ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারের সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীরা একবছর পার হলেও ধরাছোয়ার বাইরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার::coxs

কক্সবাজারের ৬ সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার এক বছর পার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে  মামলার প্রধান আসামি নুরুল হক ওরফে ভুট্টো সহ তার সহযোগীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি তাকে।

২০১৬ সালের  ১৩ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু, সময়  টিভির স্টাফ রিপোর্টার সুজা উদ্দিন রুবেল, একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম মিন্টুসহ ছয় সাংবাদিককে ভুট্টোর নেতৃত্বে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ সময় একটি মাইক্রোবাস, সাংবাদিকদের ব্যবহৃত ক্যামেরা, ল্যাপটপ ভাংচুর ও লুট করা হয়।

এঘটনার পর তৌফিকুল ইসলাম লিপু বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভুট্টোকে প্রধান আসামী করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

টেকনাফে হামলার কয়েকদিন পর কক্সবাজার শহরে পৌরসভার গেইটের সামনে মামলার বাদি লিপু ও আহত রুবেলের উপর পুনরায় ভুট্টোর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসময় তাদের অপহারণের চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় সুজা উদ্দিন রুবেল বাদি হয়ে ভুট্টোকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডের থানায় অরেকটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৬০/৩৮৬। বর্তমানে মামলা দুইটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সন্ত্রাসী ভুট্টোর বিরুদ্ধে ইয়াবা, মানব পাচারসহ একাধিক মামলা থাকলেও কোন মামলায় এখনও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না, এমনই  অভিযোগ স্থানীয়দের। টেকনাফ এলাকার লোকজন জানান, মাসোয়ারার বিনিময়ে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে নাজির পাড়ার এজাহার মিয়ার পুত্র নুরুল হক ভুট্টোসহ অন্যান্য অপরাধীরা।

স্থানীয় প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা ভুট্টো টেকনাফ নাজিরপাড়াসহ থানার আশপাশে প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং নিয়মিত ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সে সঙ্গে নুরুল হক ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি বিশেষ বাহিনী প্রতিনিয়তই এলাকায় নিরীহ মানুষদের উপর হামলা চালাচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুরুল হক ভুট্টোর বিরুদ্ধে টেকনাফ এবং কক্সবাজার মডেল থানায় একাধিক মামলা এবং ১০ টিরও বেশি সাধারণ ডায়েরি করেছে ভোক্তভুগিরা। ভুট্টোর সঙ্গে তার বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আপন ভাই নুর মোহাম্মদ মংরী, নুরুল আমিন খোকন, নুরুল ইসলাম নুুরু, এবং তার ভাগিনা একই এলাকার নুরুল আলমের পুত্র হেলাল, বেলাল, আবছার ও মো: হোছন। তাদের বিরুদ্ধেও টেকনাফ থানায় ইয়াবা ব্যবসা এবং মানবপাচারের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

এদিকে হামলার এক বছর পার হলেও মামলার প্রধান আসামী ভুট্টো গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের। তিনি  দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারী ভুট্টোকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড. আয়াছুর রহমান জানান, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করেছে। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ।তবে এই সাংবাদিক নেতা, হামলার মূল হোতা ভুট্টোকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।

মামলার বাদী তৌফিকুল ইসলাম লিপু জানান, শুরু থেকে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। ভুট্টো এবং তার সহযোগীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে, অথচ পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এটি অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়ার শামিল বলে আমি মনে করি।

অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফ থানায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ এর সঙ্গে বেশ সখ্যতা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল ইসলাম ওরফে ভুট্টোর। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বেশ কয়েকবার অস্বীকারও করেছিলেন।

এদিকে ভুট্টোকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান, আমরা সাংবাদিক হামলার মামলাটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ভুট্টোকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তাকে যেকোন মূল্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: