ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্যেক অফিসে সেবার মূল্য তালিকা ও সিটিজেন চার্টার লাগানোর নির্দেশ

মিজবাউল হক, চকরিয়া :
চকরিয়ায় দুদকের ফলোআপ গণশুনানীতে অভিযোগকারীদের উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল ১০ এপ্রিল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফলোআপ গণশুনানীতে চকরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মরত কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে।
ফলোআপ গণশুনানীতে উঠেছে এসেছে ২০১৫ সালের গণশুনানীতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ তুলেছিল সেসব অভিযোগের কোন তদন্ত হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী বশিরুল আলম বলেছেন; তিনি ওইসময় অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন বলে তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম ইচ্ছে করে উপজেলা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত যাচাই বাছাই কমিটি থেকে বাদ দিয়ে অন্যজনের নাম প্রস্তাব করেছেন। দৈনিক যুগান্তর চকরিয়া প্রতিনিধি ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম বলেছেন; তিনি ২০১৫ সালের গণশুনানীতে অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি ওই গণশুনানীতে চকরিয়া ভূমি অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলেন। ওই অভিযোগের কোন তদন্ত হয়নি। উল্টো তাকেও চকরিয়া ভূমি অফিসে সংশ্লিষ্টরা সেই থেকে নানা হয়রানি করে আসছে। তিনি বলেছেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় তার পিতার নামের একটি বন্দোবস্ত মামলার নথি গায়েব করে ফেলেছেন চকরিয়া ভূমি অফিস। ফলোআপ গণশুনানীতে এসব কথা তুলে ধরায় চকরিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিদারুল আলম তাকে (জহিরুল ইসলামকে) ধমক দিয়ে কথা বলেছেন। এমন কি তিনি মঞ্চে অভিযোগের কোন তদন্ত না হওয়ার কথা বলায় তাকে হেনাস্থা করার জন্য চেষ্ঠা করেন। চকরিয়া চিংড়ি বর্গা চাষী সমিতির সভাপতি ফরিদুল আলম বলেছেন, চকরিয়া ভূমি অফিসে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। তিনি কয়েকটা ফাইল জব্দ করলে এসব দুর্নীতির কথা বেরিয়ে আসবে বলে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। তিনি এসব ফাইলগুলোর নাম্বার সহ উল্লেখ করে উপস্থিত দুদক কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এই ফলোআপ গণশুনানীতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) চকরিয়া উক্ত ফলোআপ গণশুনানীর আয়োজন করে। গণশুনানীর প্রথম পর্বে উপজেলার চারটি সরকারি অফিস যথাক্রমে উপজেলা ভূমি অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান কর্মকর্তাগণ ২০১৫ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত গণশুনানীর পরবর্তীতে তাদের দপ্তরগুলো কি কি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে তারা কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা উপস্থাপন করেন। প্রথমে উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ দিদারুল আলম, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের পক্ষে সাব-রেজিষ্টার এএসএম শামছুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষে ডা. সোলতান আহমদ সিরাজী এবং পল্লী বিদ্যুতের পক্ষে ডিজিএম মোঃ আবদুস সামাদ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর গত বছরের প্রশ্নকারিরা পুনরায় মঞ্চে উঠে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রশ্ন করেন। পরবর্তীতে এবছর নতুনভাবে অভিযোগকারিদের মধ্য থেকে বাছাইকৃতদের মধ্য থেকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। গণশুনানীতে প্রশ্নকারিরা চকরিয়া ভূমি অফিসে এখনও দুর্নীতি অনিয়ম অব্যাহত থাকার কথা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন গত গণশুনানীতের চকরিয়া ভূমি অফিসে কর্মরত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল সে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন তদন্ত হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বক্তারা বলেন, চকরিয়া ভূমি অফিসে সংশ্লিষ্টরা আসল রূপকে ঢেকে দেয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি মসৃণ প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। ওই প্রলেপের নিচে দুর্নীতিবাজরা ঘাপটি মেরে আছে। এ অফিসে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বলা হলেও দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা বলছেন না। একজন প্রশ্ন করেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারিকে টাকা না দিলে কোন কাগজে সই করেনা। এর জবাবে ডিজিএম আবদুস সামাদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুরো গণশুনানী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসটি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীর শেষ পর্বের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র পরিচালক জসিম উদ্দিন ফেরদৌস। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ মোহাম্মদ ইলিয়াছ, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম, দুদকের পরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) মোঃ মনিরুজ্জামান, দুদকের চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ, দুদকের ঢাকা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ, পল্লী বিদ্যুতের জিএম নুর মোহাম্মদ আজম মজুমদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আযাদ, সনাক সভাপতি আলহাজ¦ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, দুপ্রকের চকরিয়া উপজেলা সভাপতি মোঃ নোমান, টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মোঃ জসিম উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার হাজী আবু মোঃ বশিরুল আলম, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানগণ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, প্রতি মাসে একবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফলোআপ করা হবে। তিনি বলেন, কোন ধরণের অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টিআইবি’র পরিচালক জসিম উদ্দিন ফেরদৌস বলেন, সরকারি অফিসগুলো গণশুনানী করছে এটা একটা ভালো লক্ষণ। এধারা অব্যাহত থাকলে সরকারি অফিসের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণ হয়রানীমুক্ত সেবা পাবে। তিনি এধরণের কর্মকান্ডে টিআইব সবসময় পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন। এর আগে সকালে টিআইবি-সনাকে ইয়েস দলের আয়োজনে দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ। এতে মোট ২৪টি কার্টুন প্রদর্শন করা হয়।

পাঠকের মতামত: