ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় মাতামুহুরী রাবার ড্যাম মেরামতে দুর্নীতি

Pic, Chakaria 07.05.2017(1)এম.এইচ. আরমান চৌধুরী, চকরিয়া :::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে প্রতি বছর রাবার ড্যাম মেরামতের নামে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামীলীগের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে বিনা টেন্ডারে কাজ দিয়ে ড্যাম মেরামতের নামে কোটি টাকা আত্মসাত করছে। মেরামত করা একটি রাবার ড্যাম দিয়ে বছর না যেতেই পানি সরে যেতে শুরু করেছে। এ বছর অপর একটি রাবার ড্যাম মেরামত কাজেও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। দুর্নীতির কারণে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণে সরকারের আসল উদ্যেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর বোরা চাষ ব্যাহত হচ্ছে, আর স্বার্থান্বেষী মহল হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়; ২০১৩ সালে মাতামুহুরী নদীর সেচ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের আওতায় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পালাকাটা ও বাঘগুজারা অংশে দু’টি রাবার ড্যামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর আগে একই সেচ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে পেকুয়ার ভোলা খালে আরও একটি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়। অভিযোগ উঠেছিল রাবার ড্যামগুলো নির্মাণের সময় ঠিকাদারি প্রPic, Chakaria 07.05.2017(2)তিষ্টান ও সংশ্লিষ্টরা চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে রাবার ড্যামে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। রাবার ড্যামের এ ত্রুটি মেরামতের নামেও এখন একটি প্রভাবশালী মহল প্রতি বছর কোটি টাকা আত্মসাত করছে।
গত বছর এ নদীর পালাকাটা অংশের রাবার ড্যাম দিয়ে পানি সরে যেতে শুরু করে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন সুত্র জানায়; ওই বছরই পালাকাটা রাবার ড্যাম কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বিনা টেন্ডারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলমের পছন্দের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে মেরামতের দায়ীত্ব দেন। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকোশলী জানান; ওই সময় পালাকাটা রাবার ড্যামের মেরামতের জন্য ২ কোটির বেশী টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের ওই টাকার বেশীরভাগই ইতোমধ্যে উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে; জোড়াতালি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে সংশ্লিষ্টরা যোগসাজস করে বরাদ্দে সিংহভাগ টাকা আত্মসাত করে নিয়েছেন। এতে বছর না যেতেই এ বছরই পালাকাটা রাবার ড্যামের ৩নং অংশ(স্পাইন) দিয়ে আবারও পানি সরে যাচ্ছে। এলাকাবাসি জানান; পালাকাটা অংশে রাবার ড্যামের মেরামত কাজটি তদন্ত করা হলে একই কাজে সরকারী অর্থের বরাদ্দ দিয়ে ওভারলেপিং করে আত্মসাতের আরও নতুন কাহিনী বেরিয়ে আসবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়; এ বছর বোরো মৌসুমের শুরুর দিকে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা অংশে রাবার ড্যামে সমস্যা দেখা দেয়। এতে কোন টেন্ডার আহবান ছাড়া দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে মেরামতের দায়ীত্ব দেন। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়; বাঘগুজারা রাবার ড্যাম মেরামতের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকার চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। এ বছর বোরো’র মৌসুম শুরুর আগে এ রাবার ড্যামটি মেরামতের জন্য দু’টি মাটির বাঁধ দেয়া হয়। তারপর ড্যাম মেরামত কাজ শুরু করে কয়েকদিন আগে মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা তারেক বিন ছগির জানান; দু’টি মাটির বাঁধ নির্মাণ, রাবার ড্যামের তলায় নতুন করে ঢালায়ের কাজ, রাবারের জোড়া খুলে আবার লাগানো, সেলাই কাজ, নতুন নাটবল্টু, নাটবল্টুর উপরে রং, ব্যাগের ভেতরে বাইরের পলি অপসারণসহ সরবরাহ লাইনের বাইরের অংশেও কিছু কাজ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি মেরামতে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। যেততেন ভাবে, জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এভাবে মেরামত কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে এখন চাহিদাপত্র অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করে পুরো টাকা আত্মসাতে প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সুত্র জানায়; মাটির বাঁধ দু’টি নির্মাণে ১৮ থেকে ২০লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। রাবার ড্যাম মেরামতের জন্য মেস্ত্রি খরচ ও মালামাল ক্রয়ে ৬৫ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্টরা যোগসাজস করে ৩ কোটি টাকার চাহিদাপত্র তৈরী করেছেন। এলাকাবাসি জানান; মেরামত কাজে রাবার ব্যাগে কিছু জোড়াতালি, রাবার জোড়া অংশে কিছু ঝালায়ের কাজ, সেলাই কাজ, নাট বল্টুর উপরে কিছু রং দেয়া, ডেলিভারী আউট লাইনে সামান্য কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না। এতে পালাকাটা অংশের রাবার ড্যামের মতো বাঘগুজারা অংশের রাবার ড্যামটি মেরামতের এক বছরের মধ্যে আবারও পানি সরে যাওয়ার আশংকা করছে। এলাকাবাসি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় নেয়ার দাবী জানান। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী মোঃ সাবিবুর রহমান জানান, পালাকাটা ও বাঘগুজারা রাবার ড্যামের মেরামতের কাজগুলো স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম নিজের পছন্দের লোকদিয়েই করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও তদারকি করেছেন। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন তদন্ত ঠিম ইতোমধ্যে তিনবার তদন্ত করে গেছেন।

 

পাঠকের মতামত: