ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামা-আলীকদমের অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো: পাহাড়ি পল্লীতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট, জন্ডিস ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা

tiubলামা প্রতিনিধি :::

লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলতি মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া এবং অধিকাংশ রিংওয়েল ও টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ায় এ সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। ফলে দু’ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় বসবাসরত উপজাতি ও বাঙালি জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়েই মাতামুহুরী নদী, পাহাড়ি ঝিরি, ঝর্ণা, পাতকুয়া ও পুকুরের দূষিত পানি পানসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেছে। নদী, ঝিরি, ঝর্ণা, পাতকুয়া ও পুকুরের পানি পান করা এবং ব্যবহার করায় লোকজনের মাঝে জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা উপজেলার গজালিয়া, লামা সদর, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকার উপজাতি ও বাঙ্গালী পাড়া পল্লীগুলোতে সর্বত্রই এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। লামা পৌরসভা সদর এলাকার বাসিন্দাগণ পৌরসভার পানি সরবরাহের বদৌলতে কিছুটা বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পেলেও উপজেলার অন্য সাত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ী পল্লীগুলোর হাজার হাজার পরিবারকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এলাকার লোকজনের মধ্যে চলতি শুস্ক মৌসুমে হাহাকার হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে লোকজন দিক-বেদিক ছুটাছুটি করছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। অপরদিকে, দুর্গম এলাকার অধিকাংশ সরকারী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বিদ্যালয়গুলোর শতশত ছাত্র/ছাত্রী খাবার পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

একই ভাবে চলতি শুস্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে আলীকদম উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নলকূপ, ডিপ টিউবয়েল, ঝিরি-ঝর্ণার, পুকুর, ছড়া, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ঝিরি-ঝর্ণা, খাল-বিল ও ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে করে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের আনাচে কানাচে স্থাপিত বেশীরভাগ রিংওয়েল ও টিউবওয়েল গুলোতে পানি নেই বললে চলে। দুর্গম এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার চিত্র আরো ভয়াবহ। আলীকদম উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আদিবাসী ও বাঙালী নারীরা পানীয় জলের অভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা পায়ে হেটে কয়েক মাইল পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে পানিয় জল সংগ্রহ করছে। আলীকদম চৈ ক্ষ্যং এলাকার বাসিন্দা মোঃ মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, আলীকদম সদর, চৈক্ষ্যং, নয়াপাড়া ও কুরকপাতা ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ঝিরি খাল শুকিয়ে যাওয়ায় রীতিমত পানির জন্য এলাকায় হাহাকার শুরু হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যওয়ায়, আলীকদম উপজেলায় উত্তরপালং পাড়া, পূর্বপালং পাড়া, প্রভাত পাড়া, সিলেটি পাড়া, আবু মাঝি পাড়া, বাঘেরঝিরি, যোগেন্দ্র পাড়া, তারাবনিয়া, রোয়াম্ভূ বশির সর্দার পাড়া, নয়া পাড়া এলাকায় যে সব নলকূপ ও রিংওয়েল রয়েছে সেগুলোতে পানি পাচ্ছে না। আলীকদমে দূর্গম পাহাড়ী এলাকা পোয়ামূহুরী, কুরুকপাতা, দোছরী ও মাংগুর পাহাড়ী পল্লীগুলোর চিত্র আরো ভয়াবহ। এসকল এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তেমন উৎস নেই বললেই চলে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, লামা ও আলীকদম উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার বেশির ভাগ মানুষই চলতি মৌসুমে বাধ্য হয়ে পাহাড়ী ঝিরি, ঝর্ণা ও কূয়ার পানি পানসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা শুরু করেছে।

ফলে লোকজনের মাঝে পানিবাহিত রোগ জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা সদর হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ভূক্তভোগী জনসাধারনের অভিযোগ, শত শত রিংওয়েল ও টিউবওয়েল দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত রিংওয়েল ও টিউবওয়েল বেশির ভাগ সময় ঠিকাদাররা দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করে বর্ষা মৌসুমে বসানোর কারনে খুব সহজে অল্প গভীরতায় পানি পেয়ে যায়। যে গুলোতে শুস্ক মৌসুম এলেই আর পানি পওয়া যায়না। এভাবে দু’ উপজেলায় শত শত রিংওয়েল, টিউবওয়েল অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

এ বিষয়ে লামা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান বিশুদ্ধ পানির সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চলতি মৌসুমে অকেজো নলকূপ সংস্কারে কোন বরাদ্দ না হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট লাঘবে লামায় ৯০টি ডিপ-টউবওয়েল এবং ১৬টি রিংওয়েল এবং আলীকদমে ২৮ টি রিংওয়েল নতুন করে বসানো হবে।

দু’ উপজেলার ভুক্তভোগী জনসাধারন এলাকার পানীয় জলের সমস্যা সমাধান কল্পে অকেজো নলকূপ গুলো দ্রশুত সংস্কার এবং জন সংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক নলকূপ স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: