকে ছুঁয়ে গেছে বারবার কেবল মানবতার ডাকে। সুবিধাবঞ্চিতদের কষ্ট তাঁর হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পথশিশুদের আলোয় ফেরানোর স্বপ্ন তাঁর চোখে মুখে। সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে।

সাদিয়ার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার জনার কেঁওচিয়া গ্রামে। বাবা এ জি এম শাহজাহান ৮০ এর দশকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজনীতিবিদ তিনি। মা জেসমিন আক্তার পেশায় শিক্ষক। দুই ভাই বোনের মধ্যে সাদিয়া বড়। এসএসসি পাস করেছেন বাইতুল ইজ্জত রাইফেল পাবলিক স্কুল থেকে এবং এইচএসসি চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতকে কৃতিত্বের সঙ্গে ফার্স্ট ক্লাস পান। স্নাতকোত্তরেও ভালো ফলাফলের ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী তিনি।

মানুষ এবং সমাজের জন্য কাজ করার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি করেন। তাঁর লেখা কবিতা ও গল্পে গঠনমূলকভাবে ওঠে এসেছে সমাজের বঞ্চিতদের জয়গান এবং যুক্তির কথা। তাঁর এই অকৃত্রিম প্রতিভার স্বাক্ষর হিসেবে এবারের বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দরিয়ার চিঠি’। গ্রন্থটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে পাঠকমহলে।

সাদিয়া চট্টগ্রামের পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন প্রায় ছয় বছরের বেশি সময় ধরে। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে চিরন্তন নামে পথশিশুদের একটি অধিকারমূলক সংগঠনের সূচনা করেন। পথশিশুদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত সাদিয়া বলেন, ‘ফুটপাতে চলতে গিয়ে হাড্ডিসার ধুলোমাখা পথশিশু দেখলে চোখ ফেটে কান্না বেরুতো। রাস্তার পাশে খালি গায়ে শুয়ে আছে ওরা, দৌড়ে গিয়ে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতাম। আরাম পেয়ে চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতো। এটাই আমার জীবনের সবচেযে বড় তৃপ্তি। ’

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক সংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন বহুদিন ধরে। ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংস্থা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুব শাখার নগর সম্পাদক তিনি। অন্যদিকে, সামাজিক উদ্যোক্তা তৈরির যুব সংগঠন ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রজেক্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন ২০১৬ সাল থেকে।

নেতৃত্বের গুণাবলি যেন তার চোখে মুখে। এরই ধারাবাহিকতায় একজন সফল

রোটেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন স্বনামধন্য রোটারি ক্লাব অব গ্রেটার চিটাগংয়ের সঙ্গে। আরো যুক্ত আছেন তরুণদের সমাজসেবার উত্কর্ষ প্রতিষ্ঠান ভলান্টিয়ার অব বাংলাদেশের নগর শাখার সঙ্গে। সাফল্য তাঁর দরজায় কড়া নেড়েছে সবসময়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনিভার্সাল পিস ফেডারেশনের উদ্যোক্তা নেপালের পোখরাতে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ কনফারেন্স ‘রিলেজিয়াস ইয়ুথ সার্ভিস এজেন্ট ২০১৫’তে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।

পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে দরকার হয় পারিবারিক সমর্থন। যা সবসময় বাবা-মার কাছ থেকে পেয়েছেন সাদিয়া।

তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি মানুষের জন্য কাজ করলেও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে নিজেকে আরো বিকশিত করা সম্ভব। মানুষের দোয়া অনেক সময় জীবনের প্রেরণা হয়ে ওঠে। ’

সামাজিক কাজের পাশাপাশি আগ্রহ আছে ফটোগ্রাফি ও ফিল্ম তৈরিতে। বন্ধুরা মিলে ২০১৫ সালে ছোট উদ্যোগে শুরু করেন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি প্রোডাকশন হাউস ‘পেপার এয়ার প্লেন’।

সাদিয়ার স্বপ্নগুলো থেমে নেই, এগোচ্ছে দুর্বার গতিতে। সমাজসেবা, ফটোগ্রাফির পাশাপাশি লেখালেখিটাকেও ধরে রাখতে চান জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা ছোটগল্প ও কবিতা ছাপা হয়। অবসর সময়ে ডুব দেন বইয়ের সমুদ্রে। বইকে ভালোবাসেন অকৃত্রিম বন্ধুর মতো।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘কমিউনিকেশন বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে। এ বিষয়ে উচ্চতর

গবেষণা ও ডিগ্রি গ্রহণের খুবই ইচ্ছে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগোচ্ছি। পাশাপাশি সমাজসেবায় নিজেকে যুক্ত রাখতে চাই আমরণ। ’

পাঠকের মতামত: