ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবন্ধ ‘বন্ধুত্ব বহমান নদীর মতো’

sheikh-hasina-1ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের জনসাধারণের কল্যাণে সীমিত সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। ভারতে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে শুক্রবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুতে শেখ হাসিনা তার লেখা এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছেন।

তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব বহতা নদীর মতো এবং তা ঔদার্যে পূর্ণ। দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের মূল চেতনা এটাই। প্রতিশ্রুতি সৎ হলে দুই দেশের জনগণের কল্যাণে অনেক কিছু অর্জন করে নেয়া সম্ভব।

নিবন্ধে শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর, যখন আমার দল ক্ষমতা গ্রহণ করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হয়। রেল, সড়ক ও জলপথে কানেকটিভিটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সর্বোচ্চ বাড়ে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কও গতিশীল হয়। এ ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিতভাবে মানুষের উপকারে আসছে। সম্পর্ক, ব্যক্তিগত বা জাতীয় পর্যায়ে হোক, তা লেনদেনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। মেক্সিকোর নোবেলজয়ী অক্টাভিও পাস বলেছেন, বন্ধুত্ব হলো বহমান নদীর মতো। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব বহতা নদীর মতো এবং তা ঔদার্যে পূর্ণ। দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের এটাই মূল চেতনা। আমি মনে করি, প্রতিশ্রুতি যদি সৎ হয়, আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হব, যাতে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে। ভারতে চার দিনের সফরে আমি নিজে এবং আমার দেশের মানুষের পক্ষ থেকে, ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি আশা করি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আমার সফরের মধ্য দিয়ে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয় তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি সব সময় দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশ ও ভারতের বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তারা মৌলিক চাহিদা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। পুষ্টির অভাবে বিপুলসংখ্যক শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের এ পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা আছে। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে মানসিকতার পরিবর্তন। আমি মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দারিদ্র্য নিরসন প্রথম এবং সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। আজ বিশ্বায়নের যুগে এককভাবে কোনো কিছু করা কষ্টকর। এর চেয়ে সহযোগিতা ও সহায়তা অনেক কিছুকে সহজ করে তুলতে পারে। এ কারণে আমি সব সময় আঞ্চলিক সহায়তা ও কানেকটিভিটির উন্নয়নের ওপর জোর দিই।

আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শান্তিতে বিশ্বাস করি। একমাত্র আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের মধ্যে বেশ কিছু ইস্যু আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হতে পারে। স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সেই সদিচ্ছা প্রদর্শন করেছি। এখানে আরও কিছু ইস্যু আছে, যেমন অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের (তিস্তা ইস্যুটি আলোচনার পর্যায়ে) বিষয়টি সমাধান করা প্রয়োজন। আমি আশাবাদী মানুষ। আমি প্রতিবেশী দেশের নেতা ও জনগণের সদিচ্ছার ওপর আস্থা রাখতে চাই। আমি জানি, সম্পদের ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু আমরা সেটুকুই দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ভাগ করে নিতে পারি। আমরা একই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভাগ করে নিই। আমাদের অনেক কিছুতে সাদৃশ্য রয়েছে (অন্তত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে)। আমরা লালন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ ভাগ করি, আমাদের ভাষাতে মিল রয়েছে, আমরা পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানিতে পুষ্ট হই এবং আরও অনেক কিছু। সুন্দরবন আমাদের দুই দেশের গর্ব। এ নিয়ে আমাদের কোনো বিবাদ নেই। তাহলে অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে কেন এই বাদানুবাদ?

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়—আমার সারা জীবনের লক্ষ্য এটা। আমার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কেউ দারিদ্র্যের অভিশাপে দুর্ভোগ পোহাবে না, সেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। অন্য কথায়, তারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, উন্নত ও মানসম্মত জীবন পাওয়ার সুযোগ পাবে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিবন্ধে বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে আমি এই শিক্ষাই পেয়েছি। আমার বাবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর নীতি এবং তিনি সব সময় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিলেন এবং এ কারণে তাঁকে কারাবন্দী হতে হয়েছে বারবার এবং দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি নীতির প্রশ্নে অটল ছিলেন। বাংলাদেশ তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা তাঁর নিবন্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন।

পাঠকের মতামত: