ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

শীতকালে শীত নেই চৈত্রে নেই গরম

1490194147খর তাপ-আগুন হাওয়া নিয়ে আসে চৈত্র। রোদের আঁঁচে পোড়ে মাটি। ঝড়ে ওড়ে ধূলো-বালি, ঝরা পাতারা। প্রচণ্ড গরম আর তাতানো রোদ্দুরে হাফিয়ে ওঠে প্রানি জগত। দারুণ অগ্নিবানে তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে প্রকৃতি। অথচ চৈত্রের প্রথম পক্ষ চললেও এসবের দেখা নেই। খেয়ালী প্রকৃতি অধিকার করে নিয়েছে ঋতুচক্রকে।

এবার শীতকালটা গেছে তীব্র শীতের আশায় আশায়। শীতের দশপ্রহরন না ছড়িয়েই বিদায় নিয়েছে মাঘ। অতঃপর বসন্ত এসেছে দখিনা হাওয়ায়। তবে শীতকে এখনো বিদায় দিতে পারেনি আবহাওয়া। গত বছরের চেয়ে এবারের পৌষ মাসের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বেড়েছিল।

বৃষ্টিকে সঙ্গী করে এবার চৈত্র এসেছে। শিরশিরে বাতাস। এখনো বইছে উত্তরীয় শীতের হাওয়া। দিনের বেলায় গভীর রাতে ফিরেছে শীত-শীত ভাব, সঙ্গে দক্ষিণী হাওয়া। বেশিরভাগ বাড়িতে এখনো শীতের লেপ সরাচ্ছে না খাট থেকে। ভোর রাতে পাতলা কাঁথায় শীত তাড়ানো যায় না। সাঝ-প্রভাতে কুয়াশা নেমে আসছে উত্তরের অনেক জনপদে। আকাশে ঘাকছে মেঘমালা।

কয়েকজন আবহাওয়াবিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এটা বিকিরণজনিত ঠাণ্ডা। বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাস আসছে না। আসছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। এ বাতাস শুষ্ক এবং ঠান্ডা হয়ে থাকে। যে কারণে সুর্যের তাপ কমে গেলে শীতের অনুভূতি হচ্ছে। আর্দ্রতা একটু বেশি থাকলে আবহাওয়া কিছুটা গরম হতে পারত। মেঘমুক্ত আকাশ বলে দিনের বেলা প্রখর সূর্যালোক থাকছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও রাতে তা দ্রুত নেমে যাচ্ছে। মেঘ ও আর্দ্রতা ভূপৃষ্ঠে তাপ ধরে রাখতে সহায়তা করে। এ দুটো নেই বলে শেষ রাতের দিকে ভূ-উপরিতল তুলনামুলক ঠাণ্ডা হয়ে যায় । এ সময় আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকার আরো একটি কারণ হলো উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় নামে আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিরাজমান। উচ্চচাপ বলয়ের আওতায় যেসব এলাকা থাকে, তা খুবই ঠাণ্ডা।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান,অতীতে চৈত্র মাসে এমন শীত পড়েছে সেই রেকর্ড মিলছে না। বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। আবহাওয়ার এই অস্বাভাবিকতা অভাবনীয়। সবাই বিস্মিত হচ্ছেন। তিনি জানান, সামনের সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। গরম বাড়বে ধীরে ধীরে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত বাতাস বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে থাকবে না ঠাণ্ডা অনুভূতি।

তিনি বলেন,এবার চৈত্র মাসে বৃস্টি হয়েছে কয়েকদিন। এখনো আকাশ মেঘলা থাকছে অনেক এলাকায়। ফলে শীত অনুভূতি পুরোপুরি এখনো যায়নি।

বুধবার ৮ চৈত্র রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল১৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ ঠিক একছর আগে এই একই দিনে ঢাকার তাপমাত্রা ছিলো ২৪.৬ ডিগ্রি। গতকাল চট্রগ্রামে সর্ব নুি তাপমাত্রা ছিলো দিঘিনালায় ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতবছর ছিলো ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি। গতকাল শ্রীমঙ্গলে ১৪.৬,নেত্রকোনায় ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিলো।

ঈশ্বরদী ১৭.৫,রংপুরের রাজারহাটে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়মে চৈত্রের গরমই কালবৈশাখীর ভিত গড়ে। কিন্তু তেমন গরম না পড়ায় বৈকালিক ঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। মার্চের মাঝামাঝি মাটি এতটাই গরম হয় যে বাতাসও গরম হয়ে উপরের দিকে ঠেলা মারতে শুরু করে। পরিণতিতে মাটির কাছাকাছি তৈরি হয় নিম্নচাপ, যা কি না বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প এনে তৈরি করে মেঘ। সেই মেঘ বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলেই ঘনীভূত হয়ে তৈরি হয় বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ।মেঘপুঞ্জ ভেঙে নামে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি।

মার্চে দু’টো কালবৈশাখী হওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু তিন বছর মার্চে কালবৈশাখী মেলেনি। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, শীতের বিদায় পিছিয়ে যাওয়াতেই মার্চের কপালে কালবৈশাখী জুটছে না।

আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করেন আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধুরী।

পাঠকের মতামত: