ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ, বাসা-বাড়িতে সিসিসি ক্যামরা বসানোর নির্দেশ

মিজবাউল হক, চকরিয়া  :
সারাদেশে হঠাৎ করে জঙ্গিরা মাথাচাড়া উঠেছে। বাড়ছে আত্মঘাতি বোমা হামলা। নতুন নতুন আবিস্কার হচ্ছে জঙ্গি আস্তানা। এতে জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করেছে চকরিয়া থানা পুলিশ। বিশেষ করে পৌরশহরের ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রত্যেক বাসাবাড়িতে সিসিসি ক্যামরা বসানোর নিদের্শনা দিয়েছে পুলিশ।
চকরিয়া পৌরশহরের বাসাবাড়িতে বসবাসকারীদের ১৬ ধরনের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। মুলত ভাড়াটিয়ার কী কাজ করেন, কোন স্থান থেকে এসেছে, পরিবারে সদস্যরা কী করে সেসব বিষয় জানাতে হবে পুলিশের দেয়া ফরমে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত একটি ফরম দেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা পর্যায়েও জঙ্গিদের তৎপরতা সামনে আসার পর গ্রামেও নজর দিচ্ছে পুলিশ। ফলে এবার উপজেলার শহর গুলোতে বসবাসকারীদেরও বিভিন্ন বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের আস্তানা ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর প্রথমে রাজধানীতে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছিল পুলিশ। কিন্তু ওইসময় উপজেলা পর্যায়ে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগহের বিষয়ে অতটা গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে উপজেলা পর্যায়ে জঙ্গিদের বাসাবাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ার পর নজরে আসে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি দেশে জঙ্গিরা গুরুত্বপূর্ন স্থানে আত্মঘাতি বোমা হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে সীতাকুন্ড, মিরাইশরাই, সিলেট, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট, গাজীপুর সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে জঙ্গিরা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। সেখানে তারা সোসাইড ভেস্ট বা আত্মঘাতি বেল্ট পরে আত্মহত্যা করছেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ছেন। তাছাড়া বিভিন্ন গুরুত্ব পয়েন্টে পুলিশ বক্সে আত্মঘাতি বোমা হামলা করছেন। তাদের আত্মঘাতি হামলায় মানুষ হত্যা এবং জনজীবনে এক ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে একধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, চকরিয়া পৌরশহরে প্রায় দুই হাজার দালান বাড়ি রয়েছে। ওইসব বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানে সাধারণ মানুষের বসবাস নির্ভিঘেœ করতে চকরিয়া থানা পুলিশ তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করেছেন। জঙ্গি তৎপরতা, বোমা তৈরীর কার্যক্রম এবং জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ নির্মূল করাই হচ্ছে পুলিশের লক্ষ্য। মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রত্যেক বিল্ডিংয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামরা (সিসিসি ক্যামরা) বসানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ে বাসাবাড়িতে সিসিসি ক্যামরা বসাতে বাড়ির মালিককে বলা হয়েছে হবে বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম জানান, সম্প্রতি সময়ে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে জঙ্গিদের হামলা বেড়ে চলছে। অনেক সময় জঙ্গিরা ছদ্ধনামে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মঘাতি বোমা হামলা, বোমা তৈরী করছেন। এরপর তারা জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে আত্মঘাতি বোমা হামলা করছেন। এজন্য জঙ্গিদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পৌরশহরের অধিকাংশ বাড়ির তথ্য নেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেক বাড়িতে সিসিসি ক্যামরা বসাতে হবে বলে তিনি জানান।
চকরিয়া জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রিুদ্ধে তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন ইলমা নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গত ২৯ মার্চ ওই সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের এক আলোচনা সভা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো সাহেদুল বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পৌরশহরের বাসাবাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাড়ির মালিক পুলিশের কাছে তথ্য দিচ্ছেন। এধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চকরিয়ায় না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: