ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নিষ্ক্রিয়দের ডাকছেন খালেদা জিয়া: বিএনপিতে নতুন হাওয়া

BNPবাংলা ট্রিবিউন:
বিএনপিবিএনপির পালে নতুন হাওয়া বইছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির ‘নিষ্ক্রিয়-সংস্কারপন্থী’দের ডেকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন খোদ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ধারাবাহিকভাবে ‘নিষ্ক্রিয়-সংস্কারপন্থী’দের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে তাদের বিএনপিতে স্বাগত জানাবেন খালেদা জিয়া। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত দুই নেতাকে ডাকার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে এলো তার সংগঠন গোছানোর চিন্তা-ভাবনা। দলটির নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগ সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছে।

চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, গত বছর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। যদিও দলে ও দলের মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবীদের নানা পরামর্শ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পালাবদলের কারণে সে ঐক্য গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের সে ঐক্যকে জোরদার করার চেষ্টা শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।
সূত্রের দাবি, অন্যান্য দলের সঙ্গে ঐক্যচেষ্টার আগেই বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্ত করতে বদ্ধ পরিকর খালেদা জিয়া। এ কারণে বিগত দিনে নিষ্ক্রিয় ও নানা সময়ে সংস্কারপন্থী ছিলেন, এমন নেতাদের ডাকা শুরু করেছেন তিনি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২ টায় বৈঠক করেন আলোচিত সংস্কারপন্থীদের মধ্যে জহির উদ্দিন স্বপন ও নরসিংদী জেলার সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুলের সঙ্গে। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আধাঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বপন ও বকুলকে দলে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

জানতে চাইলে জহির উদ্দিন স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাল রাত ১২টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনের বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল, আজ দেশ ও জাতির জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। ’

জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘দলকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তাদের দু’জনকে ডেকেছিলেন খালেদা জিয়া।’ তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে বিএনপিকে ১৯৯১-এর জায়গায় ফিরিয়ে নিতে যেতে হবে। আমরা দু’জন ছিলাম। পর্যায়ক্রমে অন্য নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের ডেকে কথা বলবেন ম্যাডাম। সবাইকে সক্রিয় করা হবে।
কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নে স্বপন বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনও দায়-দায়িত্ব নিয়ে কোনও কথা হয়নি। মূলত সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে কাজের মধ্যে যুক্ত হওয়ার জন্য দলীয় প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন।’
সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার দলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতার অবসান আমার মধ্যে নতুন করে আশা এবং উৎসাহ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে দলের একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সঠিকপথে কাজ করার জন্য নিবেদিত থাকব। পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য।’
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রচার ছিল, সংস্কারপন্থী ও নিষ্ক্রিয়দের দলে জায়গা দেওয়া হবে। যদিও কমিটিতে নিষ্ক্রিয়দের কোনও স্থান মেলেনি।
এদিকে নিষ্ক্রিয়দের দলে ডাকায় বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নিষ্ক্রিয়রা সক্রিয় হবেন, এটি দলের জন্য সুখবর। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো সুখবর। ভুলভ্রান্তি ঠিক করে মূলস্রোতে ফিরতে চাইলে, আপত্তি থাকার কথা নেই নিশ্চয়। আমি স্বাগত জানাব।’প্রায়প্
প্রায় একইরকম মনোভাব প্রকাশ করলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যারা দল করতে চায়, দল তো স্বাগত জানাবেই। খারাপভাবে নেওয়ার কিছু নেই। ভবিষ্যতে কি হবে, এ নিয়ে আগাম কিছু বলার সুযোগ নেই। আগাম মন্তব্যও ভালো না। ’
বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্য তৈরিতে খালেদা জিয়া যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি আরও বেগবান করতে চাইছেন বিএনপি প্রধান। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে বিএনপি ছেড়ে যাওয়া বা নিষ্ক্রিয়দের দলে ডাকবেন তিনি। তবে যারা বিএনপি ছেড়ে দল করে ফেলেছেন, সেক্ষেত্রে ভিন্ন কোনও সিদ্ধান্ত থাকতে পারে খালেদা জিয়ার।
এর আগে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘বিএনপির সাবেক দুই জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেই দল ভেঙে বিএনপিতে ফেরানোর চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত ছিল, যদিও দলের কোনও কোনও নেতার আপত্তিতে সেটি টেকেনি।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১/১১ সরকারের সময়েই বিএনপির বহিষ্কৃত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থীদের পৃথক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থীদের কেউ কেউ দলে ফিরলেও অনেকেই বিএনপিকে উপেক্ষিত ছিলেন। জহির উদ্দিন স্বপনদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই সংস্কারপন্থীদের দলে সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু করলেন খালেদা জিয়া।

পাঠকের মতামত: