ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জেলায় নিজেদের নিয়মেই চলছে কেজি স্কুল

schoolনুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার :::

কোন রকম নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে কক্সবাজার পৌরশহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠা ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারী শিশু শিক্ষা প্রতিষ্টান বা কেজি স্কুল। শহরের অধিকাংশ কেজি স্কুলগুলো কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। শিশুদের শারিরীক কিংবা মানসিক বিকাশের প্রধান মাধ্যম খেলাধুলা করার মতো এতটুকু খালি জায়গাও তাদের নেই। চার দেয়ালের ভেতর শেণীর কাজ শেষে শিশু শেণীর শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার পর অপেক্ষমান উপরের শেণীর শিক্ষার্থীরা ঢোকে ওইসব কক্ষে। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, কোন ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে ব্যক্তিমালিকানাধীন গড়ে উঠা বেসরকারী শিশু-শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব কেজি স্কুলগুলো প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রাথমিক অধিদপ্তর এগুলোতে বিনা মূল্যে বই সরবরাহ করে। এসব প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। তবে সরকারী ছুটি কিংবা বছরে দুইটি পরীক্ষা কোনটাই মেনে চলেন না এসব প্রতিষ্টানের কর্ণধাররা। কেজি স্কুলগুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের অনেকটা সেকেলের প্রভুভক্ত কর্মচারীর মতো হয়ে থাকতে হয় বলে অভিযোগ অনেক শিক্ষকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, অনেক কেজি স্কুলের নাম স্কুল এন্ড কলেজ লিখে সাধারন মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ কেজি স্কুলের শিক্ষার মানও ভাল নয় এবং এসব প্রতিষ্টানের প্রতিষ্টাতারা নিজেরা শিক্ষক নিজেরাই প্রফেসর, অধ্যক্ষ ইত্যাদি পদ মর্যাদাও ব্যবহার করেন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে অভিভাবকরা এসব কেজি স্কুলে শিশুদের ভর্তি করান। স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, কেজি স্কুলগুলো একেকটি প্রজন্ম ধ্বংসের কারখানায় পরিনত হচ্ছে। কেননা সরকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের কোন ধরনের তদারকি না থাকায় কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্টাতা কিংবা পরিচালকের যার যেমন ইচ্ছে চালাচ্ছে এসব কেজি স্কুল। এক কেজি স্কুলের পরিচালক জানান, বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের আওতায় স্কুলগুলোর শিক্ষকদের পাঠদান তদারকি এবং প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে এসব কেজি স্কুলের শিশুদের অনেকের উচ্চতা কিংবা ওজনের চেয়ে তাদের ব্যাগ কিংবা ব্যাগভর্তি বইয়ের ওজন অনেকাংশে বেশী। এছাড়া কেজি স্কুলগুলোতে ভর্তি হতে হলে তাদের নির্দিষ্ট দোকানে ড্রেস এবং নির্দিষ্ট দোকানের তালিকার দোকান থেকে বই কিনতে হয়। শিশু শ্রেণীতে যেখানে এক বা দুইটি বই শিশুর মেধা বিকাশের জন্য যথেষ্ট সেখানে সাত থেকে নয়টি বই দিয়ে অবুজ শিশুদের ব্যাগভর্তি বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া এসব স্কুলে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেওয়ার কারণে শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন মধ্য ও নি¤œবিত্তের অভিভাবকরা। অন্যদিকে এসব স্কুলে আনন্দময় শিক্ষার পরিবর্তে শিশুরা পাচ্ছে গদ বাধা বইয়ের ভুতুড়ে পরিবেশ। সরেজমিনে দেখা যায়, কাকডাকা-পাখিডাকা কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ভোরে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছরের সাদমান আলিফ নামের এক শিশু। মায়ের কাঁধে বইয়ের ব্যাগ, পানির বোতল। শিশুটির চোখে-মুখে তখনও ঘুমের রেশ কাটেনি। শিশুটির মায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাসার কাছাকাছি স্কুল, তাই স্কুলমূখী করার জন্য ভর্তি করেছি ছেলেকে।

পাঠকের মতামত: