ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালীর দর্শনীয় স্থান আদিনাথের আদিকথা

moheshkhali pic
এম রমজান আলী মহেশখালী ::

কক্্রবাজারের মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরের আদিকথা আধুনিক ছোয়ায় কিছু কিছু নিয়ম বিলুপ্ত হলেও কালের স্বাক্ষী হিসাবে তার ঐতিহ্য এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে। শ্যামল সবুজ বৃক্ষরাজিতে ডাকা এই আদিনাথ সমুদ্রের পাড়ে পাহাড়ের উপর এই আদিনাথ মন্দির। শিবের ১০৮টি নামের মধ্যে আদিনাম-আদিনাথ তার নামে মন্দির। শিবের প্রতীক শিব লিঙ্গ রয়েছে আদিনাথ মন্দিরে। অষ্টভুজার মন্দির রয়েছে শ্বেত পাথরে, ছোট অষ্টভুজার মন্দির। পূর্বে যা নেপাল রাজদরবারে ছিল। মূল মন্দির প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান ভবন ও অষ্টভুজার মন্দির স্থাপিত হয় প্রায় তিনশত বৎসর পূর্বে নেপাল রাজ্যের সহয়তায়। সবচেয়ে উলেখ্য যোগ্য এ পুরনো মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ধর্ম ভীরু এক মুসলমান। তাঁর নাম নুর মোহাম্মদ সিকদার। শিবের সাথে নুর মোহাম্মদ সিকদারের সর্ম্পক গড়ে ওঠে একটি গাভীর মাধ্যমে। মহেশখালীর তৎকালীন জমিদার হাজী নুর মোহাম্মদ সিকদারের একটি গাভী ছিল গাভিটা কিছুতেই বাড়ীতে দুধ দিত না। তিনি কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে পান যে, গাভীটা প্রতিদিন পাহাড়ে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট পাথরের উপর দাড়ালে স্বতস্ফুর্তভাবে দুধ গড়িয়ে পড়ে পাথরটিকে ভিজিয়ে দেয়। হাজী সাহেব এর পর গাভীটিকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন দুধের জন্যে। কিন্তু রাখতে পারেন না; রশি ছিড়ে গাভীটা ঠিকই নির্দ্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পাথরটিকে দুধে ভিজিয়ে দিতে থাকে।এর পরের ঘটনায় আরও জানা যায় যে, একদিন হাজী সাহেবের গাভীটি হারিয়ে যায়। বহু খোঁজা-খুঁজির পর গাভীটি পাওয়া না গেলে সিকদার এক রকম আশা ছেড়ে দেন। একদিন সিকদার সাহেব শিকারে যান। শিকারে গিয়ে তিনি দেখতে পান তাঁরই হারানো গাভীটি একটি মর্সৃন শীলের পাশে বসে আছে তিনি সাথে সাথে গাভীটি ও শীলটি বাড়ী নিয়ে যান দা, ছোরা, ইত্যাদি শান দেওয়ার জন্যে তিনি শিলটি ঘরে আনেন এবং গাভীটিও রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখেন। ঐ রাতে কিসের একটা শব্দে সিকদারের সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দেখতে পান যে, গাভীটি খোলা অবস্থায় শিলটির উপর দুধ ডালছে, অনবরত দুধ পড়তে পড়তে শিলটি ভিজে যাচ্ছে। ব্যাপারটি তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি আর কিছু না করে ঘুমিয়ে পড়েন।রাতে হাজী নুর মোহম্মদ স্বপ্ন দেখেন যে, তাঁকে বলা হচ্ছে একজন সৎ ব্রাহ্মণ দ্বারা মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে নচেৎ তিনি স্ব-বংশে বিনাশ হবেন স্বপ্নাদেশ পেয়ে হাজী সাহেব একশত একর জমি দান করেন এবং কাঁচা ঘরের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। সেই মন্দিরটি এখন নেই এবং তার স্থান বর্তমান মন্দির থেকে কিছু দুরে ছিল বলে জানাযায় হাজী নুর মোহাম্মদ সিকদার স্বপ্নে আর্দিষ্ট হয়ে তাঁর সেই গাভীর দুধ দ্বারা শিবক্লোনের পর পূজা অর্চনা চলতে থাকে। উলেখ্য ১৯১০ সালে শিব পাবার পূজা অর্চনা শুারু হলেও এ কিম্বদন্ধী দ্বীপ মহেশখালীতে শিবের আগমন ঘটে ত্রেতার যুগে। কথিত আছে- রাবণ ছিলেন শিবের ভক্ত। লংকা নিয়ে দেবকুল ও রাসকুলের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে রাসপতি রাবনের পে শিবের পূজা দেওয়া অনিয়ম হয়ে ওঠে। তাই রাবণ গোরপুর গিয়ে লংকা নেবার ইচ্ছা পোষন করে এতে শিব রাজি হয়ে যান। ফলে দেবকুল মহাদেবের এ বদন্যতায় মনুন্ন হয় এবং মহাদেব শিবকে ধরে বসেন। তখন মহাদেব শিব রাবণকে শর্ত দেয় যে, নেয়ার পথে তাঁকে কোথাও থামানো যাবে না। যদি কোথাও রাখা হয় তাহলে রাবণের পে তোলা আর সম্ভব হবে না’’।কথামত রাবণ শিবকে কাঁেধ তোলে লংকা অভিমুখে রওনা হন। পথে পুজা দেবার সময় হলে মৈনাকা পাহাড়ে রাখা হয়। আরো ও জানাযায় যে, এ সময় রাবনের প্রসাবের বেগ ও বৃদ্ধি পায় পূজা পর্ব শেষ করে রাবণ শিবকে তোলতে ব্যর্থ হয়। জনশ্রুতি আছে যে, মহেশখালীর মুতের ছড়াটি রাবণের প্রসাবের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। সেই থেকে শিব এ মৈনাক পাহাড়ে বাস করতে থাকে। পরবর্তীকালে মৈনাক পাহাড় মইসখাল হিল নামে পরিচিত হয় এবং রাবণের প্রথম পূজার স্থানটিতে আজকের আদিনাথ মন্দির গড়ে ওঠে। কিছুদিন পূজা চলার পর সিকদার সাহেব স্বপ্নে দেখেন যে, আদিনাথের পাশে অষ্টভূজার মন্দির স্থাপন করতে হবে। শিবের শক্তি অষ্টভূজা মুর্তিটি আনতে হবে নেপাল রাজদরবার থেকে। স্বপ্নে তিনি আরও আদিষ্ট হন যে, একজন সন্ন্যাসী, একজন মহিলা ও একজন কিশোর সমুদ্র তীরে পাওয়া যাবে। কিশোরটি এ মহেশখালী দ্বীপের মালিক। আর ঐ নাগা সন্ন্যাসীর মাধ্যমে অষ্টভূজা আনতে হবে। সিকদার সাহেব সত্যি সত্যিই নির্দেশিত ব্যক্তিদের সমুদ্র চরে দেখতে পান। নাগা সন্ন্যাসী সিকদার সাহেবের স্বপ্নের কথা অবহিত হয়ে অষ্টভূজার জন্য নেপাল গমন করে। দীর্ঘদিন থেকে বিশ্বাস অর্জন করে একরাতে অষ্টভুজার মুর্তিটি চুরি করে নেপাল থেকে পলায়ন করেন। পরদিন দেবী মুর্তি চুরি হবার ঘটনা প্রকাশ হয় এবং নেপাল রাজ্যের কিছু লোকজন তার পিছু ধাওয়া করে। অবশেষে কলকাতা এসে নাগা সন্ন্যাসী গ্রেফতার হন।  কলকাতা এক আদালতে মামলা উঠে ধরা পড়ে সন্ন্যাসী কান্নাকাটি করে প্রার্থনা জানান। তিনি জেলে বসে ভাবতে  থাকেন, কিভাবে অষ্টভূজা ফিরে পাওয়া যায়। বিচারের দিন তিনি স্বপ্ন দেখেন, তোমার মুখে যা আসে তা বল- অবশ্যই ফল  পাবে। নাগা সন্ন্যাসী সেই অনুসারে বিচার চলাকালে রাজাকে জিজ্ঞাসা করেন তার চুরি হয়ে যাওয়া মুর্তি রং শ্বেত শ্রভ্র। সন্ন্যাসী স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী প্রতিবাদ করে বলেন- তার কাছে যে মুর্তি রয়েছে তার রং সাদা নয় কালো। তখন আবরণ উম্মোচন করে দেখা যায়, সন্ন্যাসির কথিত অষ্টভূজা কালো। ফলে রাজা মামলা প্রত্যাহার করে নেন এবং রহস্য বুঝতে পারেন।

পাঠকের মতামত: