ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেড়িবাঁধ সংস্কার না করে ঠিকাদার লাপাত্তা, মগনামায় আতঙ্ক

bad kutubপেকুয়া প্রতিনিধি :::

“আগামী বর্ষা মৌসুমে সাগরের পানিতে আবারো প্লাবিত হবে মগনামাবাসী। বিগত বর্ষা মৌসুমের মত এবারেও সাগরের পানিতে ভাসতে হবে আমাদের। সরকার মগনামাবাসীর জন্য অনেক কিছু করেছেন, তাই আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ঠিকাদারের অবহেলার কারণে হয়তো আমরা চরম দুর্ভোগ পোহাতে যাচ্ছি। বাঁধ সংস্কারের জন্য সরকার জরুরী (ইমার্জেন্সি) বরাদ্দ প্রদান করলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ বাস্তবায়ন না করায় আমাদের এই করুণ দশা।” কথাগুলো বলছিলেন পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা কাকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মাঝি।

একই এলাকার বদি আলম সওদাগর, মোজাফ্ফর আহমদ, শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তাফাসহ আরো বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বর্তমানে এ এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোন সময়ে তা ভেঙ্গ পড়তে পারে। এতে এই এলাকার একমাত্র ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবণসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতঘর সাগর বক্ষে চলে যেতেও পারে। উপজেলার উপকূলীয় এলাকাসমূহে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও মগনামা ইউনিয়নের সবচেয়ে দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা এ এলাকায় তা হচ্ছেনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, বিগত বর্ষা মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে মগনামা পুরো এলাকায় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁকপাড়া অংশে। সরকারী উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা দফা দফায় কাঁকপাড়া অংশ পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৮চেইন বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৩৫লাখ টাকার জরুরী বরাদ্ধ দেয়। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন রুহুল কাদের মানিক নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারপর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার। বন্ধ থেকে যায় কাঁকপাড়া অংশের বেড়িবাধ সংস্কারের কাজ।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহেদুল্লাহ ও জায়েদুল হক বলেন, ওই এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দুই বছর সময় বেধে দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। তাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ ঠেকসইভাবে নির্মাণ করতে সময় নিয়ে কাজ করতে হবে তাদের। আমরা যতদুর জানি, আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বেড়িবাঁধের ওই অংশের কাজ শুরু করবেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আক্রমনে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে ইউনিয়নের ২০হাজার মানুষ প্লাবিত হয়েছিল। জোয়ার ভাটায় পরিণত হয়েছিল পুরো মগনামা। পরে চিংড়ি ঘের মালিক ও আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিং বাঁধের মাধ্যেমে টেকানো হয়েছিল জোয়ারের পানি। কিন্তু ১০/১৫ফিটের ওই ছোট বাঁধ আগামী বর্ষা মৌসুমের কতদিনইবা ঠিকবে তা বলা মুশকিল। তাই আমি চাই মগনামা ইউনিয়নের মানুষের জানমাল রক্ষার্থে অতি দ্রুতই জরুরীভাবে বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে রিং বাঁধটি আরো শক্তিশালী করা হোক। যাতে অন্তত আগামী বর্ষা মৌসুমে মগনামাবাসীকে জোয়ার ভাটার সাথে যুদ্ধ করতে না হয়।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এব্যাপারে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বাাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিক বলেন, মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া অংশের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় ওই কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। পুণরায় যথাযথ নিয়মানুসারে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।

পাঠকের মতামত: