ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রের চেয়ার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের আশংকা, ৪ লাখ মানুষের দূর্ভোগ চরমে

ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার :::cox

কক্সবাজার পৌর মেয়রের চেয়ার নিয়ে সৃষ্ট দু’জনের লড়াই ক্রমশ সংঘাতের দিকে মোড় নিচ্ছে। ফলে পর্যটন রাজধানী খ্যাত জনগুরুত্বপূর্ণ এই শহরে নির্বাচিত ও ভারপ্রাপ্ত দুই মেয়রের মধ্যে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের দু’জনের একজন থানায় জিডি ও অপর জন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ অবস্থায় পৌর পিতার চেয়ারটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুব সহ তাঁর অনুসারীরা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। জানা গেছে, উচ্চ আদালতের আদেশের পরও নির্বাচিত মেয়র সরওয়াকে দায়িত্ব যেন বুঝিয়ে দিতে না হয়, সেই লক্ষ্যে তাঁরা প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজছেন। এই কাজে ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবকে সহযোগীতার জন্য কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আবছারও সেখানে রয়েছেন। পৌর মেয়র সওয়ার কামাল বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে বুধবার পৌর সভায় গেলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুব ক্ষমতার লোভে আমাকে চরম অসহযোগীতা করেন। এই সময় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও তিনি নিজের লালিত মাস্তান বাহীনি দিয়ে অনেকটা জোর জবরধস্তি মূলক দায়িত্ব না ছেড়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মাস্তানির অভিযোগ তুলেন। অথচ সেই দিনের পুরো বাস্তবতা উপস্থিত সাংবাদিক ও পৌবাসী দেখছেন। যা রীতিমত আদালত অবমাননার শামিল। তবুও আমি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব ভার বুঝে নিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।

মেয়র সরওয়ার কামাল আরও জানান, আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক- ট্রেজারিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের স্বাক্ষরিত কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপরও আদালতের নির্দেশ কেউ লঙ্ঘন করলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। কিন্তু‘ সরওয়ার কামালের ক্ষমতা গ্রহণের এ দাবিকে অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ ছাড়া তিনি নিজে নিজে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, আমাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়ের চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করা অসম্ভব। এদিকে ক্ষমতার জন্য দু জন প্রতিনিধির এমন আচরণে চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার সচেতন জনগণ। তারা বলেছেন, শুধু ক্ষমতার জন্যই এ পৌরসভায় সবসময় গোঁজামিল হয়। দায়িত্বশীলদের কেউই এ পৌরসভায় বসবাসরত প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের কথা চিন্তা করেন না। যখন যেই দায়িত্ব পান তিনি লুটেপুটে খান পৌরসভার সম্পদ। যেমন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব নেয়ার অল্প ক’দিনেই নাগরিক ভোগান্তির কথা চিন্তা না করে হাজার হাজার টমটমের লাইসেন্স, বাস-টার্মিনালের বৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করে নিজের পছন্দের ১০টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় তার অল্প দিনের শাষনামলে নিয়মবর্হিভূত কোটেশন বাণিজ্য হয়েছে নজিরবিহীন। এছাড়া তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে পৌরসভার একটি জায়গায় ইতোমধ্যে ৫তলা ভবন পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। বর্তমানে শহরের আলিরজাহাল সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন কয়েকটি জায়গাসহ পৌর এলাকার আনাচে কানাচে ময়লা আবর্জনার স্তুপ গড়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য একটি ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত হওয়ার পর ১৭ মাস আগে সাময়িক বরখাস্ত হন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র সরওয়ার কামাল। তার স্থলে চেয়ারে বসার কথা ছিল প্যানেল মেয়রদের যে কোনো একজনের।

কিন্তু‘ আইনি মারপ্যাঁচ ও মন্ত্রণালয়ের আদেশে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান কাউন্সিলর এবং জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মাবু। কিন্তু‘ জনগণের রায়ে নগরপিতা হওয়ার পরও মামলার কারণে স্ব-পদ থেকে ছিটকে পড়া সরওয়ার দমে যাননি। আইনের সহযোগিতায় আবারও চেয়ারে বসার অধিকার ফিরে পাওয়ার আদেশ নিয়ে এসেছেন তিনি।

পাঠকের মতামত: