ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

টেকনাফে পুরোদমে লবন উৎপাদন ধুম

আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ :
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের একটি পৌরসভাসহ চারটি ইউনিয়নে পুরোদমে লবন উৎপাদন ও বিক্রয়ের ধুম পড়েছে। চলতি বছর ২ হাজার ৮’শত পঞ্চাশ একর জমিতে লবন চাষাবাদ চলছে। তবে এখনো লবন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়নি। গত অর্থ বছর টেকনাফে ৮৮ হাজার ২শত মেট্রিক টন লবন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নভেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, হ্নীলার রঙ্গিখালী, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া, দমদমিয়া, জইল্যারদ্বীপ, জাদীমুরার নয়াপাড়া, মুচনী, লেদা, নাটুমরাপাড়া, ফুলের ডেইল, হোয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, খারাংখালী, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নোয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিলসহ লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন লবন উৎপাদনের ভরা মৌসুম। চাষীরা লবনের ন্যায্য মুল পাওয়ার আশায় কোমর বেঁধে মাঠে চাষ করছেন। সাধারণত আবহাওয়া লবণ চাষের অনুকূলে থাকলেও উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা গেলে চাষিরা দিনরাত খেটে লক্ষ্যমাত্রার অধিক লবণ উৎপাদন করে থাকেন।
এদিকে অনেক লবন উৎপাদনের অনেক জায়গায় পরিবহনের জন্য সড়ক বা পথ না থাকায় অনেক দূর থেকে উৎপাদনকৃত লবন কাঁধে করে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার হেঁটে রাস্তায় লবনের বস্তা নিয়ে আসতে হয়। পরে তা বাজারজতার করনের উদ্দেশ্যে ট্রাকে আনলোড করে থাকেন। এর ফলে অতিরিক্ত খরচের সম্মূখীন হতে হয় চাষীদের। তম্মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া অন্যতম।
অপরদিকে অধিকাংশ প্রান্তিক লবণ চাষি সহায় সম্বলহীন হওয়ায় মহাজনের টাকায় লবণ চাষে নেমেছেন বরাবরের মতো অনেকে। কক্সবাজার জেলায় চলতি বছর ৬৪ হাজার ১’শত পঁচিশ একর জমিতে লবন চাষ হচ্ছে বলে বিসিক সুত্রে জানা গেছে। তম্মধ্যে টেকনাফে ২ হাজার ৮’শত পঞ্চাশ একর জমিতে লবন উৎপাদন পুরোদমে চলছে। মাঠে প্রতি ৪০ শতকে ২’শত বিশ মন থেকে সাড়ে ৩’শত মন লবন উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি মন লবনের মূল্য ২’শত আশি টাকা। অথচ টেকনাফের বাজারে খোলা লবন প্রতি কেজি ২০ টাকা ও প্যাকেট গুড়া লবন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি করছে।
এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সবকিছু অনুকূলে থাকায় অন্য বছরের চেয়ে লবণ উৎপাদন একটু বেশী হবে বলে চাষীরা মনে করছেন। তবে গত বছরের তুলনায় লাভ একটু কম হতে পারে এমনটি মনে করছেন লবণ চাষে জড়িতরা। সাধারণত প্রতিবছর এই সময়ে পুরো টেকনাফ জুড়ে লবণ চাষের প্রতিযোগীতা চলে। গেল বছর লবণ চাষীরা অধিক লাভবান হওয়ায় এবারে জমির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জমির মূল্য দ্বিগুণ হলেও বর্গা নিয়ে চাষীরা কিন্তু আগাম লবণ মাঠে নেমে পড়েছেন। লবণের মূল্য থাকায় অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন এলাকায় চাষের জন্য নতুন ভাবে জমি আবাদের কাজ চলছে।
সরেজমি ঘুরে দেখা গেছে, এবছর নতুন জমি লবণ চাষের আওতায় এসেছে। কৃষকরা চাষ যোগ্য জমি লবণ চাষের উপযোগী করে তুলছেন। কেউ ট্রাক্টর, কেউ কোদাল দিয়ে লবণ মাঠ খুড়ছেন। কেউ কেউ পানি দিয়ে মাটি ভেজাচ্ছেন। আবার কোথাও লবন তুলছেন। কোথাও কোথাও বাজারজাতের জন্য গাড়ীতে আনলোড করছেন। আবাও অনেকে মাঠে গরা মেরে পলিথিন বিছানোর কাজ করছেন।
নাজিরপাড়ার লবন চাষী ফজল আহমদের পুত্র আবদুর রহমান বলেন, এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় আগে থেকে লবন উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে গত মৌসুমের চেয়ে এবছর আরো বেশী সুবিধা হবে। তবে ওই চাষী অভিযোগ করে বলেন, কারনে অকারণে প্রান্তিক লবণ চাষীরা অনেকটা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। কমিশন ভিত্তিতে লবণ মাঠে কাজ করার ফলে অনেকটা মুনাফা বঞ্চিত হতে হয়। তিনি চলতি বছর সাড়ে ১১ একর জমি লবন চাষাবাদ করছেন। তার অধীনে ৩’শত জন শ্রমিক ও চাষী চাষাবাদে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আশাবাদ করেন চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে এবং মুল্য সঠিক থাকলে প্রায় ১ কোটি টাকার চেয়ে বেশী লবন বিক্রি করতে পারবেন। পাশাপাশি ওই জমিতে বর্ষাকালে চিংড়ি চাষ করে থাকেন।
তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, আগে চাষকৃত শত শত একর জমি এখন অনাবাদী রয়েছে। সাবরাং বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনের কারণে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করায় লবন উৎপাদন সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে কোটি কোটি টাকার লবন উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জমি মালিকরা।
উত্তর আলীখালী এলাকার লবন চাষী মোঃ কাছিম বলেন, পুরো মৌসুমই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকে লবন চাষীরা। মূল্য বেশী থাকলেও কম ধরে মাঠ থেকে লবণ বিক্রয় করতে হয়। ফলে ন্যায্যমুল্য পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এখন যা মুল্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে লাভ-ক্ষতি সমান সমান।
বিসিকের টেকনাফ ইনচার্জ মিজানুর রহমান মিজান জানান, কক্সবাজার উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার লবণ চাষি লবণের আবাদ করেন। এসব চাষি আরো অর্ধ-লক্ষাধিক শ্রমিক লবণ চাষাবাদে নিয়োগ করে থাকেন। তম্মধ্যে টেকনাফে ২ হাজার ৫’শত পঁচাশি জন লবন চাষী মাঠে সক্রিয়ভাবে চাষাবাদ করছেন। তাদের রয়েছে আরো অনেক শ্রমিক। ফলে লক্ষাধিক উপকূলীয় বাসিন্দা এ লবণ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

পাঠকের মতামত: