ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাদ্রাসায় পড়ে তাক লাগানো ফল হিন্দু ছাত্রী

madrasa_student_pic_kkডেস্ক রিপোর্ট ::
মুসলমান পরিবারের ছেলেমেয়েরাই সাধারণত হাই মাদ্রাসায় পড়তে যান বা ভাল ফল করে থাকেন। কিন্তু এ যেন উলটপুরাণ। চারিদিকে যখন সমগ্র ভারতে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ চলছে, সেই সময়ে এক উজ্জ্বল নিদর্শন তৈরি করল পশ্চিম বঙ্গের হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের খলতপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী প্রশমা শাসমল। হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মেয়েদের মধ্যে তৃতীয় এবং রাজ্যের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই হিন্দু ছাত্রী।

তার প্রাপ্ত নম্বর ৭২৯। উদয়নারায়ণপুরের কুরচিশিবপুরের বাসিন্দা পেশায় পাঁচারুল গ্রাম পঞ্চায়েতের জব অ্যাসিস্টেন্ট পদে কর্মরত প্রশান্ত শাসমলের কন্যা প্রশমা ভবিষ্যতে পদার্থ বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বলে জানিয়েছে। প্রশমার ভাই প্রমিত শাসমলও খলতপুর মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। প্রশমা জানায়, বরাবরই তার লক্ষ্য ছিল ভাল ফল করার। তার এই সাফল্যের পিছনে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাহায্য অনস্বীকার্য বলেও জানায় প্রশমা।

প্রশমা আরও জানায়, সে আগে উদয়নারায়ণপুরেরই গড়ভবানীপুর উষারানি করাতি বালিকা বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী ছিল। পরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সে এই খলতপুর হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। সে জানায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে তার আগের বিদ্যালয়ের সঙ্গে এই মাদ্রাসার কোনও তফাৎ আছে বলে তার কখনওই মনে হয়নি।

প্রশমার বাবা প্রশান্ত শাসমল জানান, আমি জানতাম এই মাদ্রাসার লেখাপড়ার মান খুব ভাল, সেই কারণেই মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এখানে ভর্তি করেছিলাম। আমার সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, প্রশমার ফলেই তা প্রমাণিত হল।

প্রশমার মা ঝুমা শাসমল বলেন, তাঁর মেয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দিনে সাত-আট ঘণ্টা পড়াশোনা করত। মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রশমার পড়াশোনার দিকে বরাবর নজর রাখতেন। পরীক্ষার আগে কয়েকটি বিষয়ের জন্য তাঁরা গৃহ শিক্ষকের ব্যাবস্থা করেছিলেন বলেও তিনি জানান।

হিন্দু মেয়েকে কী ভেবে মাদ্রাসায় ভর্তি করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঝুমা দেবী বলেছেন, আমার মেয়ে বরাবরই খুব মেধাবী। আমি জানতাম এই মাদ্রাসার পড়াশোনার মান অত্যন্ত ভাল। মেয়ের মেধার বিকাশের জন্য একটি ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল সেটি মাদ্রাসা হোক বা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

পাশাপাশি তিনি আরও জানান, অনেকের মনের মধ্যে ভূল ধারণা রয়েছে যে মাদ্রাসায় ভাল মানের পড়াশোনা হয়না। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। প্রশমা এই খলতপুর হাই মাদ্রাসাতেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে বলেও তিনি জানান।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তথা খলতপুর আল আমীন মিশনের সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীদের এরকম সাফল্যে তিনি আনন্দিত এবং গর্বিত। তিনি আরও জানান, গতকাল মঙ্গলবার প্রশমাকে এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, খলতপুর মাদ্রাসা থেকে এই বছরে তেত্রিশ জন ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষায় বসেছিল। তাদের মধ্যে এগারো জন ছেলে এবং বাইশ জন মেয়ে। মেয়েদের মধ্যে নয় জন হিন্দু ছাত্রী। তেত্রিশজন ছাত্র ছাত্রীর সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছে। ছয়জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই সাফল্যকে ঘিরে মাদ্রাসায় ছিল উৎসবের পরিবেশ।

পাঠকের মতামত: