ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

৩০ ফুট রাস্তার ২০ ফুটই ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের দখলে

vhanঝাউতলা থেকে নতুন বাহারছড়া যাওয়ার রাস্তাটি এভাবেই দখল করে আছে ভাঙ্গারী দোকানদাররা।

মাহাবুবুর রহমান ।।
কক্সবাজার শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার রাস্তাগুলো বেশিরভাগই দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে কেজি স্কুলের পাশ দিয়ে নতুন বাহারছড়া যাওয়ার জন্য সড়কটির ৩০ ফুট রাস্তার মধ্যে ২০ ফুটই দখল করে আছে ভাঙ্গারী ব্যবসায়িরা। ত্ওা আবার দীর্ঘ বছর ধরে। এতে করে ঐ রাস্তাটি শুধু মাত্র ভাঙ্গারী ব্যবসায়িরা ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি কোন বড় গাড়ী আসতে চাইলেও তাদের অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। কক্সবাজারের স্থানীয় না হয়েও তারাই এখন পুরু এলাকার নিয়ন্ত্রক । তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও নারাজ। সচেতন মহলের মতে সরকারি রাস্তা হলেও এই রাস্তাটি সাধারণ মানুষ কোন দিন ব্যবহার করতে পারে নি। অনেক সময় উচ্ছেদ করলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবারো দখল করে। তাদের দাবী রাস্তাটি দখল মুক্ত করা গেলে ভিআইপি সড়কের উপর চাপ কমতো এবং সাধারণ মানুষজনের জন্য উপকার হতো। এ বিষয়ে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার।
কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার দিদারুল আলম, শাহজাহান, আলী আহামদসহ অনেকে বলেন কক্সবাজারের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ঝাউতলা গাড়ীর মাঠ এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাই প্রভাবশালীদের দখলে এর মধ্যে কেজি স্কুলের পাশ দিয়ে নতুন বাহারছড়া এবং বিমানবন্দরের পাশের এলাকার যাওয়ার জন্য রাস্তাটি প্রায় ১ যুগ ধরে ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের দখলে। আমাদের জানা মতে ৩০ ফুট এই রাস্তার মধ্যে ২০ ফুটই তাদের দখলে। আর বাকি যে রাস্তাটি আছে তাও ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের গাড়ী ছাড়া চলতে পারে না। কিছু দিন আগে এলাকার এক মেয়ের বিয়ের বর যাত্রা আসতে গিয়েও ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের বড় ট্রাকের কারনে আটকে থাকতে হয়েছিল। আর বর্তমানে ভাঙ্গারী ব্যবসায়িরা খুব প্রভাবশালী। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন কোটিপতি এবং অনেক নেতার সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক। এবং প্রত্যেকেরই অনৈতিক ব্যবসা আছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাইস্কুলের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে যাওয়া রাস্তাটি বেশির ভাগই বেদখল। এবং দখলকারীদের মধ্যে সবাই ভাঙ্গারী ব্যবসায়ি এর মধ্যে ফজল, মতি, ফরিদ, ইউচুপ, মোস্তফা, শেখ ফরিদ, নজরুল, জামাল, আকাশসহ কয়েকজনের দোকানদারদের বর্ধিত অংশ। তাদের প্রত্যেকেরই দোকানের সামনে তারা টিন দিয়ে ঘিরে ভাঙ্গারীর মালামাল রেখেছে। যার ফলে পুরু রাস্তা তাদের দখলে চলে আসে। এ সময় পরিচয় গোপন করে জানতে চাইলে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ি মোস্তফা ও ফরিদ বলেন, এসব জমি তাদের কেনা বরং সামনে আরো জমি পাবে তারা। কোন দখল হয় নি।
পরে নতুন বাহারছড়া এক হোটেলে বসে রাস্তার বিষয়ে আলাপ কালে শামসু নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন এটি সরকারি রাস্তা, আমার বয়স ৭০ বছরের বেশি। ছোট বেলা থেকে দেখছি এই রাস্তা। এখন ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের প্রলোভনে পড়ে স্থানীয় কিছু কুচক্রি মহলের ইন্দনে রাস্তাটি বেদখল হয়ে গেছে। আমার জানা মতে আবু তাহের নামের এক ব্যক্তির কথা বলে রাস্তাটি তাদের পরিবার দাবী করছে। কিন্তু আবু তাহের বেঁচে থাকতে কোন দিন এই জমি দাবী করেনি। জানিনা কিভাবে তাদের পরিবার খতিয়ান করেছে বা বিক্রি করছে। আর রাস্তার জমি কিভাবে বিক্রি করে আমি বুঝিনা সব টাকার খেলা।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন বলেন, এখানে যারা ভাঙ্গারী ব্যবসা করছে তারা এখন থেকে ১০/১২ বছর আগে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে কাজের সন্ধানে এসেছিল। তারা আগে মানুষের বাড়িতে কর্মচারী ছিল। এখন তাদের মধ্যে অনেকেই কোটি টাকার মালিক, বিশেষ করে রাজন, বজল, মোবারক, নজরুল এরা খুবই প্রভাবশালী। তাদের সাথে স্থানীয় অনেক নেতার সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক। আবার তারা নিয়মিত কিছু টাকাও বিশেষ জায়গায় পৌছে দেয়। যার ফলে এখানে রাস্তা নয় বাড়ি দখল করলেও কেউ মুখ খুলবে না। আমি আগে যাদের নাম বলেছি তাদের আত্মীয় স্বজনকে তাদের জেলা থেকে এনে এখানে জমি ও বাড়ির মালিক করে দিয়েছে। আমরা আগে এই রাস্তা ব্যবহার করেছি নির্বিগ্নে এখন নাকি তাদের কেনা জমি। এখন তাদের দাপটে আমরাই অসহায়। এমনকি স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করার সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের ছেলেরা। এবং তাদের প্রতিটি দোকানে সবসময় চিহ্নিত চুর ছিনতাইকারীরা বসা থাকে। কিছুদিন আগে পেশকারপাড়া থেকে এক ব্যক্তি এসেছিল তার বাসার চুরি হওয়া মটর পাম্প এখানে দেখতে পেয়ে কিন্তু সেটা চাইতে গিয়ে উল্টো তাকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। এছাড়া আমাদের জানা মতে কয়েকবার আইনশৃংখলা বাহিনী ভাঙ্গারী ব্যবসায়িদের উচ্ছেদ করলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে তারা আবার বসে যায়।
এ ব্যপারে ক্রীড়া সংগঠক এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী শাহিনুল হক মার্শাল বলেন, ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে তারা সব ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। শহরের ছোটবড় সব অপরাধী চোর ছিনতাইকারী তাদের সাথেই জড়িত। তাছাড়া মাঝে মধ্যে ভিআইপি যাতায়াতের কারনে বিমানবন্দর সড়কটিতে যানজট লাগে। যদি সেই রাস্তাটি খোলা থাকতো তাহলে বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেত। আর রাস্তা দখল করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান দরকার।
একই ভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সর্বস্থরের মানুষের দাবী রাস্তাটি দ্রুত দখল মুক্ত করে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা।

 

পাঠকের মতামত: