ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবা প্রতিরোধে নিষিদ্ধ হচ্ছে সিউডোফেড্রিন আমদানি: রয়টার্স

বিদেশ ডেস্ক :44
বাংলাদেশে অবৈধ ইয়াবা উদ্ধারের চিত্রইয়াবা প্রতিরোধে সর্দি-কাশির ওষুধ তৈরির উপাদান সিউডোফেড্রিন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অবৈধ মাদক ইয়াবা ট্যাবলেটের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সিউডোফেড্রিন দিয়েই মেটাফেটামিন তৈরি করা হয়। মেটাফেটামিন ও ক্যাফেইন দিয়েই ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরি করা হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ এখন ইয়াবার বিক্রি বাড়ছে। শুধু বাংলাদেশেই বছরে ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয়।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করা হয়। মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম অঞ্চলে এসব ট্যাবলেট উৎপাদন করা হয়। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি অনেক কম।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকেই সিউডোফেড্রিন আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই নিষিদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে মিয়ানমারসহ কোনও প্রতিবেশী দেশই অভিযোগ করতে পারবে না যে, বাংলাদেশ ইয়াবার আখড়া।’

উল্লেখ্য, ফুসফুস, কান-গলার প্রদাহ, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি উপশমের ওষুধে সিউডোফেড্রিন ব্যবহার করা হয়। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ১৫-২০টি ব্র্যান্ড ট্যাবলেট ও সিরাপ পাওয়া যায়। তবে এর সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে মাদকদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়েই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মেক্সিকোও সিউডোফেড্রিন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।

রয়টার্সের হাতে আসা সরকারি একটি বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুসারে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে এই ওষুধের আমদানি ৬ গুণ বেড়ে গেছে।

এর আগে ২০১৪ সলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অথরিটির (ডিইএ) জানিয়েছিল, সিউডোফেড্রিন পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিশ্বের সন্দেহভাজন শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ বৈধভাবে ব্রাজিল, ইতালি, ভারত, চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে সিউডোফেড্রিন আমদানি করে। আমদানি করা সিউডোফেড্রিন দিয়ে আট ধরনের ওষুধ প্রস্তুত করে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি।

আন্তর্জাতিক ওষুধ নির্মাতা গ্লাক্সোস্মিথকিন- এর বাংলাদেশ শাখা জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে সিউডোফেড্রিন দিয়ে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সিউডোফেড্রিন আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এক কেজি সিউডোফেড্রিনের মূল্য ৬৭ ডলার। এই পরিমাণ সিউডোফেড্রিন দিয়ে ৪ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরি করা সম্ভব। যার মূল্য দাঁড়ায় ৬ লাখ ডলারেরও বেশি।

এ কারণে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিউডোফেড্রিন অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে মনে করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কেমিক্যাল পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা। তিনি অবশ্য কোনও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেননি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র, অবৈধপথে সিউডোফেড্রিন পাচারের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিকে চিহ্নিত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

সিউডোফেড্রিন আমদানি নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প থাকায় সর্দি-কাশির ওষুধ উৎপাদন সংকটে পড়বে না বলে মনে করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক গোলাম কিবরিয়া।

মিয়ানমারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতে অনিয়ন্ত্রিত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো প্রচুর পরিমাণে সিউডোফেড্রিন উৎপাদন করছে এবং তা পাচার হয়ে দেশটিতে প্রবেশ করছে। তা দিয়ে ইয়াবা তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেছেন, এ ধরনের পাচার বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদক ও অপরাধবিষয়ক জাতিসংঘের আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণের ফলেই ভালো ফল আসতে পারে। তবে একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক সময় অবৈধ বাজার তৈরি করে’।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, সিউডোফেড্রিন আমদানি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শতাধিক ইয়াবা পাচারকারীর একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তালিকায় থাকা অনেককে এরই মধ্যে গ্রেফতার কার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে ইয়াবাবিরোধী অভিযান তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা গতমাসে রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদক সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের সহজে চিহ্নিত করা যায় না। অথচ ইয়াবাবহনকারী হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হারে কাজে লাগানো হচ্ছে।

এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইয়াবা পাচার কমিয়ে আনতে চলতি মাসে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: