ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় জায়গার বিরোধের জেরে টাকার চুক্তিতে সাধন জলদাশকে শ্বাসরোধে হত্যা

hottaআদালতে গ্রেপ্তারকৃত এক আসামির স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের পাশের মরিচ ক্ষেত থেকে গত ৯ মে (মঙ্গলবার রাতে) উদ্ধার করা অজ্ঞাত লাশের (সাধন চন্দ্র জলদাশ) পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর এবার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি নতুনভাবে মোড় নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সংগঠিত এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত এক আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার মাধ্যমে ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে।
চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলাম ও থানার ওসি মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ অভিযানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কাওছার উদ্দিন চৌধুরী তদন্তের শুরুতে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া দুই ঘাতককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনাস্থ জলদাশ পাড়া গ্রামের গুনহরী জলদাশের ছেলে বিরট জলদাশ ও একই ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজঘোনা গ্রামের আবুল ফজলের ছেলে সিরাজুল মোস্তাফা জামাল।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মামলার সন্দেহভাজন আসামি বিরট জলদাশকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রিরত জলদাশ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ঘটনার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেন। তার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি পুলিশ ১৫১ ধারায় রেকর্ড করেন। এরপর রিবত জলদাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় সিরাজুল মোস্তাফা জামালকে।
ওসি বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল মোস্তাফা হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি খোলাসা করেন। এরপর সে স্বেচ্ছায় এব্যাপারে আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গ্রেফতারকৃত সিরাজুল মোস্তাফাকে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে তিনি আদালতের বিচারকের কাছে হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। একই সাথে আদালতের কাছে সংগঠিত হত্যাকান্ডের সাথে অন্য যাঁরা জড়িত তাদের পরিচয় সনাক্ত করেন। ওসি বখতিয়ার চৌধুরী বলেন, জবানবন্দি গ্রহন শেষে আদালতের বিচারক গ্রেফতারকৃত আসামি সিরাজুল মোস্তাফা জামালকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এদিকে মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে সংগঠিত হত্যাকান্ডের নেপথ্যে উৎঘাটন ও ঘটনায় জড়িত দুই আসামি গ্রেফতার এবং আদালতে দায় স্বীকার করে এক আসামির জবানবন্দি দেয়ার ঘটনায় গতকাল রাতে চকরিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এব্যাপারে প্রেস বিফ্রিয়ের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠিত প্রেস বিফ্রিয়ে সহকারি পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম নিহত সাধন চন্দ্র জলদাশ হত্যাকান্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া আসামি সিরাজুল মোস্তাফা জামালের বরাদ দিয়ে এএসসি মতিউল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এলাকার কতিপয় মহল ১লাখ ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাধন জলদাশকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের কিশিং মিশনে অংশ নেয় মোট ৯জন। তারমধ্যে পুলিশ ২জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমে ঘটনার রাতে সাধন জলদাশকে ঢেকে নিয়ে নেশা জাতীয় কিছু দ্রব্য খাইয়ে দেয়া হয়। পরে আস্তে আস্তে সে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে মরিচ ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে শ^াসরোধ করে ও অন্ডকোষ চেপে ধরে তাকে হত্যা করা হয়। লাশটি মরিচ ক্ষেতে রেখে দেয়ার আগে ঘাতকরা তাঁর মুখমন্ডলে লোমনাশক ওষুধ (ভিট) মাখিয়ে দেয়। যাতে সহজে কেউ তাঁর পরিচয় সনাক্ত করতে না পারে।
এএসসি মতিউল ইসলাম আরো বলেন, আদালতে গ্রেফতারকৃত আসামি সিরাজুল মোস্তাফা জামাল আরো স্বীকার করেছে, ঘটনার সময় যাতে নড়াছড়া করতে না পারে সেইজন্য সে (সিরাজুল মোস্তাফা) সাধন জলদাশের পা চেঁেপ ধরে। অন্যরা গলা ও অন্ডকোষ চেপে ধরে। ঘটনাটি জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংগঠিত করা হয়েছে বলে আদালতের কাছে এমন তথ্য গ্রেফতারকৃত আসামি সিরাজুল জানিয়েছে। তবে জমি সংক্রান্ত বিরোধের পাশাপাশি নারী সংক্রান্ত ঘটনাও থাকতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আশাকরি সহসা পুলিশ সাধন হত্যাকান্ডের কিশিং মিশনে অংশ নেয়া সকল ঘাতককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ৯ মে (মঙ্গলবার রাতে) চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের পাশের মরিচ ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় একটি অজ্ঞাতনামা লাশ। লাশটি উদ্ধারের সময় মুখমন্ডলের আকৃতি নষ্ট হওয়ায় নিহতের পরিচয় তাৎক্ষনিকভাবে কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। পরে আদালতে নির্দেশে লাশটি ময়নাতদন্ত শেষে কক্সবাজার আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাপন করা হয়। ওসি বলেন, শনিবার (১৩ মে) সকালে নিহতের ছেলে নবম শ্রেনীতে পড়–য়া শিক্ষার্থী শান্ত কুমার সুশীল চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে নিহত ব্যক্তি তাঁর বাবা সাধন চন্দ্র জলদাশ বলে সনাক্ত করেন। এরপর দাফনের তিনদিন পর লাশটি কবর থেকে উত্তোলন করে বাড়িতে নিয়ে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী লাশের দাহ সম্পন্ন করা হয়।
নিহত সাধন চন্দ্র সুশীল উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনাস্থ শিলপাড়া গ্রামের অশি^ষী কুমার জলদাশের ছেলে। লাশটি উদ্ধারের ঘটনায় ১৪ মে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির বাদি থানার এসআই আবদুল খালেক। #

পাঠকের মতামত: