ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী ভারত নেপাল ভুটান

bon ctgঅনলাইন ডেস্ক ::

দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে চট্টগ্রাম বন্দর যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এ বন্দর ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আগ্রহী প্রতিবেশী দেশগুলোও। তাদেরও এ বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই ভারত, নেপাল ও ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করছি। যাতে বন্দরের সক্ষমতা দিন দিন বাড়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দুদিনব্যাপী পোর্ট এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক্সপোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পোর্ট এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এ বন্দর দিয়ে অস্ত্র আনছিল। কিন্তু সেই অস্ত্র খালাস করতে দেননি বন্দরের শ্রমিকরা। ২৩ শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে এই ন্দর রক্ষা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরও বন্দরে অনেক বোমা পোতা ছিল। আমাদের মিত্র দেশ রাশিয়ার প্রতিনিধিরা এসেছে সেগুলোকে ধ্বংস করে। তাই আশা করব, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে এ বন্দরকে আগলে রেখেছেন, তেমনইভাবে আজকের শ্রমিক-কর্মচারীরা যে কোনো ধরনের অশুভ ছায়া থেকে মুক্ত রাখবেন এ বন্দরকে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি ও রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩ লাখ ৩৮ হাজার বর্গমিটার পাকা ইয়ার্ড ও ২ লাখ বর্গফুট জায়গায় কার শেড তৈরি করা হয়েছে। কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জায়গায়। ৬১টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ১১১টি কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ১২০০ ও ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি শ্লিপওয়ে ও মেরিন ওয়ার্কশপ পুনরায় চালু করা হয়েছে, যা গত ৩০ বছর ধরে বিকল ছিল।

তিনি আরও বলেন, বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে প্রতিটি ২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৩৬ কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রেফার কনটেইনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১১০০টি উন্নত প্রযুক্তির র‌্যাক সিস্টেমের রেফার সংযোগ করা হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান এম খালেদ ইকবাল বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বহুগুণ বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও বেশি গতিশীল করার জন্য উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে। বন্দরের নিজস্ব জলযান নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য ২২ মিটার দীর্ঘ সার্ভিস জেটি নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ৯ থেকে ১৩নং জেটি পর্যন্ত ৮৭০ মিটার দীর্ঘ কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণকাজও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, বন্দর থেকে দূরে ৯০৭ একর জায়গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ ও মিরসরাই-সীতাকু- এলাকায় পোর্ট, বহির্নোঙরে ফ্লোটিং হারবার ও কক্সবাজারের রেজু ক্রুজ টার্মিনাল নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। লালদিয়া এলাকায় ৮২০ মিটার দীর্ঘ লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল ও ৫৮ একর জায়গার ওপর ব্যাকআপ নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মনুমেন্ট নির্মাণকাজ শিগগির শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো এ পোর্ট এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে। এক্সপোতে বাংলাদেশের সব বন্দর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সব সংস্থা, বন্দর ব্যবহারকারী, স্টেকহোল্ডার, ব্যবসায়ী সংগঠন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অংশ নিচ্ছে। পোর্ট এক্সপোতে ১২৮টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: