ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জেলায় বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::images.duckduckgo.com

জেলাব্যাপী বেড়ে চলছে সড়ক দুর্ঘটনা। জেলার ৭ উপজেলার সংশ্লিষ্ট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে চলাচলরত টমটম, বাস-মিনিবাস, এসি-ননএসি, ট্রাক, কার-মাইক্রো, সিএনজি, ট্যাক্সি, রিক্সা, মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে এমন কোন যানবাহন নেই দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে না। এসব দূর্ঘটনার কারণে মৃত্যুর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত পঙ্গুত্ববরণ করছেন জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। যার কারণে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন জেলার সচেতন মহল।
এদিকে জেলাব্যাপী অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, নেশাগ্রস্থ চালকের গাড়ি ড্রাইভ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অশিক্ষিত চালক দিয়ে গাড়ি চালানো কারণে জেলায় সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি করেছেন অনেকে। দূর্ঘটনা পতিত লোকদের টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করা ও চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে জেলায় সড়ক দূর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না দাবি করেছেন অনেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইদানিং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন জেলার কোন না কোন অঞ্চল থেকে আনা হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত স্থানীয়দের। এদের মধ্যে অনেকে আবার পর্যটকও। হাসপাতালে আনার পর অনেকে মারাও যাচ্ছে। দূর্ঘটনা গুরুতর হওয়ায় অনেক রোগীকে অন্যত্রে রেফার করাও হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ চিরকালের জন্য পঙ্গুত্বও বরন করছেন।
জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর রামুর রশিদনগর এলাকায়  অদক্ষ বাসের হেলপার গাড়ি চালানোর কারণে দূর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছিল। একইভাবে ওই বৎসর ১৯ ফেব্রুয়ারি রামুর খুনিয়াপালং এলাকায় বাস চাপায় নিহত হন এক পর্যটক। বেপরোয়া ডাম্পার ট্রাকের ধাক্কায় গত ৬ জুন উখিয়ার পালংখালী এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন ২ জন ও আহত হন ৩ জন যাত্রী। গত ১৭ নভেম্বর রামুর রশিদনগরে বেপরোয়া মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত হয় ৬ বৎসরের এক শিশু। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার হারবাং ও রামুর পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয় ১১ জন। গত ২৩ জানুয়ারি মহেশখালী সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী। এভাবে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদরের সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিদিন ঘটছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর পর্যšত্ম জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১৯৬৪ টি দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২৭৬ জন। আর এসব দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৪০৯৫ জন। দূর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনÍগম ব্যক্তিদের পাশাপাশি সেনা সদস্য, ব্যাংক কর্মকর্তা, স্কুল শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মন্ত্রীপুত্র এবং ব্যবসায়ী ও জেলার সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
দাবি উঠেছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ট্রাফিক আইন না মানা, দায়িত্বে অবহেলা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অদক্ষতা ও অসতর্কতা, অশিক্ষিত লোকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে জেলায় সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। এসব চালকরা অশিক্ষিত হওয়ায় ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত করানো যাচ্ছে না। যার কারণে মানছেন না নিয়ম-কানুন। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক কাজ করছে বেপরোয়া মনোভাব। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে মরণনাশী এই সড়ক দূর্ঘটনা।
জেলার সচেতন মহলের দাবি, সড়ক দূর্ঘটনা রোধে মালিক ও চালকদের একইসাথে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গাড়ির মালিকরা যাতে অশিক্ষিত ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি না দেয় তার জন্য মালিকদের বিরুদ্ধে জরুরিভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দফ্তরের মাধ্যমে চালকদের প্রশিক্ষণ দিলে সড়ক দূর্ঘটনা অনেকট কমে আসবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার যুবকদের উৎসাহিত করা গেলে অনেক তাজা প্রাণ সড়ক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে।

পাঠকের মতামত: