ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শীর্ষ কর্মকর্তাসহ লাঞ্ছিত ২ ।। গ্রাহক অসন্তোষ : আনোয়ারায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুর

biddut khutiআনোয়ারা প্রতিনিধি ।।

আনোয়ারায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে স্থানীয় গ্রাহকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ডিজিএমসহ এক কর্মচারী। এসময় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অবরোধ ও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের একটি নতুন মিটার সংযোগ পেতে সরকারীভাবে লাগে বড় পরিবারের জন্য ৮০০ টাকা এবং গ্রাহক (সদস্য) ফি ৫০ টাকা। ছোট পরিবারের সংযোগ ফি ৬০০ টাকা এবং গ্রাহক (সদস্য) ফি ৫০ টাকা। তার সাথে ওয়্যারিং ও আনুষঙ্গিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে একটি নতুন মিটার সংযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, সেখানে দিতে হয় প্রতি মিটারের জন্য ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার উপরে। পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী, ইলেকট্রিশিয়ান এবং দালাল চক্র সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এসব মিটার সংযোগ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ। শুধু মিটার বাণিজ্য নয়, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, পুরোনো মিটার পরিবর্তন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমেও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাছাড়া সরকারীভাবে বিদ্যুতের খুঁটি বিনামূল্যে লাগানোর নির্দেশ থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। স্থা্‌নীয় গ্রাহক আবদুর রহিম জানান, নতুন মিটার সংযোগের জন্য সরাসরি টাকা জমা ২য় পৃষ্ঠার ৬ষ্ঠ

দেওয়ার পর মিটার সংযোগ পেতে মাসের পর মাস বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। আরো অফিসে মিটারের জন্য ধরনা দিতে দিতে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সংযোগ মিলেছে ২ বছর পর। আর দালালদের মাধ্যমে যারা ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে তাদের সংযোগ মিলেছে ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার স্থানীয় ২০/৩০ জন গ্রাহক হয়রানী ও নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে গেলে তিনি (ডিজিএম) স্থানীয় গ্রহাকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। উত্তেজিত গ্রাহকেরা ডিজিএম ও এক অফিস কর্মচারীকে লাঞ্চিত করে। এ সময় পল্লী বিদ্যুতের কিছু আসবাবপত্রও ভাংচুর করা হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তাকর্মচারীরা দৌড়ে বিলিং শাখায় গিয়ে গ্রীলে তালা লাগিয়ে দেন। এসময় কয়েক ঘন্টা পুরো অফিস অরক্ষিত ও ফাঁকা ছিল। সব ধরনের কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে আনোয়ারা থানার পুলিশ ও পল্লী বিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে স্থানীয় গ্রাহকদের সাথে বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় গ্রাহক শামীম ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, আমরা নতুন মিটার সংযোগ পেতে ৭১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি (ডিজিএম) তাদেরকে এ বিষয়ে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নন বলে জানান। শামীম বলেন, ‘এসময় তিনি আমাদের ভিতরে আটকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা চালালে গ্রাহকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবদুল্লাহ আল মামুন আজাদীকে জানান, সকালে কিছু গ্রাহক এসে তাকে মিটার সংযোগে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা বলে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমাকে জামায়াত শিবিরের লোক বলে শাসায়। এ সময় তারা আমার সাথে হাতাহাতি শুরু করে।’ পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২ মাস আগে আমি ডিজিএম হিসেবে যোগদান করেছি। আমি কোন অনিয়মে জড়িত নই। তাছাড়া গ্রাহক হয়রানীর নানা অভিযোগের ব্যাপারেও আমার জানা নেই।’

পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় পরিচালক সুগ্রীব মজুমদার দোলন জানান, স্থানীয় কিছু গ্রাহকের সাথে কর্তৃপক্ষের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে আমরা তা মিটমাট করে দিয়েছি। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার গৌতম বাড়ৈ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি একটি অনাকাঙিক্ষত দুঃখজনক ঘটনা। এটি কারো জন্য কাম্য নয়। তবে এ রকম পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় যার যার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ উত্তেজিত গ্রাহকদের ও পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই।

 

পাঠকের মতামত: