ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ুর বৈরী তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্রের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে -চকরিয়ায় বন দিবস উদযাপন

mail.google.comএম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ‘‘বন প্রকৃতির শক্তির আধার’’-এই স্লোগানে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ, মেধাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইউএসএইড নেকম-ক্রেল প্রকল্পের আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বন দিবস-২০১৭ উদযাপন করা হয়েছে। উপজেলার খুটাখালী কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে শোভাযাত্রা পরবর্তী আলোচনা সভা। ক্রেল প্রকল্পের ফেসিলিটেটর গাওহার উদ্দিনের সঞ্চালনায় ও মেধাকচ্ছপিয়া সিএমসির সভাপতি এসএম আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বনদিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘বন প্রকৃতির শক্তির আধার’’ উপর প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন ক্রেল প্রকল্পের চকরিয়া উপজেলার সাইট অফিসার মো.আব্দুল কাইয়ুম। সভায় বিশেষ অতিথি ফাসিয়াখালী সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.আব্দুল মতিন, ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা অব্দুর রাজ্জাক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, মেধাকচ্ছপিয়া সিএমসির সহ-সভাপতি বাহাদুল হক, পিএফ সভাপতি আক্তার কামাল। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ক্রেল প্রকল্পের কর্মকর্তা ও বনবিভাগের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা সিএমসি ও সিপিজির সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বনকর্মী ও ক্রেল প্রকল্পের কর্মীদের সাথে অংশ নেন খুটাখালী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তমিজিয়া মাদ্রাসা এবং খুটাখালী কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান ও ফাসিয়াখালী বন্যপ্রানি রক্ষিত এলাকা দেশের জন্য আজ গর্ব। গত তিন বছরে সহ-ব্যব¯’াপনার আলোকে বনে আজ ব্যাপক পরিবর্তন ও নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আসুন সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্মল জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনাঞ্চল ও পরিবেশ গড়ে তোলার শপথ নিই।

বনদিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘বন প্রকৃতির শক্তির আধার’’ উপর মোঃ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রাণের অস্তিত্বের জন্য বনভূমি এবং শক্তির কোন বিকল্প নেই। ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২১ মার্চকে প্রতিবছর “বিশ্ব বন দিবস” হিসেবে সারাবিশ্বে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকেই বিভিন্ন দেশের বন বিভাগসহ যারা বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে বিশেষ করে প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতিবছর বিশ্ব বন দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে বর্তমানে বনের অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা, দুর্যোগ, প্রশমনসহ পরিবেশ বিষয়ক বিষয়াদি বিবেচনা করে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে “বন প্রকৃতির শক্তির আধার”।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সহকারি বনসংরক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, আজকের এই আয়োজনের জন্য ক্রেল প্রকল্প ও সহ-ব্যব¯’াপনা কমিটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহ-ব্যব¯’াপনা কমিটির সহযোগিতা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ক্রেল প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বন ও বন্যপ্রাণি ধ্বংসকারীদের সচেতন করছে পাশাপাশি তাদের বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা করে অনন্য নজির রাখছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক সময় বনাঞ্চলের ঘনত্ব বেশি ছিলো। কিন্তু বর্তমান পেক্ষাপটে তা ক্ষয় হয়ে দাঁিড়য়েছে মাত্র ১০ শতাংশে। এ অবস্থার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনভ’মি ও জীববৈচিত্র্য। মুলত বনাঞ্চলের পরিধি কমে যাওয়ায় বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। যেই কারনে বায়ুমন্ডলে কার্বণ ও গ্রীন হাউজ গ্যাস বাড়ছে, বৃষ্টি কমে যাচ্ছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, অসময়ে অধিক বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধস হয়ে নদী-নালা খাল বিল ভরাট হচ্ছে। এসব বিরূপ প্রভাবের কারনে বর্তমানে জনসাধারণ ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, জমির উর্বরতা কমছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, প্রতিবেশ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাচ্ছে। পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে সেচ ব্যবস্থ অচল হয়ে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ুর বৈরী তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলের সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে বনাঞ্চল এবং জীববৈচিত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই জন্য সমাজের সকলস্থরের নাগরিককে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে।

আলোচনা পরবর্তীতে চারটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রিদের অংশগ্রহনে আন্তর্জাতিক বন দিবসের উপর কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কুইজর প্রতিযোগিদের বিজয়ীদের মাঝে ক্রেষ্ট ও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি সহকারি বনসংরক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ। #

পাঠকের মতামত: