ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পকেট ভারির জন্য খারাপ লোককে দলে আনবেন না -চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদের

image-77097-1493470613চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ::

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, কৌশল অপকৌশল যতই করেন না কেন, প্রমাণ হয়ে গেছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দাবা খেলার কৌশলের কাছে আপনারা হেরে গেছেন। হেফাজতকে দিয়ে আগামী ৫ তারিখে আরেকটি শাপলা চত্বর বানানোর খায়েশ বিএনপির ছিল। সেটাও শেষ হয়ে গেছে। এখন মাওলানা শফিও বলেন, জঙ্গিবাদ খারাপ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনও দলের সঙ্গে চুক্তি করিনি। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার স্বীকৃতি দিয়েছি। সারাদেশে ৭০ হাজার মাদ্রাসা, ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। তাই তাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনও ইসলামী দলের সঙ্গে আমরা চুক্তি করিনি। একটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া আর জোট করা এক কথা নয়।

শনিবার নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

বিএনপির সমালোচনা করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলছে হাওরে নাকি লুটপাট হচ্ছে। আসলে ক্ষমতায় না থেকে তাদের ভেতরে জ্বালা ধরেছে। আসল ঘটনা হলো, তারা তো ক্ষমতায় যেতে চায় লুটপাটের জন্য। তারা বিদেশিদের কাছে নালিশের পর নালিশ দেয়। আমি বিএনপির নাম দিয়েছি বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। আন্দোলনের ইস্যু নাই, তাই একটির পর একটি ইস্যু বের করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ভারতে নরেন্দ্র মোদী তখনও বেশিরভাগ আসনে জয়ী হয়েছে, ক্ষমতায় বসেননি। আর বিএনপি নেতারা ভারতীয় দূতাবাসে ফুল দেওয়া শুরু করলেন। আমরা তা করিনি। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। আমরা ইতিবাচক বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের স্বার্থকে শতভাগ সমুন্নত রেখে আমরা বন্ধুত্ব করি। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। কিন্তু রাষ্ট্রের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে আমরা কি বন্ধুত্ব চাইব? এটা কি শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব? আর নরেন্দ্র মোটি এসেই উভয় দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মেলালেন। বিএনপি এখানেও শেষ। এরপর আটলান্টিকের ওপারে নির্বাচন হচ্ছে। মনে করছে হিলারি তাদের ক্ষমতায় বসাবে। এখানেও শেষ। নরেন্দ্র মোদি কিংবা হিলারি কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। ক্ষমতায় বসাতে পারবে বাংলাদেশের জনগণ। কুমিল্লার নির্বাচনে জিতে মনে করেছে দেশ জিতে গেছে। ওই নির্বাচনের পর দেশে ১৭৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। এর ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগ জিতেছে। আমরা নারায়নগঞ্জে বিপুল ভোটে জিতেছি। বাঁশখালীতে ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগ জিতেছে।

সকাল ১০টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। দুপুরের পর সম্মেলনস্থলে আসেন প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। আর সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সভায় নগরীর ১৪টি থানার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। তবে সময় সংক্ষিপ্ততার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে নগর আওয়ামী লীগের কমিটির কেবল একজন সদস্য নজরুল ইসলাম বাহাদুর বক্তব্য রাখেন।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা নগর আওয়ামী লীগের দ্বিধা বিভক্তির সমালোচনা তেমন না করলেও সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করেন। পাঁচলাইশ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এমপি জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল। কিন্তু তিনিতো আমাদের চিনেনও না, এলাকায়ও আসেন না।

বক্তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলেন, বিভিন্ন থানায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কমিটির মেয়াদ নেই। অথচ তারা নানা অপকর্মে জড়িত।

গত ১০ মার্চ লালদীঘি মাঠে মহিউদ্দিন চৌধুরী এক জনসভায় আ জ ম নাছিরকে প্রকাশ্যে খুনী সম্বোধন এবং আ জ ম নাছির এর জবাবে পাগলের প্রলাপ বলায় প্রতিনিধি সম্মেলনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সম্মেলন শেষ হয়।

প্রতিনিধি সম্মেলনে কোনও দলীয় নেতার নামে ব্যানার কিংবা শ্লোগান ছিল না। ছিল না কোনও দলাদলি। বিষয়টির প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির, আপনারা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। আমরাও ভাবতে পারিনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে অভিনন্দন। চট্টগ্রাম ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। চট্টগ্রাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে সারা বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ থাকার চিন্তা করে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগে সুস্থ প্রতিযোগিতা সবসময় ছিল। এটা এম এ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীর মধ্যেও ছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে নাছিরকে ডেকে নিয়ে ঠিক করে নেবেন। নাছির আপনার ছেলের মতো।

ওবায়দুল কাদের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগের শত্রু যদি আওয়ামী লীগ হয়, তাহলে আমাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহরে বাইরের কোনও শক্তি নেই যারা আমাদের রুখতে পারে। তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। ক্ষমতা বেশিদিন থাকে না। চাটুকারদের থেকে সাবধান থাকবেন। আমার ভুল হতে পারে। নেতাদের সবার ভুল হতে পারে। আমার ভুল হলেও তা সংশোধন করি। আমার কোনও কর্মী ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তা গ্রহন করি। দলবাজি করার জন্য পকেট ভারি করার জন্য খারাপ লোককে দলে আনবেন না। এই খারাপ লোকেরা সুসময়ে আসে। দুঃসময়ে হাজার ওয়াটের বাতি দিয়েও তাদের খোঁজে পাওয়া যাবে না। নকলের ভিড়ে যেন আসল রাজা হারিয়ে না যায়। আমি মন্ত্রী আমি নেতা। আমার আশেপাশের লোকজন যদি সিন্ডিকেট করে, খারাপ কাজ করে, তাহলে আমাকেই তার মূল্য দিতে হবে-সিন্ডিকেটকে নয়। চাটুকার মোসাহেবকে আমি ভয় পাই। এরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির চেয়েও ভয়ঙ্কর।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ কেবল ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিল। এসময় দেশকে যা দিয়েছে অতীতে কেউ তা দিতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সিএনএনকে উদ্ধৃত করে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে ১২৫টি উগ্র সংগঠন সৃষ্টি হয়েছিল। এসব সংগঠনের গডফাদার ছিলেন তারেক রহমান।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. মো. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে দলতে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য ঐক্যের বিকল্প নেই। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনও সমস্যা থাকলে তা আলোচনার টেবিলেই সমাধান করতে হবে।

প্রতিনিধি সম্মেলনে মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড থেকে এক হাজারেরও বেশি সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: