ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইলিশিয়ার গরুর বাজারটি কি আবার পরিষদ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাঠে যাবে!

::: এম.আর মাহমুদ :::

cow marmr mahচকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়া গরুর বাজারটি মনে হচ্ছে আবার ফিরে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে। গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে যাবে শালিশ/বিচার বা চিকিৎসার জন্য নয়। এ মাঠেই পহেলা বৈশাখ থেকে বিক্রি হবে গৃহপালিত পশু।

গেল বারের ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন সাহেব নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর ইলিশিয়ার ঐতিহ্যবাহী গরুর বাজারটি নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে। বেশ ক’বছর ওই মাঠে গরু বেচা-কেনার কারণে পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগামী লোকজন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। প্রতিনিয়ত গবাদি পশুর প্রস্রাব ও বিষ্ঠার কারণে পরিবেশ ছিল অসহনীয় ও বিষাক্ত। তারপরও লোভের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওইসব দূর্ভোগ ও জাঞ্জাল হজম করেছে। পরে ইউপি নির্বাচনে ওই চেয়ারম্যান পরাজিত হওয়ার পর বর্তমানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বাজারটি পূর্ববর্তী স্থান ইলিশিয়া বাজারে স্থানান্তর করে। ফলে ওই বাজারের বিভিন্ন এলাকার লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে গবাদি পশু বেচা-বিক্রি করে যাচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন বাজারটি নিলামের আওতায় এনে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব আদায়ের পদক্ষেপ নিয়ে সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, ‘পশ্চিম বড় ভেওলা গরুর বাজার’ এ নামে কোন বাজারের অস্তিত্ব ওই এলাকাতে নেই। হয়তো উপজেলা প্রশাসন পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে গরুর বাজারটি সরিয়ে নেয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।

সূত্রমতে, পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া গ্রামের বিশিষ্ট জমিদার খান বাহাদুর মকবুল আলী চৌধুরী ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে বাজার এলাকাসহ বেশকিছু ভূমি স্কুলের নামে দান করে গেছে। ওই দানের জমিতে গরুর বাজারটি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে বাজারটি স্থাপিত হওয়ায় এত বছর উপজেলা প্রশাসন বাজারটি নিলামের আওতায় আনতে পারেনি। উপজেলা পরিষদ রাজস্ব আয় বৃদ্ধির স্বার্থে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের খাস জমিতে অথবা ব্যক্তি বিশেষের দান করা জমিতে বাজার স্থাপন করার অধিকার কর্তৃপক্ষ রাখে। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের জমিতে গড়ে উঠা একটি প্রতিষ্ঠিত বাজার নিয়ে টানা হেঁচড়ার কোন যুক্তি আছে বলে সচেতন মহল মনে করে না। ইচ্ছা থাকলে ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার বাজার স্থাপন করতে পারে। পাবলিকের যেখানে ইচ্ছা সেখানে গিয়ে গবাদি পশু সহ অন্যান্য পণ্য বেচা-বিক্রি করবে। এতে উপজেলা পরিষদ বাজার লীজ দিয়ে রাজস্ব আয় করলে কোন সমস্যা নাই। ‘কর্তৃপক্ষ গোসল করবে তবে মাথার চুল ভেজাবে না’ এটার কোন যুক্তি নেই। আইনের হাত অনেক লম্বা, কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়ে রিট করতে পারে। তখন উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। চকরিয়া উপজেলার তালিকাভূক্ত বাজার লীজ দিয়ে সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও বাজারগুলোর অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। বাজারে নেই বেচা-বিক্রির সুবিধার্থে কোন সেট, গণসৌচাগার বা পানি নিষ্কাশনের ড্রেন। ফলে বেশিরভাগ বাজারের অবস্থায় হতশ্রী। গবাদি পশু চার পায়ের জন্তুর, লেজ, কান, শিং, মুখ, দাঁত সবই আছে। নেই শুধু কথা বলার যোগ্যতা। গবাদি পশু থাকে মালিকের নিয়ন্ত্রণে এক সময় গবাদি পশু দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। ইদানিং কালের পরিবর্তনের সাথে কলের লাঙলের কারণে গরু দিয়ে চাষ করা হয় না। তবে হতদরিদ্র লোকজন লোভের আশায় গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া লালন পালন করে যাচ্ছে। মাংসের লোভে প্রতিনিয়ত গরু-ছাগল-মহিষ চুরি বেড়েছে। প্রতিনিয়ত গরু চুরি হচ্ছে। কালে ভাদ্রে ধরা পড়লেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায়, কারন বেশিরভা গ গবাদি পশুর মালিক অসহায় ও হত দরিদ্র। অতএব কার গোয়ালে কে দেবে ধোয়া। সরকারী রাজস্ব আদায়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সু-প্রতিষ্ঠিত বাজার নিয়ে টানা হেচড়া করলে নিরীহ বাকস্বাধীনতাহীন গবাদী পশু গুলো দুর্ভোগে পড়বে। সাথে গবাদী পশু লালন পালনকারী মালিকেরাও। কারন বেশিরভাগ গবাদী পশুর মালিক বাচার তাগিদে গবাদী পশু লালন পালন করছে। তা বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে লাভটা কি? কথায় আছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় প্রান যায় নল খাগড়ার। বিগত সময়ে বাজারটি পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে নিয়ে যাওয়ার পর যে টুল আদায় করা হয়েছে, তা কোন খাতে জমা হয়েছে উপজেলা পরিষদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জবাব দিতে পারবে কি? এ বাজারটি পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে নিয়ে যাওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমিটি একাধিক রেজুলেশন করে জনস্বার্থে সরানোর দাবি জানালেও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ওই সময় কর্ণপাত করেনি। ###

পাঠকের মতামত: