ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে চলছে রোগীর খাবার লুটপাটের মহোৎসব!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :pekua,,

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সরকারী হাসপাতাল) দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের খাবার লুটপাটের মহোৎসব চললেও তা বন্ধে কোন ধরনের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হেয়ছে। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (বাবুর্চি) নেজামের বিরুদ্ধে রোগীর খাবার নিয়ে বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছেও। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: মো. মুজিবুর রহমানের আস্কারায় ওই বাবুর্চি নেজাম দীর্ঘদিন ধরে রোগীর খাবার বাইরে বিক্রি ও হাসপাতালের কেন্টিনকে খাবার হোটেল বানালেও সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে  কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খোদ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন সরকারী হাসপাতালের এ অনিয়ম বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। প্রতি মাসে রোগীদের খাবার লুটপাট করে পেকুয়া হাসপাতাল কেন্দ্রীক একটি অসাধু সিন্ডিকেট সরকারী অর্থ লুটপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত ৩/৪ বছর ধরে পেকুয়া হাসপাতালের কর্মচারী (বাবুর্চি) নেজাম উদ্দিন হাসপাতালের ক্যান্টিনে বাইরের লোকদের দুপুর ও রাতের বেলায় খাবার বিক্রি করেন। প্রতিবেলা খাবার ৫০টাকা হিসেবে বাইরের লোকজনের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দুই বেলা খাবার খাওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন পেশার লোকজন দুপুর দুইটার দিকে ও রাতে ৮টার দিকে হাসপাতালের কেন্টিনে যান। রোগীদের জন্য বরাদ্দের খাবারই মূলত বাইরের লোকদের এভাবে বাধাহীনভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার এ প্রতিবেদক পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: মুজিবুর রহমানকে অবগত করলেও তিনি কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতীতের তুলনায় রোগীদের খাবার লোপাটের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়ে খাবার লুটপাটের মহোৎসবে পরিনিত হয়েছে।

জানা গেছে, পেকুয়া হাসাপাতালের কর্মচারী (বাবুর্চি) নেজাম উদ্দিন ও হাসতালের কতিপয় কর্মকর্তা কর্তৃক পেকুয়া হাসপাতালের ‘কেন্টিনকে খাবার হোটেলে’ রূপান্তর করায় তা বন্ধে গত কয়েক মাস পূর্বে কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় সচেতন এলাকাবাসীদের পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের তিন মাস অতিক্রম হলেও হাসপাতালের কর্মচারী নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ হাসপাতালের রোগীর খাবার বিক্রি বন্ধ হয়নি। এছাড়াও হাসপাতালের খাবার সরবরাহে সরকারীভাবে নিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও রোগীদের খাবার সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের নার্স সঞ্চিতা রোগীদের ডাছেঁ কন্ট্রোলের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

২৩ এপ্রিলৈ ২০১৭ ইংরেজী দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচ তলার দক্ষিন পার্শ্বে দুইটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে রোগীদের জন্য খাবার রান্না করা হয়। অপর কক্ষে দেখা গেছে, ডাইনিং টেবিল ও বেশ কয়েকটি চেয়ার। দুপুর ২টার পরেই দেখা মিলল হাসপাতাল থেকে খাবার কিনে খাওয়া পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতরের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী, ডাক্তার, ও বাইরের অচেনা লোকদের চেহারা! এসময় দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কার্যালয়ের ১০/১৫ জন ও বিভিন্ন প্রতিষ্টানের আরো ১২জনের মতো লোক ডাইনিং টেবিলে খুব মজা করে হাসপাতালের রোগীদের খাবার ঘিলে খাচ্ছেন! হাসপাতালের কেন্টিনে খাবার খেতে আসা অনেকেই জানান, হাসপাতালের বাবুর্চি নেজামের রান্নার মান খুব ভালো; দামেও সস্তা তাই দুপুর বেলার খাবারটা বাসায় যাওয়ার পরিবর্তে এখান থেকেই কিনে খাওয়া হয়। প্রতিবেলা খাবার খেতে নেজাম উদ্দিনকে কতো টাকা দিতে হয় প্রশ্ন করা হলে ওই কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি বেলা খাবার খেতে ৫০টাকা করে দেওয়া হয় বাবুর্চি নেজামকে।

হাসপাতালের বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষেগে গিয়ে বলেন, ‘আমার হাসপাতালে আমি খাবার বিক্রি করলে আপনাদের জানাতে হবে কেন উল্টো প্রশ্ন ছুঁঁড়ে দিয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি। হাসপাতালের কেন্টিনকে খাবার হোটেল ও রোগীর খাবার লুটপাটের এ মহোৎসব দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়া হাসপাতালে চলে আসলেও খোদ হাসপাতালের বড় কর্তা ডা: মুজিবুর রহমানের এ নিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যথা নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা: মুজিবুর রহমান জানান, বাবুর্চি নেজাম হাসপাতালের রোগীদের খাবার বিক্রি করছেনা। বাহির থেকে আলাদা চাউলসহ রান্নার সামগ্রী এনে হাসপাতালের কেন্টিনে রান্না করে দুপুর বেলা সরকারী কর্মচারীদের খাবার বিক্রি করে। ফলে নেজাম উদ্দিন কিছু আয় করলে এখানে দোষের কিছু দেখা যাচ্ছেনা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারী মো. আশেক উল্লাহ জানান, জরুরী ভিত্তিতে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে রোগীর খাবার বিক্রি বন্ধসহ সকল প্রকার অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধ না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: