ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদমে অবৈধ বালি উত্তোলন থামছে না, বালিভর্তি ট্রাক ছেড়ে দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::01

‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন’ লঙ্ঘন করে হাজার হাজার ঘনফুট বালি উত্তোলন হচ্ছে বান্দরবান জেলার আলীকদমের মাতামুহুরী নদী ও তৈনখাল থেকে। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অপরদিকে, নির্বিচারে বালি উত্তোলনের ফলে নদী ও তীরবর্তী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দিয়েছে।

সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের অজুহাতে ‘ইজারামূল্য’ ছাড়া উত্তোলিত কয়েক হাজার ঘনফুট বালিকে ‘জায়েজ’ করার চেষ্টা করছে প্রভাবশালীরা। তবে গত মঙ্গলবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বালিভর্তি একটি ট্রাক আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। পরে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিন জানা গেছে, মেসার্স তাহের ব্রাদার্স লিঃ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যান্টঃ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। উপজেলা সদরেই নির্মিতব্য এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিকে বালি ফিলিং এর দায়িত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠেছে, সে সব ব্যক্তির কাছে বালি উত্তোলনের বৈধ কোন অনুমতি নেই। এরা মানছেন না বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি বলেন), এ সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়নকারি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। পুলিশ এতে সহায়তা করে। মঙ্গলবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একটি বালির ট্রাক আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমাণ আদায় করা হয়েছে।

এ আইনে উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসক থেকে বালুমহাল ‘ইজারাগ্রহীতা’ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বালি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ। ‘ইজারামূল্য’ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েই বালি উত্তোলন করতে হয়। অথচ এ আইনের বালাই নেই আলীকদমে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সদরেই হাজার হাজার ঘনফুট অবৈধ বালির স্তুপ গড়ে উঠলেও প্রশাসনের নজর নেই। উপজেলা সদরের মাতামুহুরী নদী ও তৈনখালের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গত মাসাধিককাল ধরে অবৈধভবে বালি তোলা হচ্ছে।

আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন বালুমহাল ইজারা প্রদান করা না হয়ে থাকলে, উক্ত বালুমহাল হতে এ আইনের অধীন ইজারা প্রদান ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহণ, বিপণন ও সরবরাহ করা যাবে না এবং এই মর্মে কোন রাজস্বও আদায় করা যাবে না’।

১৫(১) ধারায় আছে, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন’।

বুধবার দুপুরে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্সের প্রকৌশলী ফাহিম ফেরদৌস বিপুল বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সাব-কন্ট্রাক্টারের মাধ্যমে বালি সংগ্রহ করছি। এসব বিষয় তারা জানবেন। সাব-কন্ট্রাক্টর ‘ইজারামূল্য’ ছাড়া বালি দিলে তা গ্রহণ করবেন কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা খবর নিয়ে দেখছি। তবে তাদের কাছে এ সংক্রান্ত অনুমতিপত্র নেই বলে জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মঙ্গলবার একটি বালিভর্তি ট্রাক আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বালি পাচারের সংবাদ পেলে আরো অভিযান করা হবে।

পাঠকের মতামত: