ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভ্যালেন্টাইনস ডে : কোটি টাকার পুষ্পবাণিজ্য

flawছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ।।

আগামীকাল মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে)। প্রতিটি মানুষ তার প্রিয়জনকে আলাদা করেই ভালোবাসতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে এই দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে তরুণতরুণীদের আয়োজনের কমতি থাকে না। আর ফুল ছাড়া তো এই ভালোবাসা দিবস উদযাপনে কথা চিন্তাও করা যায় না। তাদের এই চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা কক্সবাজারের চকরিয়ার গোলাপ নগর খ্যাত বরইতলী ও হারবাং থেকে আগেভাগেই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল কিনে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে পাইকাররা আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন। তাছাড়া বর্তমানে দেশে শান্তি বিরাজ করায় এবারের ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে এমনটাই আশা চকরিয়ার চাষীদের।

বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের ফুল চাষীরা জানান, গোলাপ নগরখ্যাত বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারীপুরুষ শ্রমিক বাণিজ্যিকভাবে সৃজিত রকমারী ফুলের বাগানে পালাক্রমে কাজ করছেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুল বেচাকেনার ধুম পড়েছে এখানে। বিশেষ করে গোলাপ ও গাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে বেশি। এতে বেশি লাভের মুখ দেখবেন এখানকার চাষীরা।

চকরিয়ার বরইতলী থেকে পাইকারি দরে কিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে ফুল বিক্রি করেন সুভাষ দে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৫১০ হাজার পিস ফুল কেনা হয় চকরিয়ার বরইতলী থেকে। আর বিশেষ দিবসে তা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়। এবারের ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আগাম অর্ডার দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার গোলাপ ও গাডিওলাস ফুলের।’

বরইতলী একতা বাজার এলাকার ফুলচাষী নজির আহমদ বলেন, ‘আমি একসময় তামাকের চাষ করতাম। তখন মুনাফাও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি ও দিনরাত পরিশ্রমের কারণে শরীরের অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছিল না। তাই অন্যের দেখাদেখিতে তামাক চাষ ছেড়ে গত চারবছর ধরে ফুল চাষে উদ্যোগী হই। বর্তমানে দুইকানি (৪০ গণ্ডা) জমিতে গোলাপ ও গাডিওলাস ফুলের চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।’

নজির আহমদ আরো বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকাররা সরাসরি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে পাইকার আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে। এতে এবার কম করে হলেও দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব আমি।’

চাষীরা জানান, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকায় প্রতিটি গোলাপের দাম মানভেদে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার টাকায়। রকমারী রঙয়ের গাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। ফুল বিক্রি করে ভালো মূল্য পাওয়ায় চাষীদের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা ও ফুল তোলায় নিয়োজিত প্রায় পাঁচ শতাধিক নারীপুরুষ শ্রমিকের মুখেও হাসি ফুটেছে।

বাগান শ্রমিক বরইতলী পূর্ব পাড়ার আকলিমা বেগম ও বুড়ি খাতুন বলেন, ফুল বাগানে শ্রম দিয়ে প্রতিদিন রোজগার করছি। এতে পরিবারের অভাবঅনটন বলতে গেলে আর নেই।’

সরেজমিনে ফুল চাষী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের গোলাপ ফুলের গ্রাম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাগান থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামকক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলাপ ও গাডিওলাস ফুল সরবরাহ করা হয় পাইকারদের কাছে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে এসব বাগানের ফুলের কদর বেড়ে যায়। গত দুই দশক ধরে এখানকার চাষীরা রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ফুল চাষ করে আসছেন। প্রথমদিকে সামান্য জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হলেও বর্তমানে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১২০ একর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে।

বরইতলী ফুল বাগান মালিক সমিতির আহবায়ক মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ফুল চাষে সুদিন ফিরে এসেছে। আগেকার সেই পরিস্থিতিও বদলে গেছে। দেশে শান্তি বিরাজ করায় পুরোদমে ফুলচাষে নেমেছেন চাষীরা। তাই আশা করছি, এবারের ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ও গাডিওলাসসহ রকমারী ফুল বিক্রি হবে কোটি টাকার। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকারী ক্রেতারা বাগানে এসে ফুল নিতে শুরু করেছেন। অনেকে আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছেন। রবিবার (গতকাল) থেকে আগাম অর্ডারের সবকটি বাগানের সিংহভাগ ফুল বিক্রি শুরু হয়েছে। যা মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উলাহ বলেন, ‘বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের ১২০ একর জমিতে পুরোদমে ফুলের চাষ করছে হাজারো চাষী। বর্তমানে রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকায় এবারের ভালোবাসা দিবসসহ সবকটি দিবসে ফুল বিক্রিও ভালো হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষীরা।’

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সদস্য এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের সিংহভাগ মানুষ একসময় তাদের জমিতে তামাকের আবাদ করত। তামাক আবাদের কারণে তাদের যে পরিবেশ ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে তা আমি তাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাই তারা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে তামাক চাষ ছেড়ে ফুলচাষের দিকেই মনযোগী হয়েছেন। ইতোমধ্যে ফুলচাষ করে আমার ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় ফুল বিক্রিও বেড়েছে।’

 

পাঠকের মতামত: