ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংরক্ষিত অঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন ।। চকরিয়ায় হুমকির মুখে বিভিন্ন স্থাপনা

0af5fe51d2fe68f7540a476c71871de4ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :::

চকরিয়ার খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বনের ভেতরে পাগলির বিলের ছড়াখাল ও পাহাড়ের অসংখ্য পাদদেশ থেকে শক্তিশালী শ্যালো মেশিন (ড্রেজার) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এসব বালু দস্যুর বিরুদ্ধে বনবিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ সচেতন মহলের। এই অবস্থায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে চার কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি, একাধিক সামাজিক বনায়নের জমি ও চলাচলের রাস্তা। এছাড়া বালুবাহী ট্রাকে পাচার করা হয় গর্জনসেগুনসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব কর্মকাণ্ডে প্রভাবশালী বালু দস্যুদের সঙ্গে বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।

তবে বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে দ্রুত যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এরপরও সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে পাগলির বিল ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় চারটি শ্যালো মেশিন, ১০০ মিটার পাইপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তবে এ সময় পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি।’ অভিযোগ রয়েছে, যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বনের গাছ কেটে পাচার করছে তাদের কাছ থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিমাসে মাসোহারা পান। এ কারণে অভিযানের আগেই খবর পেয়ে প্রভাবশালী দস্যুরা পালিয়ে যান। তাই অভিযানের সময় জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। এতে অভিযান শেষ করে চলে আসার পরপরই ফের একইস্থান থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে চক্রটি।

সংশিহ্মষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, খুটাখালী বনবিটের অধীন পাগলিবিল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অন্তত ৩৫টি শক্তিশালী শ্যালো মেশিন (ড্রেজার) বসিয়ে ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে আশপাশের এলাকায় তীব্র ভাঙন ধরেছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে সামাজিক পরিবেশ। হুমকির মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্য। শুধু পাগলির বিল ছড়া ও খুটাখালী বনবিটের জীববৈচিত্র্যই নয়, অব্যাহত বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, মুক্তিযোদ্ধা সামাজিক বনায়ন, ২০০৭২০০৮ সনের বনবিভাগের সৃজিত সেগুন বাগিচা, মধুশিয়ার শত বছরের গর্জন বাগানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। প্রতিদিন এই বালু উত্তোলনের কারণে পুরো এলাকার পরিবেশ এখন বিপন্ন। অনেকই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বসতি ছেড়ে চলে গেছেন। নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সখ্যতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।

ভুক্তভোগী নাজেম উদ্দিন ও রফিক আহমদসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ‘বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড় ধসের মতো ঘটনাও ঘটছে। এলাকার আশপাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের পাহাড় ও ভূমি ধসের কারণে প্রাণহানিরও আশঙ্কা রয়েছে।’ সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পাহাড় ভেঙে বালি নেমে আসায় পাগলির বিল ছড়া ভরাট হয়ে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়ে পুরো এলাকাটি। তাই বালু উত্তোলন বন্ধ এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হবেন বলে শঙ্কা এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাগলির বিলের পাহাড়ি ছড়ার ৪ কিলোমিটারজুড়ে অন্তত ৩৫টি পয়েন্টে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এতে পাগলির বিলে পাহাড়ি ঢলের পানি চলাচলের একমাত্র ছড়াটি এখন ক্ষতবিক্ষত। অন্যদিকে প্রতিদিন এসব বালু পরিবহন করার সময় ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে সড়কটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জনসাধারণের চলাচলেও মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে পাগলির বিল কোনাপাড়া এলাকায় সংরক্ষিত বনের আকাশমণি গাছ কেটে অসংখ্য বসতি তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। একইভাবে কেটে পাচার করা হয়েছে মধুশিয়া, ফান্ডাছড়ি ও মহিষের কাটা এলাকার শত শত গর্জন গাছ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনকারী এক প্রভাবশালী দাবি করেন, ‘বনবিভাগে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছেন তারা। তাই এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ বা অন্য কিছু করলে তাদের কিছুই যায়আসে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রাজ্জাক এসব অভিযোগ একেবারে মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে দ্রুত অভিযান চালানোও কষ্টসাধ্য। এর পরও কয়েকদিন আগে অভিযান চালিয়ে চারটি শ্যালো মেশিন ও বিপুল পরিমাণ পাইপসহ নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

 

 

পাঠকের মতামত: