ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আ’লীগকে ক্ষমতায় রাখতেই ২০১৪ সালের নির্বাচনে ‘র’ এর ভূমিকা ছিল -ফখরুল

Fakhrulস্টাফ  রিপোর্টার ::::

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে ২০০১ সালে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে বলেছিলেন, গ্যাস রপ্তানিতে তিনি রাজি হননি বলে ২০০১ সালে -র- ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানো হয়েছিল। বিএনপি মহাসচিব জবাবে পাল্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই বরং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ‘র’ এর ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা হতবাক হয়েছি। এত বড় একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, এটা আমাদের চিন্তার মধ্যেই আসে না। এই উক্তির মধ্য দিয়ে তিনি এটা প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এদেশে বিদেশীরা কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম সরকার পরিবর্তনে বা ইন্টারফেয়ারেন্সের মধ্য দিয়ে আছে। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে বিদেশীরা ভূমিকা রাখলে আওয়ামী লীগ বিদেশীদের কাছে কী মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তা জানতে চান মির্জা ফখরুল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এখানে আসলেন, সব জায়গায় দৌড়ালেন এবং এরশাদ সাহেবের কাছেও গেলেন, তাকে নির্বাচনে নিয়ে গেলেন। আমরা কি এটাই ধারণা করব বা দেশের মানুষ এটাই মনে করবে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ‘র’ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে, ভারত সরকার বড় ভূমিকা পালন করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ দাবি করে ফখরুল বলেন, তার রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি অবলীলায় মিথ্যাচার করেন, এই মিথ্যাচারগুলো করার ফলে যেটা হয়, জাতি আরও বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে ‘হাওয়া ভবন’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এমন সব কথা-বার্তা, যাতে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই, মিথ্যাচার সম্পূর্ণভাবে। এখন তো পাবলিক পারসেপশন হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই না কি বাইরের লোকজন বসে থাকে। কারা বসে থাকে আমরা জানি না, লোকজন বলে তাই।

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরের গিয়ে পানির কথা বলতে ভুলে গেছেন বলে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয় দাবি করে তার স্বপক্ষে তখনকার বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আলাপের প্রত্যেকটা যৌথ ইশতেহারে এসেছে। যখনই বেগম খালেদা জিয়া ভারতে গেছেন, তখন এই পানি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। বর্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, মেরিটিয়াম বাউন্ডারি নিয়ে কথা বলেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়াই বাংলা ভাষায় প্রথম বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান বিএনপি নেতা। সরকার উন্নয়নের ভ্রান্ত পরিসংখ্যান দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

 রোববার রাতে ঢাকার মালিবাগে ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন,এই প্রকল্পটি জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হচ্ছে, ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে এবং এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ওই রাস্তায় যারা যাতায়াত করেন, তারা জানেন যে কী ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোন জাতীয় নির্বাচন হবেনা মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় ঘটলে জনগণ তা রুখে দিবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ছাড়া অন্য কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হবে বলে ভারতীয় গণ্যমাধ্যমের খবরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ছাড়া দেশের স্বার্থবিরোধী অন্য কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, আশঙ্কাটা শুধু আমাদের না, আশঙ্কাটা ভারতের পত্র-পত্রিকায় বেশি বেরিয়ে এসেছে। ভারতের পত্র-পত্রিকায় বেশি এসেছে যে, ২৫ বছরের চুক্তি আবার একটা হতে যাচ্ছে- এই ধরনের একটা খবর। আমরা জানি না। আমরা সেই জন্য চাচ্ছি, ‘গভর্নমেন্ট শুড কাম আউট উইথ দ্য কনটেন্ট’ যে, সেখানে কী আলোচনা হতে যাচ্ছে- এটা বলা উচিত।

দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে যায় অর্থাৎ তার স্বার্থের সাথে সংঘাত ঘটে এই ধরনের কোনো চুক্তি বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, আমরা সব সময় আশাবাদী। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমরা আশা করে আছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে, যেহেতু তাদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে তিস্তার পানিটা অন্তত পাবো। আজ পর্যন্ত এক ফোঁটা পানি আমরা পাইনি। শুধু তাই না, পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হচ্ছে পানি দেওয়া সম্ভব না। দেখছি আমরা, পত্রিকাগুলোতে বলা হচ্ছে সম্ভবনা খুব কম। আমরা দেখছি, আমাদের ৫৪টা অভিন্ন নদীর পানি আমরা পাচ্ছি না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অনেক সুবিধা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো সুবিধা পায়নি বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলন, আমাদের দিক থেকে যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছে। ট্রানজিট দিয়ে দেওয়া হয়েছে, নদী পথে নৌ ও স্থল পথে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বন্দরগুলো ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বন্দর ব্যবহার করছে। সীমান্তে বাংলাদেশীদের বেআইনিভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে আলোচন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।

জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়ে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, এটা আইনে আসুক। আমরা গণহত্যার বিরুদ্ধে, আমরা কনডেম করেছি।

 নৌ বাহিনীর জন্য চীন থেকে আনা দুটি সাবমেরিনের বিষয়ে তিনি বলেন, সাবমেরিন যদি ডুবে ঠিক মতো এবং আর যদি শত্রু পক্ষের জাহাজকে মারতে পারে, তাহলে ওয়েলকাম জানাই। সংগ্রাম

পাঠকের মতামত: