নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::
চকরিয়া চিংড়ি খনি হিসেবে খ্যাত চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ এলাকায় অন্তত ৪টি চিহ্নিত ডাকাত দলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শতশত চিংড়িঘের মালিক ও চাষিরা। প্রতিনিয়ত ডাকাত দলের তান্ডব ও নির্যাতনে চিংড়িঘেরে বিনিয়োগকৃত পূজি আহরণ করতে না পেরে বেশির ভাগ চিংড়ি চাষিরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে চিংড়ি হাতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
একাধিক চিংড়ি চাষিরা জানান, উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন চরণদ্বীপ মৌজার ২৫হাজার একর চিংড়ি ঘের রয়েছে। ওইসব চিংড়ি ঘেরে মালিক ও ইজারাদার মিলে ৩ হাজার ও ১৫ হাজার শ্রমিক এ পেশায় জীবিকা উপর্জন করে। কালো সোনা নামে খ্যাত বাগদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হলেও এসব এলাকায় নিরাপত্তা বিধানের জন্য কোন পুলিশ ক্যাম্প নাই। পুলিশ ক্যাম্প না থাকায় ডাকাতরা বেপরোয়া হয়ে লুটপাঠ চালাচ্ছে। এতে ডাকাতদলের অব্যাহত লুটপাঠে চিংড়ি চাষিরা অসহায় পড়েছে।
চিংড়ি চাষিরা জানান, চিংড়ি উৎপাদন শুরু হতে না হতেই ঘের এলাকায় প্রতি জোতে (জোয়ারের সময়) মাছ ধরতে গেলেই ৪টি দলে বিভক্ত ডাকাত দলের সর্দারদের হাতে তাদের চাহিদা মতো মাসোহারা পরিশোধ করতে হয়। চাহিদা মতো চাদাঁ না দিলে রাতের আধাঁরে সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্যরা ঘেরের মালিক ও কর্মচারীদের নির্মমভাবে পিঠিয়ে নৌকা, মাছ, জালসহ বাসার মালামাল এমনকি চাল ডাল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধাঁ দিলেই প্রাণহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন জোটে কপালে।
প্রাণের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য চিংড়ি চাষি দাবি করেছেন, সন্ধ্যার পর পরই পুরো চরণদ্বীপ এলাকা চলে যায় ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রণে। ডাকাত দলের গুলির আওয়াজে সন্ধ্যা শুরু যেমন হয় তেমনি ওই ডাকাতদের গুলিতেই ফজর শুরু হয়। যাতায়ত ব্যবস্থা খারাপ অজুহাত দেখিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব দেখেও না দেখার মতো চুপ থাকে।
শুনেও না শুনার মতো করে থাকে। ফলে বেশির ভাগ চিংড়ি চাষি লাভের আশায় চিংড়ি চাষ করলেও বছর শেষে পূজি হারিয়ে শুণ্য হাতে ঘরে ফিরছে।
কিছু দিন আগে র্যাব চরণদ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও ডাকাত দলের মূলহোতা ও পালের গোধারা অধরা থাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা পূনরায় অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে পুরানো কায়দায় ঘেরে লুপাট অব্যাহত রেখেছে।
চরণদ্ধীপ এলাকার বেশির ভাগ চিংড়ি চাষি দাবি করেছেন, র্যাবের অভিযানের পর বেশ কিছুদিন ডাকাত দলের সর্দার ও সদস্যরা অস্ত্র মামলায় আসামি হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত থাকলেও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়ে ও অর্থপূর্ন উদারতায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। সে কারণে পেশাদার ডাকাতরা পুনরায় বেপরোয়া হয়ে র্যাবের হাতে ধরা পড়া অস্ত্র পুনরায় সংগ্রহ করতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তাহা আদায় করতে চিংড়ি চাষিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে।
চিংড়ি চাষিদের মতে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী-কাটাখালী, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা-চরণদ্ধীপ, পালাকাটা এলাকার উশৃঙ্খল একদল যুবক চারভাগে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুরো চিংড়িঘের এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ডাকাত দল চিংড়ি ঘেরে ডাকাতির পাশাপাশি ঘের এলাকায় লালন পালন করা গরু, মহিষ, ভেড়া-ছাগল গুলো লুপাট করে নৌ পথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। চরণদ্বীপ এলাকার এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি ও লুটপাট ডাকাতদলের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকাতের ভয়ে ঘের মালিক ও চাষিরা মুখ খুলছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিংড়ি চাষিরা বলেন, ডুলাহাজারা এলাকার ডাকাত বেলাল ও ছরওয়ার, চরণদ্বীপের মোহাম্মদ করিম পটো, কোরালখালীর লুৎফুর ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের নুরুল আমিন প্রকাশ আমিন ডাকাতের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে ৪টি ডাকাত বাহিনী।
ওই ৪ বাহিনীর নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত চিরিঙ্গা এলাকার চরণদ্বীপ, ডুলাহাজারা, খুটাখালীসহ উপকুলীয় এলাকায় চিংড়িজোনে ডাকাতি ও লুটপাট চালিয়ে আসছে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হামলা করছেন ডাকাতদল। তাদের অত্যাচারে অসহায় হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার শতশত চিংড়ি চাষি। এসব ডাকাত দলের সদস্যসহ বাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, লুটপাট ও গুমের মতো অপরাধে চকরিয়া থানায় প্রায় শতাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব ও পুলিশ তাদেরকে ধরার জন্য হন্য হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি র্যাব-৭ ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এসব চিহ্নিত ডাকাতদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। একাধিক মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা এড়াতে এসব ডাকাতরা নিরাপদ আস্তানা হিসেবে চিংড়ি ঘের বেচেঁ নিয়েছে।।
এদিকে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসিমউদ্দিন বলেন, ডাকাতরা চিংড়িজোনে ডাকাতি ও লুটপাট করছেন মাছ সহ বিভিন্ন মালামাল। এসব ডাকাত বাহিনীর ব্যাপারে একাধিকবার র্যাব ও পুলিশ বাহিনীকে বলা হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য বলা হয়েছে। এসব বাহিনীর অত্যাচারে কোন ঘের মালিক মাছ চাষ করতে পারছে না। তারা প্রতিনিয়ত ডাকাতি ও লুটপাট করছেন বলে জানান তিনি।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি শুনেছি ওইসব এলাকায় ডাকাতরা কয়েকটি গ্রুপে চিংড়িঘেরে তান্ডব ও লুটপাঠ করছে। ডাকাতদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, চিংড়ি ঘের মালিক ও চাষিরা যাতে নির্ভয়ে মাছ চাষ করতে পারে সেজন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
প্রকাশ:
২০১৭-০৪-০৭ ১১:০৯:২৫
আপডেট:২০১৭-০৪-০৭ ১১:৪৬:২১
- চকরিয়ার হত্যা মামলার ৭ আসামি ফেনী থেকে গ্রেপ্তার
- চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে মাছের ঝাঁক তৈরিকালে পানিতে ডুবে দুই যুবকের মৃত্যু
- চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গোলাগুলি কাটা বন্দুক উদ্ধার, নারীসহ আহত ৫
- চকরিয়ায় বনের ভেতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে বন্যহাতির আক্রমণে নারীর মৃত্যু
- চকরিয়ার প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩ গম্বুজ মসজিদের সংস্কার জরুরী
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৯ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া চৌমুহনীতে বিট কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- ঈদগাঁও উপজেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর-জেলা প্রশাসক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
- চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া চৌমুহনীতে বিট কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি জীপ গাড়ি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষে আরোহী যুবক নিহত
- চকরিয়া বদরখালীতে গুলি করে হাত-পা কেটে যুবককে খুনের মামলার আসামি শাকিল গ্রেপ্তার
- সেলিম-শফির খুনীদের এলাকায় ডুকতে দেয়া হবে না
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৯ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
পাঠকের মতামত: