ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদার টাকায় কেন ইফতার পার্টি?

mr mahএম আর মাহমুদ

এম.আর মাহমুদ ::;

পবিত্র রমজান মাস আসলেই ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা কিছু খ্যাত-অখ্যাত সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণির অতি উৎসাহী নেতাকর্মী ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয় সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় যাদের কাছ থেকে কিছু দয়া দাক্ষিণ্য জুটে। ইফতার পার্টি প্রকৃত রোজাদার ও বিপণœ হকদারদের কপালে ইফতারের প্যাকেট ভুলেও জুটে না। ইফতার পার্টির আয়োজকরা বেশিরভাগ সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও অর্থশালীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে এসব ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকে বলে গরীব বিপণœদের কপালে ইফতারের প্যাকেট জুটে না। কারণ কথায় আছে ‘নিষ্ফলা গাছে বানরও উঠে না’। ইফতার পার্টির আয়োজকরা ইফতার পার্টির ব্যয় বহনের জন্য জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের কাছ থেকে নানা কাকুতি মিনতি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করে থাকে। এ টাকা দিয়ে তারা ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এতে দাওয়াত পায় সমাজের জনপ্রতিনিধি, অর্থশালী ব্যবসায়ী ও সমাজের প্রভাবশালীরা। ভুলেও এসব ইফতার পার্টিতে ভুখা নাঙ্গা, হতভাগা, হতদরিদ্র ও কাঙ্গাল শ্রেণির লোকজন ইফতার পার্টির ধারে কাছেও স্থান পায় না। সারাদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রোযা রেখে অবৈধভাবে অর্জন করা অর্থের বিনিময়ে উন্নতমানের ইফতার করে লাভটা কি? এর পিছনে কোন যুক্তি আছে কি?

সম্প্রতি দেশে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও অতি বর্ষণজনিত কারণে পাহাড় ধ্বসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় ধ্বসের কারণে দেড় শতাধিক বিপণœ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসের পর মাটিতে মিশে যাওয়া নারী-পুরুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর মেজর মাহফুজ ও ক্যাপ্টেন তানভীর সহ ৬ জন প্রাণ দিয়েছে। তারা দেশের বিপণœ মানুষের জন্য প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনও দেশপ্রেম আছে। জাতির কাছে এদের নাম স্বর্ণাক্ষরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন ইফতার পার্টি বাদ দিয়ে ইফতার পার্টির জন্য বরাদ্দকৃত ঘূর্ণিঝড় মোরা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করছে। কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ আজ শুক্রবার চকরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এজন্য চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বর্ষা সবে মাত্র শুরু হয়েছে। ভাদ্র মাস পর্যন্ত বর্ষণ কম বেশি অব্যাহত থাকতে পারে। পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসরত বনি আদমগুলো যে কোন মূহুর্তে আরো বড় ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। প্রশাসন অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঠেকাতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনকে সরিয়ে নিতে পারে। অন্যথায় বিপর্যয় কমবে না; বরং দিন দিন বাড়বে। নির্ধারিত কয়েকটি জেলায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ফলে গাণিতিক হারে প্রাণ হানির সংখ্যা বাড়ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধণাঢ্য ব্যক্তিরা যেভাবে হোক অর্থ কামায় করে সমাজে অর্থশালীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তারা কি পাহাড় ধ্বসে নিহত ও আহত পরিবারের পাশে সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে দেখা যাচ্ছে? অবস্থা দেখে মনে হয়, টাকা থাকলে নেতৃত্ব ক্রয় করা যায়। কিন্তু বিপণœ মানুষের মন জয় করা কঠিন। কাঙ্গালেরা জীর্ণশীর্ণ কাপড় পড়ে নেতা পাতি নেতা এমন কি অর্থশালী সন্ত্রাসীদের পেছনে ঘুর ঘুর করে স্বার্থ আদায়ের আশায়।

রমজান মাস প্রায় শেষ পর্যায়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে এ বছর অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রকৃত রোজাদারেরা ২০টি রোজা যথাযথভাবে রাখার সুভাগ্যবান হয়েছে। এছাড়া তৌফিক অনুপাতে ইফতারও করেছে। তবে বেশি উন্নত মানের না হলেও এসব রোজাদারদের অনুশোচনা নেই। যেমন গরিবের ইফতার চনা মুড়ি, কালে ভাদ্রে পিয়াজু, জিলাপি, লেবু মিশ্রিত শরবত। আর পরের টাকায় যারা ইফতার নামক বিলাসিতা করে (তাদের মধ্যে অসংখ্যই বেরোজাদার)। তাদের ইফতারের মানটা একটু উন্নত হওয়া স্বাভাবিক। এখানে থাকে চনা, পিয়াজু, মুড়ি, খেজুরি, আম, আনারস, হালিম, জুস সাথে বিরাণী ভাত। এ প্রসঙ্গে গ্রামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘আল্লাহ তুমি মালিক, কাউরে দিছ টিয়ার বাচ্চা কাউরে দিছ শালিক।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘শকুন গরুর মাংস ছাড়া কিছুই খায় না।’ কিন্তু শকুন খায় মরার গরুর মাংস। শকুনকে যদি ৫/৬‘শ টাকায় গরুর মাংস কিনে খেতে হত শকুন কি কোনদিন মাংসের স্বাদ গ্রহণ করত? আসলে বেশি বলাই বিপদ। দেশে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের করুণায় ইফতার সংস্কৃতি প্রচলন হয়েছে। যা ছড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির ধান্দাবাজরা। তাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়। নিজেদের আখের গুজানোই মূল উদ্দেশ্য। এক সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ডিসি, ইউএনও, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে মাননীয় সংসদ সদস্যরা এসব ইফতার মাহ্ফিলের আয়োজন করত। এখানে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, সংবাদকর্মী সহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকে দাওয়াত দেয়া হত। দাওয়াত পাওয়া সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরাও জেলা ও উপজেলায় বড় ইফতার মাহ্ফিলের স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ করত। এখন সে মানের ইফতার পার্টি আর নেই। এখন যারা ইফতার পার্টির আয়োজন করে তাদের উদ্দেশ্য মহৎ নয় যা অনুসন্ধান করা দরকার। নির্ধারিত কিছু ব্যক্তির টাকায় ইফতারের আয়োজন করে। বেঁচে যাওয়া টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে পরে নানা নোংরা কথাবার্তা শোনা যায় যা অত্যন্ত বেদনা দায়ক। অথচ আয়োজকরা এসব না করে শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও অতি বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে নিহত আহতদের পরিবার পরিজনের সহায়তায় এগিয়ে আসলে তাদের কথা সমাজ ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আজীবন স্মরণ রাখবে।

এম.আর. মাহমুদ

পাঠকের মতামত: