ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে দোকান কর্মচারী থেকে ইয়াবা সম্রাট রাশেদ

Rashed-Yabaঅনলাইন ডেস্ক :::

অপরাধ জগতে পা পড়ে মানবপাচার দিয়ে। একসময় সাগর পথে নিজেও মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়। তবে ভাগ্য বিপরীতে থাকায় দীর্ঘদিন সেখানে জেলজীবন কাটাতে হয় তাকে। পরে বাংলাদেশে ফেরত এসে শুরু করে ইয়াবা কারবার। শক্তিশালি সিন্ডিকেটে জড়িয়ে এখন ইয়াবা জগতের স¤্রাটে পরিণত হয়েছে রাশেদ নামের এক যুবক। পুরো নাম রাশেদুল হক। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল ইউনিয়নের ডেইলপাড়া এলাকার আমির সুলতানের ছেলে। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা রাশেদ ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টায় সৎ পথের অনেক কর্মে জড়ায়। কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়। পরে রাশেদ চাকরির সুবাদে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা পাচারে। পাচার করতে গিয়ে চট্টগ্রামে দু’বার আটকও হয়েছিল। মোটা অংকের চালানসহ আটক হয়ে দীর্ঘদিন জেলও কাটতে হয় তাকে। সূত্র মতে, ইয়াবা নিয়ে প্রথমবার চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় আটক হয়। এসময় দেড় বছর জেল কাটতে হয় তাকে। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পায়। এরপর বেশ কিছুদিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় চেকপোস্টে আবারও আটক হয় রাশেদ। ওই সময়ও দুই মাস জেল কাটতে হয় তাকে। গত মাস খানেক আগে সদরের চৌফলদ-ী ব্রিজ এলাকায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির

হাতে আটক হয় রাশেদ। ওই সময় রহস্যজনকভাবে পুলিশের হাত থেকে রক্ষায় পান তিনি।
সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি কলাতলীর হোটেল মোটেল জোনের হোটেল পারসিন থেকে রাশেদ সিন্ডিকেটের এক সদস্য ৯ হাজার ৭৮০টি ইয়াবা ও নগদ ৬ লক্ষ টাকা সহ পুলিশের হাতে আটক হয়। তবে ওই সময় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বেঁচে যায় ওই সিন্ডিকেটের নারী সদস্য সুমি আক্তার। অভিযানের এক ঘণ্টা আগেও ওই নারী হোটেলে ছিল। এ ঘটনায় আটক পাচারকারি ঈসমাইল হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছে পুলিশ। পরে আদালতে ঈসমাইলের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
এদিকে ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ আটকের ঘটনায় রাশেদের জড়িত থাকার বেশকিছু প্রমাণ বর্তমানে পুলিশের হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। তাই ঘটনার পর থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে রাশেদ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছে দাবি একটি সূত্রের।
এ ঘটনার অভিযানকারি সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার সিংহ জানান, আটক শ্যামলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে তার সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্তে চক্রের হোতারা বেরিয়ে আসবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের শুরুর দিকে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে রাশেদ। শক্তিশালি পাচার চক্রের সাথে দীর্ঘ সময় বেপরোয়াভাবে মানবপাচার করেন তিনি। তার সিন্ডিকেটের পাচারের অন্যতম রুট ছিল উপকূলীয় এলাকা খুরুস্কুল, চৌফলদ-ী ও নাজিরারটেক পয়েন্ট। তার হাত ধরে অন্তত তিন শতাধিক স্বপ্নবাজ পুরুষ মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়। এদের অনেকে জেল ও সাগরে আটকা পড়লেও গুটি কয়েক অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে।
তাদের সফলতার গল্প শুনে রাশেদও এক পর্যায়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়। পরে মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন জেল কাটেন তিনি। এরপর বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় তাকে। মালয়েশিয়ায় জেলে থাকাকালিন সময়ে টেকনাফের বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয় তার। দেশে ফেরত এসেই নতুন করে ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কয়েকবার। চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে দুইটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশেদ সিন্ডিকেটে তিনজন নারী পাচারকারী রয়েছে। তারা উখিয়া থেকে ইয়াবা গুলো সংগ্রহ করে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে আসে। পরে তাদের কাছ থেকে ইয়াবা গুলো রাশেদ নিজেই রিসিভ করেন। টেকনাফ থেকে ইয়াবাগুলো উখিয়া নিয়ে আসেন উখিয়ার তিনজন লোক। রাশেদ রিসিভ করার পর ইয়াবাগুলো খুরুস্কুলের ডেইলপাড়াস্থ তার নিজের বাড়ি ও চৌফলদ-ীস্থ বোনের বাড়িতে সংরক্ষণ করেন তিনি। পরে সেখান থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে হোটেল মোটেল জোনে রাশেদ নিজেই পাচার করেন। তবে কলাতলীতে পাচার কাজে তার সাথে সুমি নামে আরো একজন নারী রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে কাজ করেন শহরের প্রভাবশালী কিছু লোক।
শুধু হোটেল মোটেল জোন নয়, রাশেদ ও তার এক ঘনিষ্ট ব্যক্তি ইয়াবার চালান নিয়ে প্রায়ই ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাড়ি দেন। ইতোপূর্বে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাচারকালে তিনবার আটকও হয়েছিলেন রাশেদ। কিছুদিন আগে রাশেদ সিন্ডিকেটের মধ্যে ইয়াবা কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার কাছে রাশেদের বিরুদ্ধে বিচার দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় রাশেদের নিয়ন্ত্রণকারি এক প্রভাবশালী ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে বলে গোপন সূত্রের দাবি।
সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ বছর আগে শহরের বাহারছড়া মসজিদ সংলগ্ন মিজবাহ ট্রেডিং নামে একটি দোকানে চাকরি করতেন রাশেদ। ওই দোকান থেকে হোটেলের গ্লাস পরিষ্কারকসহ বিভিন্ন সামগ্রী হোটেল মোটেল জোনে সাপ্লাই হতো। ওই সামগ্রীর বোতলগুলোর আড়ালে দোকানের মালিক মিজবাহ কৌশলে রাশেদের অগোচরে তাকে দিয়ে ইয়াবা পাচার করতো। একপর্যায়ে মিজবাহ’র ইয়াবা পাচারের কৌশলটি জেনে যায় রাশেদ। লোভে পড়ে তখন থেকে রাশেদও প্রকাশ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে ইয়াবা পাচারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ইয়াবা মামলা আছে ঠিকই। কিন্তু এখন আমি ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত নয়। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে’।
এদিকে পুলিশ প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাশেদের সাথে একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে ইয়াবা পাচারে। যে সিন্ডিকেটে কলেজ ছাত্র ও নারী সদস্যও রয়েছে। তাদের ইয়াবা বিক্রিরহাট হলো কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন এলাকা এবং ঢাকা কেন্দ্রিক। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তেও নেমেছে প্রশাসন। পূর্বকোণ

পাঠকের মতামত: