ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলেও সামান্য ত্রান নিয়ে সন্তোষ হতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্থরা

Chakaria Pc 31-05-2017মিজবাউল হক, চকরিয়া :::

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র ক্ষত পুষিয়ে উঠতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনযাত্রা। গতকাল বুধবার থেকে আশ্রয়ন কেন্দ্র গুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্থরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভার মধ্যে ১৫টি ইউনিয়নে ১২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে এতোবড় উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলেও সামান্য ত্রান নিয়ে সন্তোষ হতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্থরা।

এদিকে মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে শতশত ঘর-বাড়ি, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। হাজার হাজার গাছ-পালা বাতাসের বেগে পড়ে গেছে। শতশত একর চিংড়ি ঘের জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। বিদ্যুৎ লাইন বিছিন্ন থাকায় এখনো সংযোগ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। মঙ্গলবার টানা চার ঘন্টা ধরে ঝড়ো বাতাস বয়ে গেছে এই উপজেলা দিয়ে।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র তান্ডব। লন্ডবন্ড হয়ে যায় চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। প্রায় বিশ হাজার একর চিংড়িঘের জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষীদের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাদের বিনিয়োকৃত কোটি কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারেনি। ঘূর্ণিড়ের মোরার আঘাতে মৎস্য চাষীদের স্বপ্ন, যেন দূ’স্বপ্নেœ পরিণত হয়েছে। এতে প্রায় একশত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মৎস্য চাষীরা। পুরো উপজেলায় একাধিক বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ-পালা পড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে এখনো উপজেলায় বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে বলে জানান চকরিয়া বিদ্যুত বিভাগের আবাসিক প্রকৌশল ফয়জুল আলীম আলো। তিনি আরও বলেন, মোরা’র আঘাতে সড়কে সেসব গাছ পড়ে আছে। সেগুলো দ্রুত সময়ে সরানো হচ্ছে। তাছাড়া তেত্রিশ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান হলে আজ বা কালের মধ্যে বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হবে। চকরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৯/০৫/২০১৭ হইতে ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং পুন: নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষনিক দপ্তরে উপস্থিত থাকার জন্য আদেশ প্রদান করা হয়েছে। উপকূলীয় ইউনিয়ন গুলোতে প্রায় দশ হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এসব ঘরের হাজার হাজার নারী-পুরুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘরের ছুলা ভেঙ্গে যাওয়ায় রান্না বান্নার কাজ করতে পারেনি। অনেক রোজাদার শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছেন। সরকারের তৎপরতা ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যাপক প্রচারণায় প্রাণহানি ঘটেনি। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রায় তিনশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক মাঠে থাকায় দ্রুত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠানো হয়েছে বলে জানান চকরিয়া টীম লিডার নুরুল আবছার। গতকাল থেকে চকরিয়ার আশ্রয়ণ কেন্দ্র থেকে মানুষ পুরনো বসত ভিটায় উঠেছে। ধীরে ধীরে জীবন যাত্রা শুরু করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি বা বেসরকারী উদ্যোগে এখনো কোন ধরণের ত্রান সামগ্রী পৌছায়নি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায়। তবে গতকাল বুধবার ১৮টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভার মধ্যে ১৫টি ইউনিয়নে ১৩ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন।

এরমধ্যে সাহারবিল, পশ্চিম বড়ভেওলা, কোনাখালী, বিএমচর, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, পূর্ববড়ভেওলা, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নে এক মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফাশিয়াখালী, বরইতলী, হারবাং, বমুবিলছড়ি, কাকারা ও কৈয়ারবিল আধা মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জনপ্রতি দশ কেজি করে চাল তুলে দেয়া হয়। ক্ষতির তুলনায় ত্রান সামগ্রী অপ্রতুল হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল জানান, তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই তুলনায় সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। দ্রুত সময়ে আরও বেশি ত্রান সামগ্র পৌছানের সরকারের কাছে দাবী জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম জানান, ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায়। ইতোমধ্যে প্রত্যেক ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ চাওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রান সামগ্রীর জন্য সরকারের উর্ধ্বতনমহলে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ##

পাঠকের মতামত: