ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবৈধ টমটম নিয়ে বাণিজ্য, বাড়ছে যানজট ও দূর্ঘটনা

ওমর ফারুক হিরু ।।
ব্যাটারী চালিত ৩ চাকার গাড়ি টমটমই এখন যত মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন বাড়তে থাকা এই টমটমের কারনে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বাড়ছে যানযট। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। পৌরসভা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লাইসেন্সদারী টমটম রয়েছে আড়াই হাজার। কিন্তু শহরে টমটম রয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি।
এসব অবৈধ টমটম ধরে ৫শ’ থেকে ২২শ’ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পরে আবার ধরছে এবং ছাড়ছে। আর এই জরিমানার টাকা কোথায় যাচ্ছে আদৌ কেউ জানে না। বিআরটিএ ও পৌরসভাও জানে না। এমনকি ওই টাকার রশিদও দেওয়া হচ্ছেনা। যদিও টমটম চালকদের বলা হচ্ছে এসব টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ট্রাফিকই সৃষ্টি করেছে নতুন আইন। শহরের টমটম লিংক রোডের পরে যেতে পারবে না। যদিও টমটমই হচ্ছে অবৈধ গাড়ি। আর এই অবৈধ টমটম নিয়ে বাণিজ্য করছে খোদ দমনকারীরা। যারা নিজেদের সুবিধার জন্য টমটম দুূর্ভোগ বাড়িয়েছে। এমনটাই অভিযোগ সচেতন মহলের।
বিআরটিএ বলছে, টমটম একটি অযান্ত্রিক যান। এই টমটমের লাইসেন্স আর জরিমান কোন বৈধতা নেই। এর পরেও ট্রাফিক পুলিশ কিভাবে জরিমানা নেয় তা জানা নেই।
পৌর-মেয়র স্বীকার করে বলছেন, টমটমের কোন লাইসেন্স দেওয়া যায় না। তবে জনস্বার্থে এবং টমটমের সংখ্যা কমাতে পৌরসভার পক্ষ থেকে আড়াই হাজার টমটমের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৈধ-অবৈধ মিলে ৬ হাজারেরও বেশি টমটম চলছে শহরে। ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে জরিমানার নামে হয়রানি করার বিষয়টি তিনি শুনেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে গেছে টমটম। যেসব টমটমের কারনে প্রতিনিয়ত লেগে রয়েছে যানজট। এই যানজটের দৃশ্য বেশি দেখা যায় ভোলাবাবুর পেট্টোল পাম্প থেকে কালুর দোকান পর্যন্ত। অনেক সময় এই যানজট আরো দীর্ঘ হয়ে যায়। আবার পর্যটকের সংখ্যা বাড়লে কলাতলী ও সুগন্ধ্যা পয়েন্টে বেড়ে যায় যানজট।
এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, দৈনিক বেশ কয়েকটা টমটম দুর্ঘটনা ঘটছে। উড়না প্যাঁচিয়ে পর্যটকের মৃত্যু ছাড়াও ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, যানজট নিরমনে ট্রাফিক পুলিশের গাফিলিতি রয়েছে। তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে টমটম গাড়ির জরিমানা নিতে। তারা ৫শ’ থেকে ২২শ’ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায় করে টমটম ছেড়ে দিচ্ছে। জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার ফলে পুনরায় রাস্তায় নামছে এসব টমটম।
শহরের নুনিয়াছড়ার সাইফুল ইসলাম বলেন, এক মাসের মধ্যে তার ২টা টমটম ৪ বার ধরেছে ট্রাফিক পুলিশ। একটিকে জরিমানা করেছে ১০০০ টাকা। যা রাস্তার উপর জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম জরিমানার কিছুদিন পর আবারো একই গাড়ি জরিমানা করা হয় ২ হাজার টাকা। যার কোন রশিদ দেওয়া হয়নি। রশিদের কথা জিজ্ঞেস করলে ওই টাকা ব্যাংকে জমা হচ্ছে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, যারা অবৈধ টমটম দমন করবে তারাই’ত টমটমের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। তারা জরিমান করে আর ছেড়ে দেয়। এতে অবৈধ টমটম বন্ধ হচ্ছে না বরং বাড়ছে। আর কিছু হোক না হোক তাদের বাণিজ্য হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে জরিমানা না করে টমটমগুলো ধ্বংস করে ফেলা উচিত। যাতে করে অন্যজন শিক্ষা নিয়ে অবৈধ টমটম রাস্তায় না নামায়। তিনি আরো বলেন, শুধু ট্রাফিক কেন অনেক এনজিও সংস্থা এমনকি ব্যক্তির নাম ব্যবহার করেও রাস্তায় চলছে টমটম। এছাড়া এই অবৈধ টমটমের নামে সংগঠন পর্যন্ত হয়েছে।
লিংক রোড এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টমটম চালক জানায়, লিংক রোডে’র পরে শহরের কোন টমটম প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না। এই আইন চালু করা হয়েছে ট্রাফিককে ম্যানেজ করে। যাতে করে যে যার ব্যবসা ঠিকমত করতে পারে।
এব্যাপারে বিআরটিএ কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক পারকন চৌধুরী জানান, টমটম আদৌ গাড়ির মধ্যে পড়ে না। এটি অযান্ত্রিক একটি যান। আর এ নিয়ে কোন আইন নেই। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ কি আইনে জরিমানা করে আর ছেড়ে দেয় বুঝিনা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান জানান, আদৌ টমটমের লাইসেন্স দেওয়া যায়না। এর পরেও জনস্বার্থে এবং টমটমের সংখ্যা কমাতে আড়াই হাজার টমটমের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিকের জরিমানা বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ওই জরিমানার টাকা কোথায় যায় এমন প্রশ্নে বলেন, তিনি জানেন না। এমনকি ব্যাংকে দিচ্ছে কিনা তাও জানেননা। আর কাউকে টাকার কোন রশিদ দেওয়া হয়না। এছাড়া তারা জরিমানা করে পুনরায় ছেড়ে দেওয়ার কোন বৈধতা রাখেনা।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিকে বড়–য়া জানায়, অবৈধতার ধরন দেখে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। আর জরিমানা শেষে টমটম দিয়ে দেয়া হয়। জরিমানার পরে আপাত কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছেনা। টাকা কোন ব্যাংকে জমা দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে বলেন, এসব টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়।

পাঠকের মতামত: