ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

গরুচুরির প্রতিবাদে সভা, গরুচোরদের ক্ষোভ !

আতিকুর রহমান মানিক :::

অব্যাহত গরু চুরিতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল কৃষক-গৃহস্হ ও জনসাধারন। আর এতে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছে সংঘবদ্ধ গরুচোরের দল। প্রতিবাদ সমাবেশের পর থেকে ফুলস্পীডে চুরি শুরু করে ১৫ দিনের মধ্যেই ৩৭ টি গরু চুরি করে তারা। এতেও ক্ষোভ মেটেনি চোরচক্রের। অবশেষে গতকাল বিভিন্ন এলাকা থেকে হাফডজন গরু চুরি করে এনে প্রতিবাদ সমাবেশের মঞ্চের স্হানেই বেঁধে করে রেখে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় চোরেরা। এসময় একটা দোকানে হানা দিয়ে মালামালও লুট করে। এরপর আরো গরু চুরি করে এনে গরুগুলো ওখান থেকেই পিকআপে তুলে চম্পট দেয় তারা। “সেরের উপর সোয়া সের’র মত এ ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়নের কালিরছড়া বাজারে।
স্হানীয় শিক্ষাবিদ প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী জানান, সদ্যগত শীতকালে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে গৃহস্হের গোয়ালঘর থেকে প্রতিরাতেই গরু চুরি হচ্ছিল। রাতে পাহারা দিয়েও গরু চুরি ঠেকানো যাচ্ছিলনা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার কৃষক, গৃহস্হ ও জনপ্রতিনিধিসহ স্হানীয় জনগন সম্প্রতি কালিরছড়া বাজার প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তারা, রাজনীতিবিদ ও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যরা এতে উপস্হিত ছিলেন।  উক্ত সমাবেশে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা গরু চোরদের বিরূদ্ধে বিষোদগার করেন।  আর এতে বেজার হয় সংঘবদ্ধ চোরের দল। এর ফলস্বরূপ, তারা গরুচুরির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও ১৫ দিনেই ৩৭ টি গরু চুরি করে গায়েব করে ফেলে।
কালিরছড়া বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য জসিম উদ্দীন জানান, সর্বশেষ  শুক্রবার ভোররাতে সশস্ত্র চোরেরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু চুরি শুরু করে। চুরিকৃত গরু এনে কালিরছড়া বাজার প্রাঙ্গনের যে স্হানে  গরুচোরদের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল, ঠিক সেখানেই বেঁধে রাখে। এসময় বাজারের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও প্রহরী মোঃ ওমরকে (৫০) জিম্মি করে রাখে। এরপর পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদের দোকানে প্রবেশ করে ও  অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল লুট করার পর তাদেরকে দোকানের ভিতরে বন্দী করে রাখে। এরপর বাজারের পাশে শুক্কুর আহমদের পুত্র এনামের(৪৫) বাড়ী থেকে ৩টি গরু এবং নজির আহমদের পুত্র নুরুর (৬৫) বাড়ী থেকে আরো ৩টি গরু নিয়ে আসে। ততক্ষনে আজানের সময় ঘনিয়ে আসলে  চুরিকৃত গরুগুলো পিকআপে তুলে নিয়ে চলে যায় চোরেরা। সাফাত উল্লাহ(৩০) নামে এক ব্যবসায়ী এসময় চিৎকার করে লোক জড়ো করার চেষ্টা করলে তাকে বেদম প্রহার করে চোরেরা। চোরেরদল চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে পুলিশ এসে দোকানে বন্দী থাকা লোকদের জনকে মুক্ত করে।
প্রত্যক্ষদর্শী রাশেদ জানান, তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ও একজনের হাতে তালা কাটার যন্ত্র ছিল।
ঈদগাও ইউনিয়নের  ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল বলেন, পাহাড়ে অপহরনকারীচক্র, রাস্তায় সশস্ত্র গরু চোরেরতদল। এ নিয়ে আমরা কালিরছড়াবাসী খুব কস্টে আছি।  এলাকাবাসীর ধারনা, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের কয়েকজন দালালের সাথে গরুচোরদের যোগাযোগ রয়েছে। দালালদের যোগশাজশে পুলিশের গতিবিধি বুঝে গরু চুরি করে চোরচক্র। ফলে পুলিশ চেষ্টা করলেও চোরদের ধরতে পারেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, প্রতিদিন বিকাল থেকেই ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র গেইটের সম্মুখস্হ দোকানে আসর জমায় চিহ্নিত দালালরা। বেসরকারী একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও দালালীর অভিযোগ বহুদিনের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সামনে বসে দালালীতে ব্যস্ত থাকেন বিতর্কিত এই শিক্ষক। প্রতিবছর কোরবানী ঈদের ৩/৪ মাস আগে থেকেই বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকায় গরুচুরি বেড়ে যায়। ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে দালালমুক্ত করা না গেলে বৃহত্তর ঈদগাঁওর গরুচোরচক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবেনা, এমনটাই দাবী এলাকাবাসীর।

 

 

পাঠকের মতামত: