ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

শতবর্ষী গাছ কর্তনে এলাকাবাসী শোকাহত, ফুলতলার ঐতিহ্য ফুলগাছটি আর নেই!

Chakaria-Picture-03-04-2017-276x540-276x540::: এম.আর মাহমুদ :::

চকরিয়া পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ডের ফুলতলার শতবর্ষী ফুল গাছটি আর নেই। এলাকাবাসী অনেকটা শোকাহত। এ ফুল গাছটির কারণে হয়তো এলাকাটির নামকরণ হয়েছে ফুলতলা। শত বছর ধরে গাছটি দন্ডয়মান ছিল। অনেকটা কালের সাক্ষী। অসংখ্য প্রাণীকূল গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির সময় এখানে আশ্রয় নিত। কিন্তু আধুনিক শহর গড়তে গিয়ে গাছটির প্রাণ গেল। কথায় আছে আল্লাহ গ্রাম সৃষ্টি করেছে আর মানুষ সৃষ্টি করেছে শহর। আধুনিক শহরের যুগে দিন দিন আল্লাহর সৃষ্টি অসংখ্য নিদর্শন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যা মানুষের জন্য কল্যাণকর মনে হলেও বাস্তবে কল্যাণকর নয়। ফুল গাছের তলায় এক সময় হাতেগনা কয়েকটি দোকান ছিল। পরে অসংখ্য দোকানপাট হলেও ক্লান্ত মানুষগুলো এখানে আড্ডা দিত। ফুলতলায় অন্তত অর্ধশত বছর পূর্বে জহির সওদাগরের একটি হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। এ দোকানের কারণে পাশাপাশি আরো কিছু দোকান সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যবসায়িক কারণে জহির সওদাগরের পুরানো দোকানটি থানা রাস্তার মাথায় স্থানান্তর হলেও তাদের পুরোনো স্মৃতি দোকানটি এখনও সমহিমায় দন্ডয়মান। সাথে শত বছরের ফুল গাছটি দন্ডয়মান ছিল। বিজ্ঞানীদের ভাষায় গাছেরও প্রাণ আছে। তবে মানব সভ্যতার কারণে এখন গাছটির অস্তিত্ব আর নেই। যা ওই এলাকার সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের জন্য বড়ই বেদনা দায়ক। ক’দিন আগে চকরিয়া পৌরসভা পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছটি পাঠার ভাগ্যবরণ করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য। এ ফুল গাছটির মরণ হয়েছে জোট সরকারের আমলের শেষ দিকে। সে সময়ের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সহ ওই এলাকার বেশক’জন মিলে গাছটি কেটে ফেলেছে মর্মে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছিল। এ মামলার বর্তমান অবস্থা কি আমার জানা নেই। তবে এ মামলায় একজন জনপ্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ কারাগারে দিনাতিপাত করেছে। যাক ওই সময়ের কথা বলে এখন লাভ নেই। কারণ আল্লামা ইকবালের ভাষায় বলতে হয়, ‘ভবিষ্যতের চিন্তা ছেড়ে অতীত তরে কাঁদবো কেন?’ বাস্তবে জোট সরকার ক্ষমতা থাকাকালে গাছটি কাটা হয়নি। তারপরও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। কেন হয়েছিল তার শানেনুযুল বুঝা বড়ই কষ্টকর। পৌর কর্তৃপক্ষের ভাষায় গাছটি কাটা হয়েছে জনস্বার্থে। ফুল গাছটি কেটে আয়লব্ধ টাকা মসজিদে দান করেছে। শতবর্ষী গাছটি দন্ডয়মান থাকলে ড্রেন নির্মাণ করা যাবে না। তাতে পানি নিষ্কাশনের পথ বার বার বাঁধাগ্রস্থ হবে। বর্ষায় মানুষ নানাভাবে দূর্ভোগের শিকার হবে। এখানে শহীদ মনির চৌধুরীর একটি কথা না বললে হয় না, ‘মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’। আমরা এ তথ্যে বিশ্বাসী হয়ে বৃক্ষটি নিধন মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও, নিরবে হজম করা ছাড়া করার কিছুই নেই। কারণ হাত-পা যার বাঁধা, নিরবে মার খাওয়া ছাড়া উপায়টা কি? চকরিয়ার এক সময়ের ঐতিহ্য সুন্দরবন এখন অস্তিত্বহীন। এ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (প্যারাবন) উজাড় করে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। যে কারণে ২৮ হাজার একর বিশিষ্ট চকরিয়ার সুন্দরবন অস্তিত্বহীন হয়েছে। সেখানে নেই কোন সুন্দরী কাঠ। তবে ভাগ্যক্রমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালী ঢালার পড়ে মগ্যারমার ছড়া নামক স্থানে রাস্তার পার্শ্বে হাতেগনা ২/৩টি সুন্দরী কাঠ সুন্দরবনের ঐতিহ্য রক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে বন বিভাগ সুন্দরবনের ঐতিহ্য হিসেবে ওই গাছগুলোকে (হেরিটাস) হিসেবে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটি সাইনবোর্ডও দিয়েছিল। যা পথিকেরা দেখে সুন্দরবনের দিকে একনজর তাকাত। ক’দিন পরে ওই ৩টি গাছসহ সাইনবোর্ডটিরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা ঐতিহ্য রক্ষা করতে জানি না। জানলে হয়তো ৩টি সুন্দরী কাঠ সহ শতবর্ষী ফুলতলার ফুল গাছটি নিধন করতে পারত না। ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী (অহিংসা পরমধর্ম) এ মর্ম বাণী প্রচার ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধের স্বার্থে ভারত থেকে নোয়াখালীতে আসেন। ওই সময় গান্ধীর সাথে পালিত কয়েকটি প্রিয় ছাগলও ছিল। তিনি নাকি ছাগলের দুধ পান করতেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ওই এলাকার লোকজন মহাত্মা গান্ধীর পালিত ছাগলগুলো চুরি করে খেয়ে ফেলেছেন বলে এখনও ওই এলাকার লোকজনকে কীর্তিনাশা হিসেবে অবহিত করেন। তবে এখনও নোয়াখালীতে গান্ধী আশ্রম রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিমত ফুলতলার ঐতিহ্য ফুল গাছটি কেটে পৌর কর্তৃপক্ষ মহাত্মা গান্ধীর ছাগল চুরির ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে কাজটি ভাল হয়নি। নতুন প্রজন্ম এখন ফুলতলার নামকরণ কেন হয়েছে তার যুক্তিকতা খুঁজে পেতে কষ্টকর হবে। একটি গানের কলি দিয়ে লেখাটির ইতি টানতে হচ্ছে ‘পৌর কর্তৃপক্ষ ভাবছে নামে কিবা আসে যায়, নাম দিয়ে কি হয়, নামের মাঝে পাবে নাতো সবার পরিচয়, রাজা নাই, শাহী নাই, রাজশাহী নাম, বুড়িগঙ্গায় বুড়ি নেই আছে শুধু ঢেউ’

পাঠকের মতামত: